চট্টগ্রামে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সরিষা চাষ

4

শহীদুল ইসলাম বাবর, সাতকানিয়া

ভোজ্যতেলের আমদানি কমিয়ে আনতে কৃষি বিভাগ সারা দেশে সরিষা আবাদের উপর জোর দিয়েছে বেশ কয়েক বছর থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর বাড়ছে সরিষা চাষ। চট্টগ্রামে চলতি বছর গত বছরের তুলনায় সরিষা চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। কৃষকরা বলছেন, সরিষা চাষে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ। এ কারণে জেলায় সরিষা চাষ বেড়েছে। ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা আবাদে জোর দিয়েছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, দুই বছর আগেও চট্টগ্রামে এক হাজার হেক্টরের কম জমিতে সরিষা চাষ হতো। এবার তা অনেক বেড়ে গেছে।
জানা যায়, চলতি বছরে মিরসরাইয়ে ৭২০ হেক্টর, সীতাকুন্ডে ৩১৭ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩৯৭ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৪৬০ হেক্টর, রাউজানে ৮৬৪ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৩৬৪ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ১৬১ হেক্টর, পটিয়ায় ১৫০ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ২১ হেক্টর, চন্দনাইশে ১৯২ হেক্টর, আনোয়ারায় ২১০ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ২১২ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ২৯৮ হেক্টর, বাঁশখালীতে ১০৯ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ১১৫ হেক্টর মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এর আগের বছর মিরসরাইয়ে ৮০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষাবাদ হয় ৩২০ হেক্টর। এছাড়া সীতাকুন্ডে ১৭০ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ২৫২ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৪৪২ হেক্টর, রাউজানে ৩৭৫ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ২২০ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৫০ হেক্টর, পটিয়ায় ৭২ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ১০ হেক্টর, আনোয়ারায় ৯২ হেক্টর, চন্দনাইশে ৫২ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ৯২ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ১০৮ হেক্টর, বাঁশখালীতে ২৫ হেক্টর, সন্দ্বীপে ৬০ হেক্টর মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। যাহা এবারের তুলনায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর বেশি।
সম্প্রতি সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের বুডির দোকান এলাকায় সরিষা ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, যেন হলুদের আবরণ। মাঠজুড়ে হলুদ আবরণের ফলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া এলাকায় গিয়েও একই দৃশ্যের দেখা মেলে।
পদুয়ায় দায়িত্বরত উপ-সহকারী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, গত দুই বছরের তুলনায় এবারে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকদের বীজ ও পরামর্শ দিয়ে আমরা সহযোগিতা করেছি।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ২০২১ সালে ২০ হেক্টর, ২০২২ সালে ৭০ হেক্টর, ২০২৩ সালে ১০৮ হেক্টর ও সর্বশেষ চলতি বছর ২৯৮ হেক্টর সরিষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি ভাল ফলন হবে। ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, তিন মাসের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। এবার বিনামূল্যে সরিষার বীজ পেয়েছি। প্রায় ৮০ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। ফলন ভালো পাওয়ার আশা করছি। ৮০ শতকে চাষাবাদে প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রতি কেজি সরিষা ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। সেইসঙ্গে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে পারবো।
চট্টগ্রাম কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুচ ছোবহান বলেন, চট্টগ্রামে সরিষার একাধিক জাত চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭ ও বিনা সরিষা-৯ জাতের চাষাবাদ বেশি হয়েছে। হেক্টরপ্রতি এক দশমিক দুই টন ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাউজানের চিকদাইর, নোয়াজিষপুর, ডাবুয়া, হলদিয়া, রাউজান সদর, উরকিরচর, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, বিনাজুরী, কদলপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে বলে জানান তিনি।