চকরিয়ায় প্রতিপক্ষের মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিরীহ এক পরিবার

19

কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিরীহ একটি পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ছৈয়দ আহমদ নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এরআগে নিরীহ পরিবারের বসতঘর পুড়িয়ে দিয়ে এ জায়গায় নতুন ঘর নির্মাণ করে প্রভাবশালী ছৈয়দ আহমদ। ফলে ঘরবাড়ি হারিয়ে মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিরীহ পরিবারটি। চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপুর গ্রামের মৃত আহমদ হোসেনের ছেলে বয়োবৃদ্ধ কৃষক আবুল কাশেম (৭০) এসব অভিযোগ করেন। মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার কৃষক আবুল কাশেম গত শুক্রবার চকরিয়ায় কর্মরত স্থাণীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে হারবাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপুর গ্রামের আমার বসতবাড়ি জবর দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল স্থানীয় প্রভাবশালী ছৈয়দ আহমদ।
ইতোপূর্বে তিনি, ছেলে ও তার ভাইদের নিয়ে অনেকবার আমাকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ মার্চ রাত আনুমানিক ১২টার দিকে প্রভাবশালী ছৈয়দ আহমদ, তার ছেলে ইউনুছ, ইব্রাহিম, একই এলাকার মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে আব্দু ছবুর, ছৈয়দ আহমদের ভাই মো. সেলিম, তার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম, মহিবুল্লাহ, ইব্রাহিমের স্ত্রী মিশু, ছৈয়দ আহমদের মেয়ে নার্গিস, কহিনুর আক্তার, নিলুফা, মো. সেলিমের মেয়ে সাহিদা, শারমিন, উম্মে হাবিবা, স্ত্রী নাছিমা ও ছৈয়দ আহমদের স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম দলবেঁধে আমার বসতবাড়িতে প্রবেশ করেন।
এসময় তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের হত্যার হুমকি দিয়ে আমার পুরো পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পরে তারা কেরোসিন ছিটিয়ে আমার বসতঘর অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। এ সময় আমার বসত ঘরের আগুনের লেলিহান শিখা দেখে পার্শ্ববর্তী লোকজন আগুন নেভাতে এগিয়ে এলে প্রভাবশালী মহলটি তাদেরকেও হমকী ধমকি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। পরে এলাকাবাসী বসত বাড়ির অগ্নিকাÐের ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে চকরিয়া থেকে দমকল বাহিনীর লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। তবে ততক্ষণে আমার বসতবাড়ি ও মূল্যবান সরঞ্জাম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে আমার অন্তত দশ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৬ মার্চ আমি চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছিলাম। কিন্তু থানা পুলিশ আমার এজাহারটি গ্রহণ করেনি। উল্টো আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে প্রভাবশালী ছৈয়দ আহমদের ছেলে মো. ইউনুছ বাদী হয়ে একটি মিথ্যা মামলা রুজু করেন।
ওই মিথ্যা ও হয়রানীমুলক মামলায় আমার স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই পুত্রবধু, এক মেয়ে ও অপর এক নিকটাত্মীয়সহ আটজনকে আসামি করা হয়। ফলে এ মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে আমরা পুরো পরিবার এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ভক্তভোগী কৃষক আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, আমি নিরীহ বলে পুলিশ আমার মামলা না নিয়ে উল্টো আমি ও আমার পরিবারকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়েছেন। পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে আজ আমি ও আমার পরিবার মাথা গুজার ঠাই বসতবাড়ি হারিয়ে পথে পথে ঘুরছি।
বিষয়টির নিরেপক্ষ তদন্ত পূর্বক এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানান মিথ্যা ও সাজানো মামলায় হয়রানীর শিকার কৃষক আবুল কাশেম। এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষক আবুল কাশেমের দায়েরকৃত অভিযোগ তদন্ত করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ব্যাপারে কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই তার দেয়া অভিযোগটি আর মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। ওসি আরও বলেন, তবে কৃষক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে মো. ইউনুছের দায়ের করা অভিযোগ পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মেলায় পরবর্তীতে তা মামলা রেকর্ড করা হয়। তাদের দুইপক্ষের মধ্যে যেহেতু জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে সেজন্য এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা যাতে বিনষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে বলেও জানান তিনি।