নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও হাটহাজারীর পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার এ জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে তার অনুসারীরা প্রিজনভ্যান আটকে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ও চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সদস্য।
গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রধান ফটকের বিপরীতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও ২৬ জন আহত হন। এর মধ্যে ৭ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও ১৯ জনকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রামের আদালতে সংঘর্ঘের ঘটনায় হতাহত ৬-৭ জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।’
এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ষষ্ঠ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত তোলা হয়। জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এ আদেশের পরপরই এজলাসের বাইরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তার অনুসারীরা। এ কারণে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পর তাকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালতে তোলার খবরে সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন তার অনুসারীরা। বেলা ১১টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাকে ঘিরে বলয় গড়ে তোলেন হিন্দু আইনজীবীরা। বেলা ১২টার দিকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশের পরপরই এজলাসের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা। তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আদালত চত্বরে আটকে রাখেন তারা। পরে তাকে প্রিজনভ্যানে তোলা হলেও কয়েকশ সমর্থক প্রিজনভ্যানটি ঘিরে রাখেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে বুঝিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলেও তারা পথ অবরোধ করে রাখেন।
এ সময় প্রিজনভ্যান ঘিরে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘জেলের তালা ভাঙব, চিন্ময় প্রভুকে আনবো’, ‘কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’- এসব স্লোগান দিতে থাকেন তারা। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এভাবে প্রায় দুই ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকা পড়ে। এক পযার্য়ে প্রিজনভ্যানের চাকা পাংচার করে দেওয়া হয়। পরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে পুলিশের একটি পিকআপে করে কারাগারের নেওয়া হয়।
এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় বিক্ষোভকারীদের। এ সময় আদালত এলাকায় মোটরসাইকেল, গাড়ি ও আদালত মসজিদ মার্কেটের নিচ তলায় আইনজীবীদের চেম্বার লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকরা। ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা রঙ্গম কনভেনশন হলের সামনে আবস্থান নেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের ইট-পাটকেলের আঘাতে কয়েক জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। ঘটনার সময় চিন্ময় সমর্থকদের হাতে রামদা, লাঠিসোটা দেখা গেছে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, আদালত এলাকায় বিক্ষোভকারীদের হামলায় এক আইনজীবী নিহত হন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশ সর্তক অবস্থানে আছে। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গত সোমবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে আদালত।