চট্টগ্রামে সমাবেশ নিষিদ্ধ

121

স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়েছে। সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় এখন থেকে ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে ১০০ জনের অধিক অতিথির সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান চলাকালে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি ও কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষজনকে হুঁশিয়ার করলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
এ বিষয়ে কমিউনিটি সেন্টার ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রকাশ্য স্থানে সভা-সমাবেশ ওরশ, মিলাদ মাহফিল, মহোৎসব ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ থাকবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। এ নির্দেশ অমান্য করলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল রোববার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
করোনা পরিস্থিতিতে মাস্ক পরিধানসহ শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সমুদ্র সৈকত, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র ও অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে জেলার প্রশাসনের মেবাইল কোর্ট অভিযানের পাশাপাশি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। যেসব সরকারি কর্মকর্তার অফিস নেই কিংবা জরাজীর্ণ অফিস রয়েছে তাদের কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য একই বিল্ডিংয়ে অফিস করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান ডিসি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়ার সঞ্চালনায় সমন্বয় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী সাব্বির ইকবাল, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. মশিউদ্দৌলা রেজা, জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট বিকাশ চন্দ্র দাস, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দ, উপজেলা চেয়ারম্যান এ.কে.এম এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল (রাউজান), হোসাইন মো. আবু তৈয়ব (ফটিকছড়ি), স্বজন কুমার তালুকদার (রাঙ্গুনিয়া), এম এ মোতালেব (সাতকানিয়া), মো. রাশেদুল আলম চৌধুরী (হাটহাজারী), গালিব চৌধুরী (বাঁশখালী), ফারুক চৌধুরী (কর্ণফুলী), মো. জসীম উদ্দিন (মিরসরাই), উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় (সীতাকুন্ড), মোহাম্মদ রুহুল আমীন (হাটহাজারী), মোমেনা আক্তার (বাঁশখালী), শাহিনা সুলতানা (কর্ণফুলী), মাসুদুর রহমান (রাঙ্গুনিয়া), মিনহাজুর রহমান (মিরসরাই), সাহেদুল আরেফিন (ফটিকছড়ি), জোনায়েদ কবির সোহাগ (রাউজান), নাজমুন নাহার (বোয়ালখালী), ফয়সাল আহমেদ (পটিয়া), জোবায়ের হোসেন (আনোয়ারা), ইমতিয়াজ হোসেন (চন্দনাইশ), আহসান হাবিব জিতু (লোহাগাড়া), মো. আবদুস সালাম চৌধুরী (সাতকানিয়া), সাতকানিয়া পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের প্রমুখ।
এদিকে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই মাঠে নেমেছে পুলিশ। চট্টগ্রামজুড়ে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে সিএমপি। শুধু একটি থানা এলাকার একশ স্পটেই এক লাখ মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। জনগণকে মাস্ক পড়তে উদ্বুদ্ধকরণে বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আওতায় এই কর্মসূচি পালন করেছে সিএমপির ডবলমুরিং থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘মাস্ক করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে সহজ সমাধান। মানুষ এবং করোনার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই মাস্ক। তাই মাস্ক পরিধানে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা ১০০টি স্পটে এক লাখ মাস্ক বিলি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। জনগণকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধকরণে বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আওতায় রবিবার সকালে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। এসময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ পশ্চিম জোনের উপ কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ, ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন উপস্থিত ছিলেন। এরপর অফিসার এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে গঠিত টিমগুলো ১০০ স্পটে গিয়ে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ শুরু করে। উপ কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ ১০টি স্পটে গিয়ে মাস্ক বিতরণ করেন। তিনি বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে মাস্কের বিকল্প নেই। মাস্ক পরতেই হবে। তাই জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের এই কর্মসূচি। এ ব্যাপারে আমরা জনগণেরও সহযোগিতা চাই।’ এসময় স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে মাস্ক পরিধানে সচেতনতামূলক বিভিন্ন ¯েøাগান সম্বলিত বর্ণিল প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছিল। মাস্ক পরিধানে সচেতনতামূলক এই কর্মসূচি মাসব্যাপী চলবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া সিএমপির অন্য থানাগুলোতেও এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
মাস্ক পরাতে মাঠে সিএমপি : ‘মাস্ক পরার অভ্যেস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’- এ স্লোগানকে ধারণ করে চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে জনগণকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধকারণে মাঠে নেমেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
গতকাল রবিবার নগরের সিআরবিতে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মুহাম্মদ তানভীর।
এসময় সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাবে পুলিশ। মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার মতো ছোট বিষয়গুলো মেনে নিতে পারলে করোনা মোকাবিলা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই মিলে যদি আমরা নিরাপদ হই, তবেই বাংলাদেশ নিরাপদ হবে। নগরের প্রতিটি ইউনিটের পুলিশ মাস্ক পরার প্রচারণা চালাবে। যাদের মাস্ক নেই, তাদের মাস্ক দেওয়া হবে।’ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার কথাও জানান তিনি।
এদিকে জনগণকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার নগরের নতুন ব্রিজ মোড়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও মাস্ক বিতরণ করে ট্রাফিক বিভাগও। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক,দক্ষিণ) এন এম নাছিরুদ্দীন, টি আই (বাকলিয়া) সামছুদ্দিন। পরে ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে দুটি মিনি ট্রাকে করে নগরের জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালানো হয়।
উল্লেখ্য, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১১১ জন। ৯১০টি নমুনা পরীক্ষায় তাদের করোনা ধরা পড়ে। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৪১ জন।