চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত

12

এম এ হোসাইন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি এ বিষয়ে এক বৈঠকে আলোচনার পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রার্থীদের নাম এবং তাদের নির্বাচনী এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব নামের ঘোষণা এখনও আসেনি।
জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল চট্টগ্রামে এসে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন।
দলটির নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে অন্তত ১০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তারা শক্তিশালী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তরুণদের সমন্বয়ে শক্তিশালী একটি দল গঠনের লক্ষ্য রাখা হয়েছে, যাতে তারা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। বিশেষত, দলটি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে।
মহানগর জামায়াতের আমির শাহাজাহন চৌধুরী বলেন, আমাদের তো একটা সিস্টেম আছে, সে সিস্টেমে সবকিছু হয়। এখন সবাই যেটা বলছে, নিশ্চয় তাদের কাছে এমন কোন তথ্য আছে। আমি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবো না, যেহেতু এটা কেন্দ্রের বিষয়। কেন্দ্র থেকে এটার ঘোষণা আসবে।
সূত্র বলছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি। এদের মধ্যে অন্তত ১০টি আসনে জয়ের জন্য আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। প্রার্থীদের মধ্যে তরুণদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠনের লক্ষ্য রাখা হয়েছে, যাতে তারা জনগণের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন।
জামায়াতের নেতা ও সদস্যরা আশা করছেন, দলটি চট্টগ্রামে বড় ধরনের সাফল্য পাবে এবং তাদের নির্বাচনী প্রচারণা সফল হবে।
মহানগর জামায়াতের ইসলামির প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ বলেন, প্রার্থীদের নাম আমাদের সাংগঠনিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সেটা ঘোষণা আসবে। সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করেন, এরমধ্যে আশা করি ঘোষণা পাবেন। এখন কোন তথ্য দিলে সেটা ভুল হতে পারে।

কারা আছেন তালিকায় : জামায়াতের চূড়ান্ত তালিকায় থাকা প্রার্থীদের একটি নামের তালিকা পূর্বদেশের হাতে এসেছে। যদিও এ তালিকার সত্যতা নিশ্চিত করেননি কেউ।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আলাউদ্দিন শিকদার, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আনোয়ারুল সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) শাহজাহান মঞ্জুর, চট্টগ্রাম ৭ (রাঙ্গুনিয়া) অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ডা. আবু নাসের, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি- বাকলিয়া). ডা. ফজলুল হক, চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) শফিউল আলম, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ইঞ্জিনিয়ার লোকমান, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ডা. শাহাদাৎ হোসাইন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জহিরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের এক নেতা বলেন, আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বৈঠকে প্রার্থীদের নাম জানানো হয়েছে। যেহেতু এটি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশ করা হবে, তাই এখন সবকিছু বলা সম্ভব নয়। কয়েকদিনের মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল চট্টগ্রামে আসবেন। তখন তিনি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের তরুণ প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, তবে তাদের জন্য অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। জামায়াতের নেতৃত্বের তরুণ সদস্যদের জন্য এটি একটি নতুন সুযোগ হতে পারে, কারণ তারা আধুনিক ও কার্যকরী প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। তবে, রাজনৈতিক মাঠে জামায়াতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, তারা অন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকে নিজেদের আলাদা করে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কিনা।
তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা, সুষ্ঠু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিষয়গুলোকে সামনে রেখে আলোচনা করা হবে। এটি জামায়াতের নির্বাচনী কার্যক্রমে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং অভ্যন্তরীণ একতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।