আসহাব আরমান
চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে বাড়ছে খাদ্য ঘাটতি। গত ৮ বছরে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে আবাদি জমির পরিমাণ, বেড়েছে খাদ্য উৎপাদন। তবে বর্ধিত জনসংখ্যার খাবারের চাহিদার কাছে এ উৎপাদন অপ্রতুল। প্রতিজনের জন্য দৈনিক ৪৪২ গ্রাম হিসেবে খাদ্য ধরে ২০২৩-২৪ মৌসুমে খাদ্যের চাহিদা ছিল ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৮৫২ টন। নীট খাদ্য উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৫৪ টন। ফলে চট্টগ্রামে এ বছর খাদ্য ঘাটতি ৭ লাখ ৪১ হাজার ৬৯৮ টন। এ ঘাটতি মেটাতে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে খাদ্য আমদানির উপর ভরসা করতে হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উৎপাদন বাড়লেও খাদ্য ঘাটতির তুলনায় তা অপ্রতুল। তাই দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আমদানি ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি স¤প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ সালে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় খাদ্য ঘাটতি ছিল ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬১৯ টন। এ সময় চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ছিল ৮১ লাখ ৭ হাজার ৬৯০ জন। এ জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের চাহিদা ছিল ১২ লাখ ১৬ হাজার ৩৭০ এই। ওই বছর ৩ মৌসুমে নীট খাদ্য উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫২ টন। উৎপাদনকৃত খাদ্যের পুরোটাই ছিল চাল।
সর্বশেষ ২০২৩-২৪ মৌসুমে চট্টগ্রামের খাদ্য ঘাটতি বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৬৯৮ টন। অথ্যাৎ গত ৮ বছরের চট্টগ্রামে নীট খাদ্য বেড়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৭৯ টন। এ সময়ে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৬৬ জন। জেলায় খাদ্য চাহিদা বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৮ টন। এক সাথে জেলার নীট খাদ্য উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৫৪ টন।
খাদ্য শস্য হিসেবে চালের পাশাপাশি উৎপাদিত হচ্ছে গম ও ভুট্টা। তবে আবাদ ও উৎপাদনের পাশাপাশি বেড়েছে খাদ্য ঘাটতি।
সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মৌসুমে চট্টগ্রামে ফলন ভালো হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় আমন মৌসুমে ৫ লাখ ১৩ হাজার ১৩ টন চাল উৎপাদিত হয়। এছাড়া ২০২০-২১ মৌসুমে জেলা রেকর্ড ৫ লাখ ১৬ হাজার টন। উৎপাদিত খাদ্যের মধ্যে বেশির ভাগই চাল। পাশাপাশি সামান্য পরিমাণ গম ও ভুট্টা হয়।
কৃষিবিদদের মতে, প্রতিবছর জনসংখ্যা অনুপাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে না। তাই খাদ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. ওমর ফারুক পূর্বদেশকে বলেন, প্রতিবছর যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সে হারে উৎপাদন বাড়ছে না। প্রধান বিষয় হলো, খাদ্য হিসেবে মূলত ধান, গমকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মহানগরীতে বেশিরভাগ চাকরি, ব্যবসা পড়াশুনার সূত্রে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার মানুষ বাস করেন। ফলে অধিক জনসংখ্যার চাপও আছে। অপরদিকে অন্যান্য ফসল যেমন ফুলচাষ, মসলা, তেলজাতীয়, গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সবজির আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে। তবে আধুনিক চাষাবাদে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও খাদ্য ঘাটতি বাড়ছে।
চট্টগ্রামে প্রতি বছর কয়েক লাখ টন খাদ্য ঘাটতি থাকে। বর্ধিত চাহিদা মেটাতে অন্যান্য জেলা থেকে চাল আনতে হয়। চাল এনে বিশেষ করে নগরবাসীর ঘাটতি মেটাতে হয়।