নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
চট্টগ্রামে সাংবাদিকতার সূচনা উনবিংশ শতাব্দীতে এবং সেই প্রদোষকালেই সাংবাদিকতার কয়েকজন সিংহপুরুষকে আমরা পাইÑ ‘ছোলতান’, ‘আমীর’, ‘হাবলুল মতিন’ সম্পাদক মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (তিনি লিখতেন এছলামাবাদী), ‘মোহামেডান অবজারভার’ সম্পাদক শাহ বদিউল আলম, কাশীশ্বর গুপ্ত, ‘মোহাম্মদী’ সম্পাদক মৌলভী নজির আহমদ চৌধুরী, মওলানা আলী আহমদ ওলী ইসলামাবাদী ইত্যাদি গা ছমছম করা সব নাম। অতঃপর সাংবাদিকতা নামক শুকপাখিটি পাখা ঝাপটাতে ঝাপটাতে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে এক উড়াল দিয়ে বিস্তৃত দিগন্তে উড়ে চলে যায়। মহাভারতের ভীষ্ম যেমন এক পিতামহ, তেমনি সাংবাদিকতারও একজন পিতামহ খুঁজতে গিয়ে আমি একজন কালীশংকর চক্রবতীকে পেলাম। ‘পাঞ্চজন্য’, ‘জ্যোতি’ সব পত্রিকা তাঁর হাতে জন্ম, কিন্তু সাপ্তাহিক জ্যোতি যখন দৈনিক হলো, তখন আসরে অবতীর্ণ হলেন মহিমচন্দ্র দাশ। তাঁকে সম্পাদকতার দায়িত্ব দিয়ে কালীশংকর বাবু সরে পড়লেন। অতঃপর বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকার জন্ম ঘোষিত হলো ভারতবর্ষের পূর্ব প্রান্তের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী প্রান্তীয় পার্বত্য জনপদ চট্টলভ‚মিতে। সুতরাং চট্টগ্রামই নিঃসন্দেহে দৈনিক পত্রিকার আঁতুরঘর বলা যেতে পারে। মহিমবাবুকে আমি চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার পিতৃত্বের গৌরব দিতে চাই। তিনি ছিলেন মূলত রাজনীতিবিদ, জেলা কংগ্রেসের প্রথমে সম্পাদক, পরে সভাপতি। তাঁর যমজ ভাই রায় বাহাদুর ডা. বেণীমোহন দাশ, দু’ভাই আর্বান কোঅপারেটিভ ব্যাংক নামে যে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন, সেটি আজো টিকে আছে আন্দরকিল্লায় নিজস্ব ভবনে। সেখানে সম্ভবত মহাল²ী ব্যাংকও ছিলো। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে নেতাজী সুভাষ বসু চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্মেলনে যোগদান করতে এসে ব্যাংকের একটি কক্ষে মাস্টারদা সূর্য সেন এবং চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণকারী বিপ্লবী নায়কদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।
১৯২১ থেকে ১৯৪৮-পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা অব্দি যেসব সাংবাদিক দেখা দেন চট্টগ্রামে সাংবাদিকতার দৃশ্যপটে, তাঁরা হলেন-নলিনী কান্ত সেন, ফকীর আহমদ, মাস্টার গোলাম ছোবহান, অম্বিকাচরণ দাশ, দেশপ্রিয় সম্পাদক (তাঁর নাম আমার মনে পড়ছে না), কাজী কবিরউদ্দিন, লোকমান খান শেরওয়ানী, কবি আবদুস সালাম, শবনম খানম শেরওয়ানী, কবির আহমদ ইজ্জতনগরী, মওলানা ফররোখ আহমদ নিজামপুরী, রুহুল আমিন নিজামী। দৈনিক ‘পূর্ব পাকিস্তান’, ‘পাঞ্চজন্য’, ‘দেশপ্রিয়’র অনিয়মিত প্রকাশনাকে সহযাত্রী করে পূর্ব পাকিস্তানে চট্টগ্রামের সংবাদপত্রের নবযাত্রা সূচিত হয়েছিলো।
