এম এ হোসাইন
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তুতি শেষ করেছে চামড়া ব্যবসায়ীরা। মহানগরের চামড়া মহানগরে এবং উপজেলার চামড়া সেখানেই সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হলেও চরম গরমের কারণে কিছু চামড়া শহরে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের টার্গেট চার থেকে সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ। মহানগরেরগুলো মহানগরে এবং উপজেলারগুলো উপজেলায় রাখতে হবে। তারপরও প্রতিবছর কিছু চামড়া শহরে প্রবেশ করে।
তিনি বলেন, এবছর প্রচন্ড গরম পড়ছে। লবণ ছাড়া চামড়া বেশিক্ষণ রাখলে নষ্ট হবে। উপজেলা পর্যায়ে যারা সংরক্ষণ করবে, তারা সেখানে করবে। যাদের লবণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই তারা শহরে নিয়ে আসতে বাধ্য হবে। প্রশাসনের কড়াকড়ি থাকলেও মানবিক কারণে অনেক চামড়া শহরে প্রবেশ করবে। না হলে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় গুরুর চামড়া প্রতিপিস (সর্বনিম্ন) ১৩৫০ টাকার নিচে কেনা হবে না এবং ঢাকার বাইরের চামড়া (সর্বনি¤œ) ১১৫০ টাকার নিচে কেনা হবে না, এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
মুসলিম উদ্দিন বলেন, দাম বাড়ালেও সেটা মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হয় না। ট্যানারি মালিকরা দাম না দিলে সেটার প্রভাব পড়ে না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, কোরবানির পশুর চামড়া পাচার ও অস্বাভাবিকভাবে কম দামে বিক্রিরোধে এবার কড়া নজরদারি থাকবে। মহানগরের প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হবে এবং নিয়োজিত থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট চামড়া সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। নগরবাসীকে নির্দিষ্ট পয়েন্টে চামড়া জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া হটলাইন নম্বর চালুর মাধ্যমে চামড়া সংরক্ষণ ও পরিবহনে সহায়তা দেওয়া হবে। চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগের বছরের বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় এবং প্রান্তিক পর্যায়ে নগদ অর্থের অভাব থাকায় অনেকে এবার সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়েছেন। ব্যাংক ঋণের সীমাবদ্ধতা ও ট্যানারি মালিকদের অনিশ্চিত আচরণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে সংরক্ষিত চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে লবণ সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এক সময় চট্টগ্রাম ছিল দেশের চামড়ার অন্যতম বড় বাজার। স্বাধীনতার পর এখানে প্রায় ৩০টির মতো ট্যানারি সক্রিয় ছিল, যা ১৯৮০-এর দশকে এসে ২২টিতে দাঁড়ায়। তখন চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছিল চামড়াভিত্তিক আড়ত ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পকেন্দ্র, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগের অভাব, পরিবেশগত বাধা, ব্যাংক ঋণে জটিলতা এবং ঢাকার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে এসব ট্যানারি একে একে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে রিফ লেদার লিমিটেড ছাড়া চট্টগ্রামে আর কোন কার্যকর ট্যানারি নেই। ফলে এক সময়ের সমৃদ্ধ চামড়া শিল্প এখন ধ্বংসপ্রায়, আড়তদাররা দিন দিন ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন, আর নতুন কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
এদিকে গতকাল ঢাকার বাইরের চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে খাসি ও বকরির চামড়ার দাম ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় গুরুর চামড়া প্রতিপিস (সর্বনি¤œ) ১৩৫০ টাকার নিচে কেনা হবে না এবং ঢাকার বাইরের চামড়া (সর্বনি¤œ) ১১৫০ টাকার নিচে কেনা হবে না।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এ বছর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দামের পাশাপাশি ছোট গরুর আয়তন হিসেবে সর্বনি¤œ দামও নির্ধারণ করে দিয়েছি। এ বছর গরুর লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ দাম ঢাকায় হবে ১৩৫০ টাকা।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি এর চেয়ে কমে চামড়া বিক্রি হবে না। সরকার চামড়ার নায্য দাম নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে ঈদের পর অন্তত ১৫ দিন পর্যন্ত কাঁচা চামড়া স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণ, হাটবাজার ব্যবস্থাপনাসহ তিন মাসের জন্য কাঁচা চামড়া এবং ওয়েট-বøæ চামড়া রপ্তানির শর্ত শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। এ ছাড়া ঢাকায় দশ দিনের আগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।