নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে এখনো ছয়টি আসনে সীমানা জটিলতা রয়ে গেছে। চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুন্ড ও হাটহাজারী উপজেলার সংসদীয় সীমানা এখনো এলোমেলো। একটি উপজেলার ভেতরে দু’টি সংসদীয় আসন যুক্ত রয়েছে। আবার কয়েকটি আসনের সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকাও সংযুক্ত।
এদিকে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণে বেশ কয়েকটি আবেদন গ্রহণ করেছে। তবে এতে চট্টগ্রামের কোনো আসনের আবেদন জমা পড়েনি বলে জানা যায়। যে কারণে পূর্বের সীমানা অনুসারেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- এমনটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থা ও অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হবে। আমরা জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০২১ নিয়ে আলোচনা করেছি। জানতে পেরেছি বর্তমান আইনে দু’টি বিষয় মূলত সমস্যা সৃষ্টি করছে। একটি হলো- জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করা সংসদীয় আসন। আমরা যেটা প্রস্তাব করতে চাচ্ছি, সেটি হলো ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থা ও অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের ব্যবস্থা করা’।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব।
জানা গেছে, সাতকানিয়া ও চন্দনাইশে ছয় ইউনিয়ন নিয়ে জটিলতা আছে। উপজেলার ক্ষেত্রে এই ছয় ইউনিয়ন সাতকানিয়ায় হলেও সংসদীয় আসনে এসব এলাকার ভোটাররা চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের অধীনে। এই ছয় ইউনিয়ন হলো সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া, কালিয়াইশ, বাজালিয়া, ধর্মপুর, পুরানগড়, খাগরিয়া ইউনিয়ন। সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানাটি ২০১৩ সালে পুনঃনির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন।
সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জটিলতায় ভরপুর চট্টগ্রাম-৮ আসনটি। এ আসনটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩নং পাঁচলাইশ, ৪নং চান্দগাঁও, ৫নং মোহরা, ৬নং পূর্ব ষোলশহর ও ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড, বোয়ালখালী উপজেলার পৌরসভা, কধুরখীল,পশ্চিম গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ সংসদীয় আসনের ভোটারদের মধ্যে সীমানা নিয়ে ত্রিমুখী সংকট রয়েছে।
বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নটি আবার সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) এর আওতায়। যদিও এই ইউনিয়নের ভোটাররা উপজেলা নির্বাচনে বোয়ালখালীতেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সংসদীয় আসনের সুবিধা পেতে এই ইউনিয়নের ভোটারদের রাঙ্গুনিয়ার মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনে যুক্ত থাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পাঁচ ওয়ার্ডের ভোটাররা স্থানীয় সরকারের আওতায় সিটি কর্পোরেশন ও সংসদীয় আসনে চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওতাধীন।
চট্টগ্রাম-৫ আসনটি হাটহাজারীর আসন হিসেবে পরিচিত। যদিও এই আসনের সাথে যুক্ত রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ও ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড। এই আসনে চসিকের আওতাধীন দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা স্থানীয় সরকারের আওতায় থাকলেও সংসদীয় আসনের সুবিধা ভোগ করে হাটহাজারীতে।
চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুন্ড আসন হিসেবে পরিচিতি থাকলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ও ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডও এই আসনে যুক্ত। এই আসনে চসিকের আওতাধীন এই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা স্থানীয় সরকারের আওতায় থাকলেও সংসদীয় আসনের সুবিধা ভোগ করে সীতাকুন্ডে। ফলে তাদেরকেও নানানভাবে প্রাপ্যতা বঞ্চনার শিকার হতে হয়, হয়রানিতো আছেই। আবার নগরীর কাছাকাছি থাকা সীতাকুন্ডের তিনটি ইউনিয়ন পুরোপুরি নগরীর সুবিধা ভোগ করে।
২০১৩ সালের জুলাই মাসে সর্বশেষ সীমানা নির্ধারণ হয়। পরে ২০১৬ সালের ৯ মে পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলার সীমানা জটিলতা নিরসন হয়। সেসময় কর্ণফুলীর পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন উপজেলা গঠন করা হয়। এর আগে কর্ণফুলীর এই পাঁচ ইউনিয়ন চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনের সাথে যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে কর্ণফুলীকে আনোয়ারা আসনের সাথে যুক্ত হয়।
ইসি’র কর্মকর্তারা জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণে জনসাধারণের আবেদনকে প্রাধান্য দেবে ইসি। এক্ষেত্রে আইন সংশোধনের পরেই কার্যক্রম শুরু করা হবে। আইন সংশোধন না হওয়ায় এই কার্যক্রম ঝুলে আছে। তারা বলছে, সীমানা পুনর্বিন্যাস করতে ন্যূনতম ৬ মাস সময় লাগে। ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করতে হলে দ্রæত আইন সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। যেখানে কোনো আবেদন পড়েনি সেখানে আগের সীমানায় নির্বাচন হবে। নির্ধারিত সময়ে ৫৫টি আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের জন্য ৩৬০টি আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদন বিবেচনায় নিয়ে আইন সংশোধনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি। সরকার এটি নিয়ে কাজ করছে।