পঞ্চাশের দশকে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাপ্তাহিক কোহিনূর প্রকাশ করলে চট্টগ্রামে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চার নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। অবশ্য সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে প্রথমে ‘প্রভাত’-এর নাম করতে হয়। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের শাখা গঠনের পর পরিষদের ত্রৈমাসিক মুখপত্র হিসেবে প্রভাত প্রকাশিত হয় কবি গুণাকর নবীন চন্দ্র দাশের সম্পাদনায়। আরো পরে কবি ওহীদুল আলম পূরবী সাহিত্য মাসিক নিয়ে সংবাদপত্র জগতে পদার্পণ করেন। চট্টগ্রামে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার বিকাশে আলম পরিবারের অনেক অবদান। পরে আমরা দেখবো আলম পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক ও সাংবাদিক মাহবুব উল আলম ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘জমানা’ নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করছেন। আলম পরিবারের তৃতীয় সন্তান নজরুলসখা কবি দিদারুল আলম ‘যুগের আলো’ নামে সাময়িকী প্রকাশ করছেন। আলম পরিবারের প্রথম সন্তান শামসুল আলম থেকে সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত। কবি ওহীদুল আলম পরিবারের কনিষ্ঠ ও চতুর্থ সন্তান; সাহিত্য, শিক্ষকতা, সাময়িকপত্র সম্পাদনা ও ইতিহাস চর্চা সমান দক্ষতায় করেছেন তিনি।
পঞ্চাশের দশকে, ভারত থেকে মোহাজের সাংবাদিকরা আসার পর সংবাদপত্রে পেশাদারিত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। বেগম মায়মুনা আলী খান, এসএম মুবিন, জাফর আহমদ জাবেদ, মাসওয়ানী প্রমুখ যাঁরা উত্তরকালে ভালো সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন, ভারত বিভাগকালে এই উর্দুভাষী মুসলমান সাংবাদিকরা অপশন দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে চলে আসেন। এসব অভিজ্ঞ সাংবাদিকের দক্ষ পরিচালনায় একে একে ইউনিটি, ইস্টার্ন এক্সামিনার, ক্রনিকল ইত্যাদি পত্রিকা প্রকাশিত হলে চট্টগ্রামের সাংবাদিকতায় প্রাণের সাড়া জাগে। তবে এটা মনে রাখা দরকার যে, ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদী প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা সাবালকত্ব অর্জন করেনি। অবশ্য তার আগে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যিক মাহবুব উল আলম দৈনিক ‘জমানা’ প্রকাশ করেন। তার আগে ফজলুল কাদের চৌধুরী, কাজি কবিরউদ্দিন ও জয়নাল আবেদীন চৌধুরীকে দিয়ে প্রকাশ করেন ‘দৈনিক আজান’। আজান ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দেও প্রকাশিত হয়েছিলো ফজলুল কাদের চৌধুরীর প্রতিদ্ব›দ্বী জেলা মুসলিম লীগ সাধারণ সম্পাদক আহমদ সাগীর চৌধুরীর অর্থায়নে। সেই সময়ের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে মোহাজের সাংবাদিকদের উদ্যোগে তিনটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশিত হলে চট্টগ্রামে ইংরেজি ভাষায় সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।চট্টগ্রামের যেসব তরুণ সেই প্রভাতে ইংরেজি মাধ্যমে সাংবাদিকতা করে পরিচিত হয়ে উঠেন, তাঁরা হলেন-হাবিবুর রহমান খান, মঈনুল আহসান সিদ্দিকী, মঈনুল আলম, নজির আহমদ এবং অনতিপরবর্তী কাজী রশিদউদ্দিন, সন্দ¦ীপের বেলাল বেগ ও খালেদ বেলালও কিছু আগে-পরে এ সময়েই সাংবাদিকতায় আসেন এবংঅবশ্যই ইংরেজিতে।
