চকরিয়া প্রতিনিধি
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম প্রকাশ বাইট্টা জাফর গ্রেপ্তার হয়েছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। হাসিনা সরকারের পতনের দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস পর গোয়েন্দা জালে আটকা পড়েন প্রভাবশালী এ সাবেক সংসদ সদস্য।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল রবিবার বিকালে গণমাধ্যমকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জাফর আলম তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে বাম ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও সর্বশেষ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েই হয়ে উঠেন দলের ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিয়ে তার অনুগত লোকদের নিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একক আধিপত্য নেন। তারপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জাফর আলম তার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে প্রথমে পৌরসভার মেয়র ও পরবর্তীতে ২০১৪ সালে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নজরে আসেন। সেই সুবাদে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়ে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হয়েই পাঁচ বছর ধরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও দখলবাজির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হন জাফর আলম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও সাবেক সাংসদ জাফর আলম, তার স্ত্রী ও সন্তানের নামে অন্তত ২০০টি জমির মালিকানার দলিলের সন্ধান মিলেছে।
সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলম ক্ষমতায় থাকাকানীন সময়ে তার অনুগত লোকদের নিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য নেয়ার পাশাপাশি গড়ে তোলেন আলাদা ক্যাডার বাহিনীও। ফলে পূর্ব থেকে দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব পরবর্তীতে আরো প্রকাশ্যে রূপ নেয়। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে বিরোধীয় পক্ষের নানা অভিযোগের কারনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কপালে জোটেনি জাফর আলমের। পরবর্তীতে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এ আসনের প্রার্থী কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। যদি এই নির্বাচনটিও সাজানো ও প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে অবহিত হয়ে আসছে।
এরপর জাফর আলম কিছুদিন রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখলেও চকরিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মাঠে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর তার নেতৃত্বে দফায় দফায় হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু কোনো কিছুই মাঠে থাকা ছাত্রদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। এরই মধ্যে ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গা-ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। হাসিনা সরকারের পতনের দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস পর গোয়েন্দা জালে আটকা পড়ে গ্রেপ্তার হন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্ষমতাধর সভাপতি এই জাফর আলম।