চট্টগ্রামে গতিসীমা মানে না এক-তৃতীয়াংশ যানবাহন

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোড ক্রাশের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ঝুঁকি যানবাহনের অতিরিক্ত গতি। সা¤প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে চলাচলকারী যানবাহনের ৩৪ শতাংশই নির্ধারিত গতিসীমা মানছে না, যা নগরীতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচআই-আইআরইউ) এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এলাকায় সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল বুধবার চসিক কনফারেন্স রুমে সিআইপিআরবি’র সহায়তায় চসিক এবং জেএইচআই-আইআরইউ যৌথভাবে ‘সড়ক দুর্ঘটনার আচরণগত ঝুঁকি বিষয়ক পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা ফলাফল প্রকাশ’ সভা আয়োজন করে। সভায় অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৪ সালের রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি’র ফলাফল তুলে ধরা হয়।
বøæমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি’র (বিআইজিআরএস) অংশ হিসেবে জেএইচআই-আইআরইউ এবং সিআইপিআরবি ২০২২ সালের মে থেকে চসিক এলাকায় রোডসাইড অবজারভেশন স্টাডি পরিচালনা করছে। এবার ৬ষ্ঠ পর্বের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
সিআইপিআরবির আরটিআই প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকির হার নিরূপণ করতে নগরীর ১৫টি স্থানে অক্টোবর ও নভেম্বর ২০২৪ এ মোট ৮৪ হাজার ৪৫৪টি যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। সপ্তাহের (কার্যদিবস ও ছুটির দিনসহ) একই স্থানে টানা তিন দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। এতে দেখা যায়, ৩৪ শতাংশ যানবাহনই নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করেছে। যেহেতু চট্টগ্রাম শহরের সকল রাস্তায় নির্দিষ্ট গতিসীমা নির্ধারণ করা সাইন নেই, তাই আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে নির্ধারিত গতিসীমার ক্ষেত্রে মহাসড়কে ৫০ কিমি/ঘণ্টা এবং শহর এলাকার সড়কে ৩০ কিমি/ঘণ্টাকে সর্বোচ্চ গতিসীমা হিসেবে বিবেচনা করে গবেষণালব্দ তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে (যা বিশ্বব্যাপী বেস্ট প্র্যাকটিস অনুযায়ী বিবেচিত)। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এসইউভি (যা জিপগাড়ি হিসেবে পরিচিত) গাড়িগুলোর প্রায় অর্ধেকই (৪৭%) গতিসীমা মানছে না। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে মোটরসাইকেল (৪৫%) ও প্রাইভেট কার (৪১%)।
প্রতিবেদনে রোড ক্র্যাশের ঝুঁকি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে বিআরটিএ প্রণীত মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ বাস্তবায়ন করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সড়ক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয়।
সিআইপিআরবি’র রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কাজী বোরহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের একটি অগ্রাধিকারমূলক কাজ। আর সড়ককে নিরাপদ করার জন্য তথ্য-উপাত্ত অত্যন্ত জরুরি। কোথায় রোড ক্র্যাশ হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা প্রতিরোধে কী করণীয় তা বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে বের করা সম্ভব। আর এসব তথ্যকে কাজে লাগিয়ে আমরা পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারও ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনার মাধ্যমে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গিকারাবদ্ধ।’
অনুষ্ঠানে চসিক প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘গবেষণা ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চসিক কাজ করবে।’ তিনি ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিকল্পনা করার সময় রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি-এর ফলাফল ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন।’