পঞ্চাশের দশকে সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেল। ব্রিটিশ আমলে সর্বাত্মক স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে সাংবাদিকতাও তার আওতামুক্ত ছিলো না। স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যম বা পরিপূরক হিসেব স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত মানুষ সাংবাদিকতাকে বেছে নিতেন। কমিউনিস্টি বিপ্লবীদের জন্য সাংবাদিকতা ছিলো একটা ছদসারভ; জাতীয়বাদী কংগ্রেস, মুসলিম লীগ নেতাকর্মীরা অংশত জীবিকা, কিছটা দলের স্বার্থে পত্রিকা টিকিয়ে রাখার জন্য সাংবাদিকতা যোগদান করতেন। পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে থেকে বেতনভোগই সাংবাদিকতা আত্মপ্রকাশ করতে থাকেন। সাংবাদিকতাকে আগে গøাসা চাদরের উপায় হিসেবে তেমন মনে করা হতো না। এখন সাংবাদিকতাকে জীবিকা বা পেশা হিসেবে নিয়ে অনেক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আসলেন। দৈনিক আজাদীর আত্মপ্রকাশে ছিলো প্রাতিষ্ঠানিকতার উদাহরণ, ফলে সাংবাদিকতা হয়ে গেল পেশা। বিশ্বেশ্বর চৌধুরী, নুরুল ইসলাম চৌধুরী (আজাদ), হাবিবুর রহমান খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, সাধন কুমার ধর, ওবায়দুল হক, জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, ডি পি ধর, বি এ আজাদ ইসলামাবাদী, এরশাদ মজুমদার, সেকান্দর হায়াত মজুমদার, শরীফ রাজা, বিমলেন্দু বড়–য়া, মঈনুল আহসান সিদ্দিকী, নুরুল ইসলাম (পূর্বদেশ), নজির আহমদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী (বাসস),চৌধুরী আবুল ফজল হাজারী, নুরুল ইসলাম (কক্সবাজার)-এই সময়ের মানুষ, সৃষ্টিও বলা যায়।
প্রাক-পঞ্চাশে মোহাজের সাংবাদিকদের দ্বারা প্রকাশিত, সম্পাদিত ও পরিচালিত সংবাদপত্র, আজান ও জমানা এবং ষাটের সূচনায় আজাদীর মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাংবাদিকতায় যে পেশাদারিত্বের সূচনা হয়েছিলো, তারই ধারায় ৭১-এর পূর্বাপর সময়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে অবলম্বন করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংবাদপত্রে যোগ দিয়েছিলেন, আজাদীতে কাজী জাফরুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইউসুফ, শীলব্রত বড়–য়া, সুকুমার বড়–য়া, মাহবুব উল আলম, তফাজ্জল আহমদ, আতাউল হাকিম, সমীর ভট্টাচার্য্য, সুখেন্দু ভট্টাচার্য্য, অরুণ দাশগুপ্ত, নাসিরুল হক, ওসমানুল হক; দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকায় মৃণাল চক্রবর্তী, শওকত হাফিজ খান রুশ্নি, হাটহাজারীর মি. সালাম বা এ রকম কোন নাম, মোহাম্মদ মুছা, প্রদীপ খাস্তগীর; গণকণ্ঠে ইমামুল ইসলাম লতিফী, পংকজ দস্তিদার; দৈনিক স্বাধীনতায় ওসমান গণি মনসুর, এ টি এম মোদাব্বের, কাজী আনোয়ারুল ইসলাম, রাণা দাশগুপ্ত, অঞ্জন কুমার সেন; দৈনিক মিছিলে আ জ ম ওমর, স্বপন মহাজন, শামসুল হক হায়দরী, তমাল চৌধুরী থেকে ক্রমান্বয়ে আরো অনেকের আগমনে চট্টগ্রামে সাংবাদিকতার এখন বিরাট মেলা বসে গেছে।
পঞ্চাশের দশকের আলোচনায় দু’জন সিনিয়র সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করিনি। তাঁরা হচ্ছেন-ফজলুর রহমান চট্টগ্রামের মানুষ নন, তবে তিনি ইংরেজির বড় মাপের সাংবাদিক ছিলেন। রয়টার্স, বিবিসি, অবজারভার পত্রিকাকে প্রতিলিখিত্ব করতেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবেরও উদ্যোক্তা তিনি। নুরুল ইসলাম সাহেব এপিপির সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি ছিলেন, তিনি পরে পিপলস ভিউ নামে একটি ইংরেজি দৈনিক প্রকাশ করেছিলেন।
