চকরিয়া প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

1

চকরিয়া প্রতিনিধি

চকরিয়ায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বকনা গরু বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নে সরকারি সহায়তা হিসেবে তাদের মাঝে বিতরণকৃত বকনা গরুর মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সরবরাহকৃত নিম্নমানের, কঙ্কাল প্রকৃতির দুর্বল ও রোগাক্রান্ত গরু বিতরণ করা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে। গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টায় চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ‘সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ৮২ জন উপকারভোগীর মাঝে ৮২টি বকনা গরু বিতরণ করা হয়। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বকনা গরু বিতরণ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উপকারভোগীদের মাঝে এসব গরু তুলে দেন। এ সময় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আরিফ উদ্দিন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল আমিন ও মেরিন ফিসারিজ অফিসার এ জেড এম মোসাদ্দেকুল ইসলামসহ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল দুপুরে চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের সামনের মাঠে গাছের সাথে ও খূঁটি পুতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে বিতরণের জন্য আনা বকনা গরুগুলো। আর অফিস এরিয়ায় ভিড় করছেন উপকারভোগী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণও বকনা গরু বিতরণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ যেন নিজের পছন্দের গরু নিয়ে অন্যের সাথে তর্কে জড়াতে না পারেন সেজন্য বকনা গরু বিতরণের ক্ষেত্রে লটারির ব্যবস্থা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। লটারিতে অংশ নিয়ে যে নম্বর উঠছে ওই গরুটিই বেঁধে রাখা রশি থেকে খুলে নিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট উপকারভোগী। এ সময় বেঁধে রাখা বকনা গরুর সাইজ দেখে অনেক উপকারভোগীতে বলতে শোনা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিতরণকৃত এসব রোগাক্রান্ত ও কঙ্কাল গরু দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টীর ভাগ্যের কি উন্নয়ন হবে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা সমালোচনার ঝড় উঠে।
চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক এম আর মাহমুদ তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘কর্তৃপক্ষ এত মোটা তাজা গরুগুলো পেলেন কোথায় জানতে বড় ইচ্ছে করে। রসিক জনের মতে এসব গরু মিয়ানমার (বার্মা) প্রজাতির। খালি চোখেও গরুগুলোর হাড় গণনা করা যাবে। ভাদ্র মাসের আগেই বেশির ভাগ গরু বাছুর অকালে প্রাণ হারাতে পারে। কথায় আছে মাগনা গরুর দাঁত থাকে না, হাড়ও গণনা করা যায়।’
আবার কেউ কেউ এটিকে ‘লুটপাট প্রকল্প’ অভিহিত করে লিখেছেন, এটা কোনো জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প নয়, গরিবের হক মেরে টাকা আত্মসাতের প্রকল্প। না হলে শারীরিকভাবে দুর্বল ও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত এসব গরু বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আনে কিভাবে? এ ধরনের অনিয়মে শুধু সরকারি অর্থ লোপাট নয়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিশ্বাস ও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিষয়টির সচ্ছতার ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টিও কামনা করেছেন তারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে বকনা গরু নিতে আসা কয়েকজন উপকারভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত কয়েক বছর আগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বিতরণকৃত গরুর সাইজ ছিল অনেক বড়। গরুর জাতও ছিল উন্নত মানের। ওইসব গরু কম করে হলেও প্রতিটির মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা দামের হতো। কিন্তু বর্তমানে যেসব গরু বিতরণের জন্য আনা হয়েছে সেগুলো সাইজে অনেক ছোট। আর গরু গুলোও দেখতে খুবই নিম্নমানের, রোগাক্রান্ত ও কঙ্কাল শ্রেণির গরুর মতো। এসব গরুর দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বিতরণের জন্য আনা এসব বকনা গরুর মূল্য কতো ধরা হয়েছে সে ব্যাপারেও তাদের কোনকিছু অবহিত করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, চকরিয়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করা সব বকনা গরুগুলো শারীরিকভাবে সুস্থ ছিল। গরুগুলো ২০-২২ ঘণ্টা জার্নি করে উত্তরবঙ্গ আনার ফলে একটু দুর্বল প্রকৃতির মনে হয়েছে। গরুগুলোকে আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছি। সেগুলো যথারীতি খাবারও গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, বিতরণ করা গরুগুলো উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ঠিকাদারের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়নি। এগুলো প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কেন্দ্রিয় ডিজি অফিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তারা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমেই গরুগুলো সংগ্রহ করে বিতরণের জন্য আমাদের অফিসে পাঠিয়েছেন। ডিজি অফিসের নির্দেশনা মতো বকনা গরুগুলো আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করেছি মাত্র। সুতরাং এখানে গরু বিতরণ ও ক্রয় করার ক্ষেত্রে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের অনিয়ম দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই। বুধবার উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণকৃত বকনা গরুগুলো শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ এবং ভাল মানের গরু বলেও মন্তব্য করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আরিফ উদ্দিন।