দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর নগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম। বন্দরের কারণে দেশের প্রথম শিল্প ও কলকারখানার যাত্রাও হয়েছিল এ চট্টগ্রাম থেকে। দিনের পর দিন শিল্প কলকারখানা বেড়েছে, আধুনিক ও উন্নত হয়েছে। দেশের ভোগ্যপণ্যসহ বিএসটিআই-এর তালিকাভুক্ত অনেকগুলো এ চট্টগ্রামে উৎপাদন হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য এসব পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে বিএসটিআই-এর কোন পূর্ণাঙ্গ ল্যাব ছিল না। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও স্থাপন করা হয়নি একটি ল্যাব। এ নিয়ে শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেবা সংস্থার সাথেও আলাপ আলোচনা করেছেন অতীতে। এ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তাদের বিবিরহাটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কার্যালয়ে অস্থায়ীভাবে বিএসটিআই’র ল্যাব স্থাপন করলেও তা পূর্ণাঙ্গ ছিল না। চসিকের ওই উদ্যোগও তেমন আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ বিএসটিআই’র ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি চট্টগ্রামের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর। আমরা আশা করি, এ উদ্যোগ দ্রæত বাস্তবায়ন হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৮৫ সালে বিএসটিআই প্রতিষ্ঠা করা হয়। খাদ্য, কৃষি, প্রসাধনীসহ নিত্য ব্যবহার্য ২৯৯টি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা ও তদারকির দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানটির। এর মধ্যে চট্টগ্রামের বিএসটিআই কার্যালয়ে এক তৃতীয়াংশ পণ্যের পূর্ণাঙ্গ এবং মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি পণ্যের আংশিক মান পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ অধিকাংশ পণ্যের মান পরীক্ষা ও লাইসেন্স পেতে বিএসটিআই ঢাকা কার্যালয়ে যেতে হয় ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের এ দৌড়ঝাঁপের শেষ চাপটা পড়ে ভোক্তার উপরেই। কারণ বাড়তি খরচের চাপ ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্যের উপর অন্তর্ভুক্ত করেন। এবার প্রস্তাবিত ল্যাব প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবসায়ীদের ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ কমবে। চট্টগ্রামে পরীক্ষা সম্ভব হলে সময় কম লাগবে, এতে ভোক্তাদের মান সম্পন্ন পণ্য পাওয়া নিশ্চিত হবে। দামের ক্ষেত্রেও ন্যায্যতা পাবে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার না থাকায় শুধু দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ভোগান্তিতে পড়েন, তা নয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিএসটিআই’র তালিকাভুক্ত পণ্যের আমদানিকারকরাও। কারণ, আইন অনুযায়ী বিএসটিআই’র ছাড়পত্র পাওয়ার পর বন্দর থেকে প্রতিটি চালানের পণ্য খালাস করতে পারেন তারা। ফলে চট্টগ্রামে যেসব পণ্য পরীক্ষা করার সুযোগ নেই, সেসব পণ্যের নমুনা নিয়ে ব্যবসায়ীদের ঢাকায় ছুটতে হয়। এ প্রক্রিয়াতে দীর্ঘায়িত হয় পণ্য খালাস, বাড়ে ব্যয়ও। বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। আমাদের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের (ল্যাব) যাবতীয় যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। আগামী চার মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার হবে। কোন পরীক্ষার জন্য আর ঢাকায় ছুটাছুটি করতে হবে না। চট্টগ্রামে সকল পণ্যের পরীক্ষা সম্ভব হবে। বিএসটিআই’র তদারকির কাজ মূলত চারটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে টেস্টিং কেমিক্যাল, টেস্টিং ফিজিক্যাল, মেট্রোলজি ও সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম)। বিএসটিআই দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ২৯৯টি পণ্য নজরদারি করে। কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা পরিদর্শন ও পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করে লাইসেন্স দেয় বিএসটিআই। এ লাইসেন্সের মেয়াদ তিন বছর। লাইসেন্স দেওয়া ছাড়াও ওজনে কারচুপি এবং ভেজালবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বও বিএসটিআইয়ের। তবে লাইসেন্স পেতে দীর্ঘসূত্রতা ও কঠোর নজরদারি না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই পণ্য উৎপাদন করছে। আবার কেউ লাইসেন্স নেওয়ার পর তা আর নবায়ন করছে না। আবার নির্বাহী ক্ষমতা না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারস্থ হতে হয় কর্মকর্তাদের। এর বাইরে নিজেরা পরিদর্শন কার্যক্রম চালালেও কাউকে তাৎক্ষণিক শান্তি দিতে পারেন না তারা। তবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে বিএসটিআই। চট্টগ্রামবাসী আশা করে, বিএসটিআই’র ল্যাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর হবে এবার। এ ল্যাব প্রতিষ্ঠা হলে পণ্যমান নির্ণয়ে হয়রানি কমবে, সময়ের অপচয় কমবে, অনিয়ম ও দুর্নীতি কমবে, যারা হয়রানির কারণে ঢাকায় না গিয়ে বিএসটিআই’র অনুমতি ছাড়া পণ্য বাজারজাত করছেন তারা উৎসাহিত হয়ে বিএসটিআই’র রেজিস্ট্রেশন করবে। সর্বোপরি ভোক্তারা নির্ভেজাল পণ্য ভোগ করবে। সরকার আন্তরিকতার সাথে দ্রæত সময়ে ল্যাব প্রতিষ্ঠা করবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।