ফতেয়াবাদের আলম পরিবার থেকে সাহিতিক, সাংবাদিক, ঐতিহাসিক মাহবুব উল আলম, দিদারুল আলম, তাঁর ভাই ওহীদুল আলম, চাচাতো ভাই আবদুস ছালাম ও আবদুল কুদ্দুছ প্রভৃতি সাংবাদিকরা বেরিয়ে আসেন এবং এই ধারা থেকে মাহবুব উল আলমের পুত্র সায়ফুল আলম ও মঈনুল আলম সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ করে ব্যাপক সাফল্য ও কৃতিত্ব অর্জন করেন।
হাবিবুর রহমান খান একনাগাড়ে ইংরেজিতে সাংবাদিকতা করেননি; ইংরেজিতে (ইস্টার্ন এক্সামিনার, ডেইলি লাইফ)করতে করতে কখনো বাংলার (আজান, নয়া বাংলা, দৈনিক সেবক)অন্দরে কখনো বা সদরে ঢুকে পড়েছেন। মঈনুল আলম সাহেব ইত্তেফাকের ব্যুরো চিফ হওয়ার পর ইংরেজি চর্চার সুযোগ আর তাঁর ছিলো না, তবে চট্টগ্রাম হতে হেড অফিসে টেলিগ্রাম, ফোনোগ্রামে ইংরেজিতে সংবাদ পাঠাতে হতো। ইংরেজির এই চর্চাটুকু ছাড়াও তিনি কনজিউমার ইকনমিস্ট নামে যে পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন, সেইটিই ছিলো তাঁর ইংরেজি চর্চার প্রকৃত বাহন। নজির আহমদ সাহেব কিন্তু সেই যে ইংরেজির সাথে ঘর বেঁধেছিলেন, আর কখনো বাংলার জমিনে পা রাখেননি। তবে তিনি বাংলায় লিখতেন ভালো। বাংলা চর্চার প্রমাণ স্বরূপ যে কটি গ্রন্থ তাঁর কাছ থেকে আমরা উপহার স্বরূপ পেয়েছি, সেগুলি পড়ে আমরা এমন ধারণায় উপনীত হতে বাধ্য হই যে, বরাবর বাংলায় লিখলে তিনি আরো অনেক বই উপহার দিতে পারতেন। হতাশায় মন ছেয়ে যায় একথা ভেবে যে, তাঁর প্রতিভার প্রতি সুবিচার না করায় তাঁর হাত থেকে আরো অনেক অমূল্য গ্রন্থরাজি পাওয়া থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। তাঁর প্রায় সমসাময়িক চান্দগাঁওর নুরুল ইসলাম চৌধুরী কখন সাংবাদিকতায় আসেন আমি জানি না এবং তিনি কখন কোন পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা আরম্ভ করেন, তাও আমি জানতে পারিনি। তবে তাঁকে ইংরেজি সাংবাদিকতায় দেখেছি এবং চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যুরোতে কিছুদিন ব্যুরো প্রধান হিসেবেও দেখেছি।
নজির আহমদের ব্যক্তি জীবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কিছু তথ্য চয়ন করছি। তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার পানখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলী মিয়া।
স্থানীয় কাকারা উচ্চ বিদ্যালয়ে তার পড়াশোনায়হাতেখড়ি। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করার আগে তাঁর পিতা মারা যান। এরপর মায়ের উৎসাহে তাঁর লেখাপড়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। তবে তাঁর জীবন একরৈখিক ছিলো না, তাতে অনেক বাঁকবদল, বৈচিত্র্য ও বর্ণময় উদ্ভাস ছিলো। যেমন স্কুলের গÐি পার হবার আগেই তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকার কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে তাঁরা মোট ১০০ জন ক্যাডেট ছিলেন। কমিশন পাওয়ার সময় হলে তিনি লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন। কারণ সে চাকরিতে তিনি স্বস্তিতে ছিলেন না। সে সময় দেশে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবেিত ছাত্র আন্দোলন হচ্ছিলো এবং ক্যান্টনমেন্টেও তার প্রভাব পড়েছিলো। