চট্টগ্রামে হকার ও ব্যাটারি রিকশা উচ্ছেদ অভিযান

1

নগরীর ফুটপাত ও সড়ক হকার মুক্ত করলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এর আগে গত তিনদিন ধরে তিনি মটরচালিত রিকশা উচ্ছেদ পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, নগরবাসীর জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। আমরা কোনভাবে নগরীতে মটরচালিত রিকশা চলতে দিতে পারি না। গত সপ্তাহে শুক্রবার নগরীর চকবাজার এলাকায় বৃষ্টির পানিতে আটকে উল্টে যাওয়া রিকশা থেকে খালে ছিটকে পড়ে ৬ মাসের একটি শিশু সন্তানের মৃত্যুর পর পুরো নগরজুড়ে মটর রিকশার বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠে মানুষ। সিটি কর্পোরেশন সাধারণ মানুষের অনুভুতি উপলব্ধী করে মটর রিকশা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোথাও কোথাও রিকশা চালকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষেও খবরও পাওয়া গেছে। চান্দগাঁ থানার বাহার সিগনেল এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান বাধা দিতে চাইলে মটর রিকশা চালক-মালিকরা পুলিশের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশসহ ১৫ জন আহত হন। অনেকে গ্রেফতার হন। এরপরও রিকশা উচ্ছেদের অভিযান অব্যাহত আছেন। অনেক জায়গায় রিকশার গ্যারেজ ও শো রুম ভাঙ্গা হয়। তবে অভিজ্ঞজনের দাবি রিকশা উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা লক্ষ করছি, সিটি কর্পোরেশন ও পলিশের উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যেও বিকাল থেকে রাতব্যাপী এসব রিকশা নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। হালিশহরে আরো একটি রিকশা যাত্রীসহ খালে পড়ে যাওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছায়ের হয়েছে। এ অবস্তায় এসব রিকশা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অভিযানের নামে লোকা দেখানো শান্তনা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। পাশাপাশি ফুটপাত ও সড়কে হকারদের উচ্ছেদ করে তাদের শৃঙ্খলায় আনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়র, তাও প্রশংসনীয়। গত তিনদিন ধওে চট্টগ্রাম বিপনী বিতান, স্টেশন রোড, জুবলি রোড এলাকায় অবৈধ হকারদের উচ্ছেদ করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় তিনি হকার নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা বসতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সোমবার নগরীর নিউ মার্কেট ও আশপাশের এলাকার ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘হকাররা সকালবেলা ফুটপাতে বসতে পারবে না। বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা বসতে পারবে।
এসময় তিনি বলেন, ‘ধাপে ধাপে এটা আরও গোছানো হবে। ভবিষ্যতে এটাকে ‘ইভিনিং মার্কেট’ হিসেবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কোনো জোর-জবরদস্তি করে নয়, হকারদের বোঝানোর মাধ্যমেই উচ্ছেদ কার্যক্রম সফল করা সম্ভব। মেয়র বলেন, হকার পুনর্বাসনের জন্য দুটি নির্দিষ্ট জায়গা বিবেচনায় রয়েছে। প্রথমটি হলো জহুর হকার্স মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা। শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ এবং জনসমাগমে ব্যস্ত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে নিউ মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেটসহ আশপাশের অঞ্চলগুলোকে রাখা হয়েছে। ‘এখানে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন, যার ফলে যানজট লেগেই থাকে। এর আগেও আমরা চকবাজার এলাকায় রাস্তা দখল করে বাজার বসানো দোকানদারদের পুনর্বাসন করেছি এবং এলাকা দখলমুক্ত করেছি। পরবর্তী লক্ষ্য মেডিকেল কলেজ এলাকা।’ মেয়র বলেন, ‘কোনো জোর জবরদস্তি করে নয়, হকারদের বোঝানোর মাধ্যমেই উচ্ছেদ কার্যক্রম সফল করা সম্ভব। কাউকে মারধর করে, বারবার চাপ দিয়ে কোনো কাজ স্থায়ী হয় না। সব পক্ষকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, নগরীর যানজট নিরসনে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি। আমরা মনে করি, মেয়র হকার ও মটর রিকশা উচ্ছেদের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। তবে অতীতের মত যেন এ অভিযানের পর আবারও আগের মতই সব স্বাভাবিক হয়ে না আসে সেই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। চসিকের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।