মনিরুল ইসলাম মুন্না
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তদন্তে চট্টগ্রামে আসছে সরকারের গঠিত ‘জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশন।’ আগামী শুক্র ও শনিবার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ব্যাপারে শুনানি আহবান করা হয়েছে।
শুনানিতে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের তলব করেছে তদন্ত কমিশন।
তদন্ত কমিশনের (হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের পদমর্যাদা সম্পন্ন) সদস্য ড. মো. আব্দুল আলীম ও ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসেন শুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তাদের সাথে তদন্ত কমিশনের আইন ও গবেষণা কর্মকর্তা (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মো. ফারুক হোসাইন, আইন ও গবেষণা কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী জজ) মো. সোয়েবুর রহমান এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল মোমিন সরকার শুনানিতে অংশগ্রহণ করবেন। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, শুনানির ব্যাপারে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আঞ্চলিক কার্যালয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের সকল প্রার্থীকে নিয়ে শুনানি কার্যক্রম শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন সব প্রার্থীকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা রিটার্নিং অফিসার (তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান), সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার (যে কোনো ৫ জন), সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার (যে কোনো ৫ জন) এবং পোলিং এজেন্টদের (যে কোনো ৫ জন) একইদিন দুপুর আড়াইটায় শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। পরদিন অর্থাৎ, শনিবার ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা রিটার্নিং অফিসার (তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম), সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার (যে কোনো ৫ জন), সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার (যে কোনো ৫ জন) এবং পোলিং এজেন্টদের (যে কোনো ৫ জন) শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
একইভাবে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম রেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, অফিসার-ইন-চার্জ এবং উপ-পরিদর্শকদের শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এখানে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের যে কোন সংসদীয় আসনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম রেঞ্জ এবং সিএমপি’তে কর্মরত আছেন; প্রত্যেক ক্যাটাগরি মিলিয়ে এমন কমপক্ষে ১০ জন কর্মকর্তাকে শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য পূর্বদেশকে জানান, শুনানিতে অনিয়মের বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে।
চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) তদন্ত কমিশন থেকে শুনানির বিষয়ে আমাকে বলা হয়েছে। আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।শুনানিতে তিন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী, রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং, প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসাররা থাকবেন। শুনানি শেষে মাননীয় তদন্ত কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গত ২৯ জুলাই কমিশন গঠন করা হয়। এ বিষয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনকে লজিস্টিক ও তথ্য সহায়তা প্রদান করতে বলা হয়।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর দেশের বেশ কয়েকটি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তির দিয়ে- বিগত তিনটি (দশম, একাদশ ও দ্বাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তথ্য চেয়েছে করেছে জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠাকল্পে এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচনধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ‘জাতীয় নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) তদন্ত কমিশন’ গঠন করেছে।
চলমান তদন্ত কার্যক্রমে অংশ নিতে প্রতি কর্মদিবস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সশরীরে কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংগঠিত বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ বা তথ্য জানাতে পারবেন।
কমিশনের ই-মেইলে (feedback@neic-bd.org) অথবা ওয়েবসাইটে (www.neic-bd.org) উল্লিখিত ‘মতামত ও সুপারিশ’ অপশনের মাধ্যমে অথবা ডাকযোগে অভিযোগ বা তথ্য প্রদান করতে পারবেন। টেলিফোনের মাধ্যমে বা সশরীরে কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ বা তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে উল্লিখিত সময়ে ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরে জাতীয় সংসদ ভবনের ২ নম্বর ব্লকে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে। কমিশনের টেলিফোন ০২-২২২২১৫৬৪৭ ও মোবাইল ০১৫৫০০৪২০৬০।