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রæয়ারির একদিন আগে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টের একটি ঘটনায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতি তাঁর মন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বাংলার রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির আন্দোলন দমাতে অবাঙালি সামরিক কর্মকর্তারা বাঙালি পুলিশ ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের জবাই করে, গুলি করে হত্যা করে। এর একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয় কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে। এই পাশবিকতার প্রতিবাদ করার জন্য নজির আহমদ অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার মধ্যে অবস্থান করে কিছুই করা সম্ভব ছিলো না। একপর্যায়ে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসেন এবং আর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাননি। তিনি আবার লেখাপড়া শুরু করেন। এমনি আর একটি ঘটনা; সংবাদপত্রে তিন-চার বছর কাজ করার পর তিনি তখনকার টিআইএ এবং পুলিশ বিভাগে ইন্টারভিউ দিয়ে দু’দিকেই চাকরি পান। পুলিশের এসআই না হয়ে তিনি টিআইএ-তে যোগ দেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সাংবাদিকতার টানে ফিরে আসেন।
তিনি ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে আমিরাবাদ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে সাতকানিয়া কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালেডেইলি ইস্টার্ন এক্সামিনার, ইউনিটি ও বাংলাদেশ অবজারভারে তাঁর কয়েকটি চিঠি প্রকাশিত হলে নজির আহমদ সাংবাদিকতায় উৎসাহিত হয়ে পড়েন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘ইয়াং পাকিস্তান’ পাক্ষিক পত্রিকায়Ñ ‘দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট স্যু’ হেডলাইনে তাঁর একটি ইংরেজি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছিল। এভাবে তার লেখালেখি সাংবাদিকতায় যোগদানে উৎসাহ জোগায়।
পরবর্তীকালে দ্য ইউনিটি ও পিপল্স ভিউতে চিফ সাব এডিটর ও চিফ রিপোর্টার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর হিসেবে কাজ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে জাতীয় সংবাদ সংস্থায় (বাসস) যোগদান করেন তিনি। দীর্ঘ ২৯ বছর চাকরি শেষে ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রæয়ারি মাসে অবসর গ্রহণ করেন। বাসস, চট্টগ্রাম ব্যুরোতে দীর্ঘ ২৫ বছর ব্যুরো প্রধান ছিলেন তিনি।
এ সময়ে তিনি রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, জার্মানি, হাঙ্গেরি, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিশ্বের এক ডজন দেশ সফর করেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে আই ও জে, বৃত্তি নিয়ে হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ট্রেনিং কেন্দ্র থেকে তিনি। সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে নজির আহমদ গ্রামে চলে যান এবং কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি, ডেইলি পিপলস ভিউতে সংবাদ পাঠাতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে চকরিয়া থানার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনেও তিনি জড়িত ছিলেন। ১৯৬৫-১৯৬৬, ১৯৬৬-১৯৬৭ এবং ১৯৭১-১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনবার তিনি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সহ-সভাপতি। