আসহাব আরমান
সাম্প্রতিক অতিবষ্টি ও বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে উত্তর চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও সীতাকুন্ড উপজেলার অসংখ্য পুকুর, দীঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। একইভাবে টানা ভারীবৃষ্টির কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালীতেও পুকুর, দীঘি, হ্যাচারি ও ঘেরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এতে ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির ১৬ হাজার ৮৬৪টি মাছ চাষের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ২৯০ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, অতিবৃষ্টি-বন্যায় চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৬৪টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় পুকুর থেকে ১৬ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া এসব মাছের মূল্য প্রায় ২৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এছাড়া ১৪ লাখ বিভিন্ন মাছের পোনা এবং ২ লাখ চিংড়ি পোনা ভেসে গেছে। এসব পোনার আর্থিক মূল্য ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২৯০ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চট্টগ্রামে ক্ষতির পরিমাণ বেশি মিরসরাই উপজেলায়।এ উপজেলায় ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মিরসরাইয়ের পর বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের পুকুর, দীঘি ও মৎস্য প্রজেক্ট বানের পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা। একই অবস্থা হয়েছে হাটহাজারী উপজেলায়ও। এ উপজেলায় বানের পানিতে ভেসে গেছে ১২ কোটি টাকার মাছ। এছাড়া রাউজান, সীতাকুন্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য চাষের পুকুর, দীঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ পূর্বদেশকে বলেন, বাংলাদেশে যেসব জেলায় মৎস চাষ হয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চট্টগ্রাম। তাই বন্যায় মৎস্য খাতে এই জেলায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ২৯০ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বন্যার জেলার ১৬ হাজারের বেশি পুকুর সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী এসব পুকুরের আয়তন ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এছাড়া ১৪ লাখ বিভিন্ন মাছের পোনা এবং ২ লাখ চিংড়ি মাছের পোনা ভেসে গেছে। অনেক পুকুরর ও হ্যাচারি অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যায় মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট (সেচ প্রকল্প) ভেসে গেছে। চট্টগ্রামে অর্ধেকের বেশি মাছের চাহিদা এ প্রজেক্ট থেকে পূরণ করা হয়। এ প্রজেক্টের জলাশয়ের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্র হালদা নদীর বড় আকারের রুইজাতীয় মাছ বিভিন্ন জলাশয় ছড়িয়ে পড়েছে।