চট্টগ্রামে কঠোর হচ্ছে আ.লীগ

0

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এবার চট্টগ্রামে কঠোর অবস্থান জানান দিতে চায় আওয়ামী লীগ। আগামীকাল কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভা থেকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চায় দলটি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় আয়োজিত এ সভা থেকেই মূলত নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানা যায়। গতকাল মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সহিংসতাকারীদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের পক্ষ নিয়ে তদবির করা সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে দেশব্যাপী স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাত-শিবিরের পরিকল্পিত নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রত্যেক পাড়ায় মহল্লায় দেশপ্রেমী জনগণকে সাথে নিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে সতর্ক অবস্থানের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনগণের জান-মাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে। একই সাথে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করে প্রতি ওয়ার্ডে তৃণমূল স্তরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নাশকতা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করতে হবে। একই সাথে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের যে সকল দুস্কৃতকারী পাড়া মহল্লায় ঘাপটি মেরে আছে তাদেরকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি যারা তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও নাশকতায় উস্কানী দিচ্ছে তাদেরও একটি তালিকা তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পেশ করতে হবে। নাশকতা ও অরাজকতার শিকার যেসকল পরিবার ও নিরীহ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত ও নাজেহাল হয়েছেন এবং সম্পদহানী ও জান-মালের ক্ষতি হয়েছে তাদের সাথে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সরাসরি যোগাযোগ করবেন।
নাছির উদ্দীন বলেন, নাশকতা-নৈরাজ্যে সরকারি স্থাপনার উপর হামলাকারী ও হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহণকারী যে সকল চিহ্নিতকারী সন্ত্রাসী ও দুস্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের দায় মুক্তির জন্য আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মী যাতে সুপারিশ বা তদবির না করেন সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহবান জানান। দলীয় কোন স্তরের নেতাকর্মী যদি এই ধরনের অনাকাক্সিক্ষত কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, অতিসম্প্রতি শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ছিনতাই করে বিএনপি-জামাত ও শিবির সরকার উৎখাতের যে জঘন্য যে ধ্বংসাত্মক মরণ কামড় দিয়েছে তার বিরুদ্ধে দাঁতভাঙা জবাব দিতে এক মুহুর্তও অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আমাদেরকে এখন থেকেই চিহ্নিত রাষ্ট্র ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে কোনো রকম ন্যূনতম ছাড় না দিয়ে সমূলে উৎখাত করার পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে তা যাতে শতভাগ বাস্তবায়ন হয় সেই লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের সার্বক্ষণিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। এই অপশক্তিকে রুখতে হলে আমাদেরকে পরিকল্পনা মাফিক এগুতে হবে এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে প্রতিটি এলাকায় ও মহল্লায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির বিরোধী দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চসিক মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নিকট অতীতে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-বিএনপি-শিবিরের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় সাংগঠনিক শক্তির ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছে। এই অভিজ্ঞতায় শানিত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মীকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে।
এদিকে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা থেকে শোকের মাসের কর্মসূচিও হাতে নেয়া হয়। শোকের মাস আগস্টের ১ম দিন ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার বাদ আসর আন্দরকিল্লা জুমা মসজিদে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই সাথে মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি হিসেবে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে। আগস্ট মাসে প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে জাতীয় শোক দিবস কর্মসূচি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে পালন করতে হবে।
সভার শুরুতে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নাশকতা ও নৈরাজ্যে যারা নিহত হয়েছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম জহুরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মসিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, মাহবুবুল হক মিয়া, দিদারুল আলম চৌধুরী, আবু তাহের, মো. হোসেন, শহীদুল আলম, জহর লাল হাজারী, নির্বাহী সদস্য এম.এ লতিফ এমপি, নুরুল আবছার মিয়া, আবুল মনছুর, কামরুল হাসান বুলু, গাজী শফিউল আজিম, পেয়ার মোহাম্মদ, সৈয়দ আমিনুল হক, দোস্ত মোহাম্মদ, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, আব্দুল লতিফ টিপু, বখতেয়ার উদ্দীন খান, মহব্বত আলী খান, ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কৃষাণ চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, নেছার উদ্দীন মঞ্জু, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, মো. জাবেদ, বেলাল আহমদ, মোর্শেদ আক্তার চৌধুরী প্রমুখ।