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিএফইউজে’র প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমাবধি ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
সাংবাদিকদের জন্য ১৬ একর খাস জমির বরাদ্দ পাওয়া এবং ১২০টি প্লট সাংবাদিকদের হস্তান্তরে তার অবদান অপরিসীম। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট নে-উইন, ইরানের প্রেসিডেন্ট রাফসানজানিসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তির ইন্টারভিউ গ্রহণ করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চা করতেন। তাঁর ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে ১১টির নাম জানা গেছে। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখাতেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তিনি ছ’টি উপন্যাস রচনা করেছেন। তাঁর উপন্যাসের কাহিনীগুলো কোন না কোন বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত এবং সে ঘটনাগুলো তার সাংবাদিকতা পেশার দায়িত্ব পালনের সময় ঘটেছে বলে তিনি জানান।
প্রকাশিত বইসমূহ : ১) স্মরণিকা-৮১ জীবনী, ২) সৃষ্টিকর্তা মানব ও ধর্ম-ধর্মীয়, ৩) সওদাগর কন্যা- উপন্যাস, ৪) রক্তাক্ত লাশ- ছোটগল্প, ৫) অনুপম ভালোবাসা- উপন্যাস, ৬) ঝধপৎবফ ঠবৎংবং- ধর্মীয়, ৭) খড়াব ্ ঋৎববফড়স, ৮) ঋধষষ ড়ভ রৎড়হ পঁৎঃধরহ, ৯) যত সব মজার স্বপ্ন, ১০) স্মরণী- জীবনী, ১১) যত আলো ছিল এবং ১২) ভাটির দেশের কন্যা।
হাবিবুর রহমান খান এবং নজির আহমদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ও আন্তরিক সম্পর্কের প্রত্যক্ষদর্শী আমি। যদিও নজির আহমদ বয়সে প্রায় দশ বছরের ছোট ছিলেন। হাবিবুর রহমান খান শেষ জীবনে ‘সেবক’ নামে একটি দৈনিক প্রকাশ করেছিলেন। প্রথমে সান্ধ্য পরে প্রভাতী দৈনিক। সান্ধ্য দৈনিক অবস্থায় ক’টি পাথরঘাটা ইকবাল রোডের ‘ক্রান্তি প্রিন্টার্স’ থেকে প্রকাশিত হতো। হাবিবুর রহমান খান আমার আত্মীয় ছিলেন। আমি মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর অর্ধশতাব্দির দীর্ঘ ঝঞ্ঝাপূর্ণ রাজনীতি ও যন্ত্রণাবিদ্ধ কারাবাস জীবন আতিবাহিত করে তাঁর কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম সাংবাদিকতা শিখতে। তখনকার দিনের ভালো সাংবাদিকরা, হাবিবুর রহমান খানকে সম্মান করতেন। পত্রিকা ছোট হলেও প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় বড় বড় সাংবাদিকরা সবাই সেবক অফিসে আড্ডা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে গল্প-গুজব করতে যেতেন। তন্মধ্যে এখন যাঁদের কথা আমার মনে পড়ে, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই একজন নজির আহমদ ছিলেন। আরো যাঁরা আড্ডায় শরিক হতেন, তাঁরা হলেনÑশরীফ রাজা, নোমান সাহেব, খালেদ বেলাল, মোফাজ্জল সাহেব, কাজী জাফরুল ইসলাম, কদাচিৎ অরুণ দাশগুপ্ত। নোমান সাহেব বন্দরে চাকরি করতেন, কিন্তু সাংবাদিকতায় ছিলেন অতীব দক্ষ। