চট্টগ্রামে ৫ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমেছে

60

চট্টগ্রামে পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কমে গেছে উৎপাদন। ফলে নিয়মিত চাহিদার চেয়ে কম উৎপাদন হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে পিডিবি। তারপরেও লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতকালীন সৌরতাপ স্বল্পতার কারণে বন্ধ রয়েছে নতুন স্থাপিত টেকনাফ ২০ মেগাওয়াট সোলার পার্ক। কৃষিজ সেচের জন্য কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গ্যাসের অভাবে রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৮০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে নতুন গ্রিড স্টেশনে সংযোগ তৈরির জন্য এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ২২৫ মেগাওয়াট শিকলবাহা ডুয়েল-ফুয়েল রিসাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। এতে করে চট্টগ্রামে ১৬৮১ মেগাওয়াট সক্ষমতার ১৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন নেমেছে ৮শ মেগাওয়াটের নিচে।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গত ২৩ ডিসেম্বর ৭৬৯ মেগাওয়াট, ২২ ডিসেম্বর ৬৮২ মেগাওয়াট, ২১ ডিসেম্বর ৬১৬ মেগাওয়াট এবং ২০ ডিসেম্বর ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। তবে ওই দিনগুলোতে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২৩ ডিসেম্বর ১০০৫ মেগাওয়াট, ২২ ডিসেম্বর ১০২০ মেগাওয়াট, ২১ ডিসেম্বর ১০১৪ মেগাওয়াট এবং ২০ ডিসেম্বর ৯০২ মেগাওয়াট। এতে প্রতিদিন চাহিদার চেয়ে ১৭৮ থেকে ৩৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়। ফলে উৎপাদন পরবর্তী চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড নেওয়া হয়েছে।
তন্মধ্যে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৮০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি ইউনিটে নিয়মিত ১২০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট থেকে ৮০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে নিয়মিত। উৎপাদনে সক্ষম থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এদিকে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বলা হলেও নগরী এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। ভোর থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হয়। আবার সন্ধ্যার সময়েও নগরীর অনেক এলাকায় লোডশেডিং হয়। তবে পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণকেন্দ্রগুলোতে লোডশেডিংয়ের কোন তথ্য রাখা হয় না।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফেরদাউস আলী পূর্বদেশকে জানান, ‘কাপ্তাই জলবিদ্যুতের পাঁচটি ইউনিট রয়েছে। এগুলোতে সর্বোচ্চ ২৩০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে শীত মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে কৃষিজ কাজের জন্য সেচের প্রয়োজন হয়। তাই সেচ সুবিধার জন্য পানি ধরে রাখার লক্ষ্যে আমরা চারটি ইউনিট বন্ধ রেখে একটি চালু রেখেছি।’
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) ভূবন বিজয় দত্ত পূর্বদেশকে বলেন, ‘শিকলবাহা নতুন ২৩০ কেভি গ্রিড সাব-স্টেশন হয়েছে। ওই সাব-স্টেশনে সংযোগ তৈরির জন্য ২২৫ মেগাওয়াট শিকলবাহা ডুয়েল-ফুয়েল রিসাইকেল পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বিগত প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে আমাদের প্লান্টটি বন্ধ রয়েছে। প্লান্টটি ২-৩ জানুয়ারির মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে পারবে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রহমানের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্যাসের অভাবে একটি ইউনিট সব সময় বন্ধ থাকে। এলএনজি চালু হওয়ার পর থেকে দুইটি ইউনিটই চালু করা হয়েছিল। তবে এখন যে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে একটি ইউনিট চালু রাখা সম্ভব।’
নগরী ও জেলায় লোডশেডিংয়ের বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেনকে ফোন করা হলেও তার মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।