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে আবদুল্লাহ আল ছগীরের সম্পাদনায় চট্টগ্রামে প্রথম কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৈনিক নয়া বাংলা প্রকাশিত হলে হাবিবুর রহমান খান তাতে নির্বাহী সম্পাদক এবং নোমান সাহেব বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। মোফাজ্জল সাহেব ছিলেন তখন জেলা তথ্য কর্মকর্তা, পুরোনো দিনের সাংবাদিক দু’একজন যাঁরা এখন বেঁচে আছেন, মোফাজ্জল সাহেবের কথা তাঁদের মনে থাকতে পারে। তাঁর কাজ ছিলো ঘুরে ঘুরে সংবাদপত্র অফিস পরিদর্শন করা। সব সংবাদপত্র নয়, যেখানে হাবিবুর রহমান খান, অধ্যাপক খালেদ, নুরুল ইসলাম (পিপলস ভিউ), মঈনুল আলম, সায়ফুল আলম (দৈনিক বাংলা), সৈয়দ মুর্তজা আলী যেখানে কাজ করতেন, সেই সংবাদ সংস্থা যথাক্রমে বাসস ও এনা এবং খালেদ বেলালের আইএসপিআর-এ তিনি যেতেন। সাংবাদিকরাও কোর্ট বিল্ডিং-এ তার দপ্তরে হাজিরা হয়ে যেতেন সময় অসময়ে। খালেদ বেলাল সাহেব ছিলেন আইএসপিআর-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা। তখন হাবিবুর রহমান খান সাহেব এবং নজির সাহেবকে গল্প করতে শুনেছি যে, ঢাকার কোনো ইংরেজি বিনোদন সাময়িকীর জন্য তাঁরা শেফালী ঘোষের ইন্টারভিউ করেছিলেন। হাবিবুর রহমান খান সাহেব মাঝে মধ্যে রিপোর্টিং-এর কাজও করেছেন।
এমনি একবার সোহরাওয়ার্দী সাহেব চট্টগ্রাম সফরে আসলে হাবিবুর রহমান খান ও নজির আহমদ তাঁর ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য আসকারদিঘির পাড়ে ইস্পাহানির বাংলোয় যান। বিভাগ-পূর্বকালে কলকাতায় অবস্থানের সময় থেকে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সঙ্গে ইস্পাহানির সম্পর্ক। সোহরাওয়ার্দী সাহেব তখন যুক্তবঙ্গের প্রধানমন্ত্রী। শেরে বাংলার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় সোহরাওয়ার্দী ছিলেন সরবরাহ মন্ত্রী। সে সময় ইস্পাহানি এবং টাঙ্গাইলের আর পি সাহা ছিলেন তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী। পাকিস্তান হওয়ার পর ইস্পাহানি অপশন দিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসেন এবং পরে আসকারদিঘির পাড়ে উক্ত পাহাড়ে বসবাস করতে থাকেন। পাকিস্তান আমলের প্রথমদিকে সোহরাওয়ার্দী সাহেব চট্টগ্রাম আসলে ইস্পাহানির বাংলোয় উঠতেন। তো ইস্পাহানির বাসভবনে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ইন্টারভিউর এক পর্যায়ে দুই রিপোর্টার (হাবিবুর রহমান খান ও নজির আহমদ)-এর নোট বইয়ের দিকে চোখ যায় সোহরাওয়ার্দী সাহেবের। তাঁরা কি লিখেছেন তা’ দেখছিলেন তিনি। এ সময় তিনি নোট বইয়ের একটি জায়গায় অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, এখানে চৎবঢ়ড়ংরঃরড়হ বসাতে হবে। তাঁরাও দেখলেন তাঁর কথা ঠিক, তাঁরা ভুল করেছেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের পরিচয় পেয়ে দু’জনই চমৎকৃত।
সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ইংরেজি ভাষার ওপর দখল নিয়ে অবিভক্ত ভারতেও সুনাম ছিলো এবং মনে করা হতো জওহরলাল নেহেরুর পরে তিনিই ভালো ইংরেজি গদ্য লেখেন। এমনি নানা বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা তাঁরা প্রায়ই করতেন। তবে আড্ডার ফাঁকে তাঁরা জ্ঞানচর্চাই করতেন। দু’জনই ছিলেন মেধাবী সাংবাদিক, তাঁদের জ্ঞানস্পৃহা ছিলো অদম্য, অসাধারণ। তাঁদের আলোচনা শুনে অনেক কিছু শেখাও যেত।
তাঁদের আর একটা কমন আড্ডার স্থান ছিলো। সেটি হলো আন্দরকিল্লা কোহিনূর লাইব্রেরি। এখন যেখানে চৌরঙ্গী রেস্টুরেন্ট, তার পাশে, মনে মালঞ্চের জায়গায় গণি এন্ড গণি কোং নামে ইউসুফ গণি চৌধুরী সাহেবের একটি অফিস ছিলো। বোধ হয় সেখানেই কোহিনূর লাইব্রেরি স্থানান্তরিত হয়, অথবা চৌরঙ্গী এবং মালঞ্চ-এর মধ্যবর্তী স্থানে। কোহিনূর লাইব্রেরিতে চট্টগ্রামের তাবৎ পুরোনো রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, অবসরপ্রাপ্ত পেশাজীবীদের সকাল বিকাল আড্ডা জমতো। কোহিনূর লাইব্রেরি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেদ সাহেবের প্রতিষ্ঠান। মনে হয় আলতাফ সাহেব নামে কোন প্রাচীন লোক লাইব্রেরিটি দেখাশোনা করতেন। হাবিবুর রহমান সাহেব সময় পেলেই সেখানে ছুটে যেতেন। সম্ভবত ৬০-৬২ খ্রিস্টাব্দে আজাদীতে কাজের সূত্রে তিনি লাইব্রেরির এবং ম্যানেজারের সঙ্গে তাঁর হার্দ্যকি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নজির সাহেবও যেতেন। আরো অনেকেই, যেমন গোরা আজিজ (আজিজুর রহমান-বিভাগ-পূর্বকালে চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম লীগ, বিভাগ-উত্তর কালেচট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী মুসলিম লীগ, পরে এনডিএফ, পিডিপি’র নেতা এবং ষাটের দশকে এমপি), হয়তো আনোয়ার মিয়া (নুরুল আনোয়ার চৌধুরী-এককালে চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন), আজিম সাহেব (এম এ আজিম-পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), লন্ডন শমসু (ডা. শামসুল আলম চৌধুরী-আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা), আলতাফ গান্ধী (মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর ঘনিষ্ঠ সহচর), অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমদ খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, কবি আলাদীন আলীনূর, সাধন কুমার ধর, ডা. কাজী মোহাম্মদ ইউসুফ, গোলাম মোস্তফা কাঞ্চন, ওবায়দুল হক, শরীফ রাজা, সমাজসেবী ব্রজেন্দ্রলাল বর্দ্ধন, মনীন্দ্রলাল সরকার।
হাবিবুর রহমান খান, নজির আহমদের আড্ডা ছাড়াও ছিলো বই পড়ার নেশা। দু’জনই তো জ্ঞান মার্গের পথিক। তো কোহিনূর লাইব্রেরির সামনে বারান্দায় এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার সাজানো থাকতো। মালেক সাহেব কিছুদিন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ইস্টার্ন মোটর্সের শফিউর রহমানের সঙ্গে নবারুণ মোটর্স নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অংশিদার হয়েছিলেন। সেই প্রতিষ্ঠানেরই এলপি গ্যাসের ব্যবসা ছিলো। নজির আহমদের সহধর্মিনী নাম বেগম রাহেলা নজির। তাঁদের তিন ছেলে, তিন মেয়েÑ১) নিগার সুলতানা চৌধুরী (শিমূল), ২) আলীম আল শরীফ (আজাদ), ৩) শামীম আল শরীফ ( শামীম), ৪) জাহেদ আল শরীফ (রাসেল), ৫) জিগার সাফিনা সিদ্দিকী ( জিনি) এবং ৬) নিগাথ হাবীবা ( ডালিয়া)।সবাই বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্থায়ীভাবে বসবাসকারী।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক