চকরিয়া প্রতিনিধি
ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সাংসদ জাফর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ ও পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরীসহ উপজেলা এবং পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী। এছাড়া উপজেলার সিংহভাগ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যানও এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তারা সরব রয়েছেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পরই চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী আত্মগোপনে চলে গেলেও সা¤প্রতিক সময়ে তিনি ফেনী থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার আগে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করে এখন জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয়নাল ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মক্কি ইকবাল হোসাইন।
এছাড়া পালিয়ে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সরওয়ার আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন েেচৗধুরী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম শহীদ, সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কচির, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত হোসেন, সাবেক সাংসদ জাফর আলমের ক্যাডার বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম প্রকাশ কালা নজরুল, ভাতিজা জিয়াবুল কমিশনার, ভাগ্নে মিজান, সাবেক সাংসদ জাফর আলমের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা তানভীর আহামদ সিদ্দিকী তুহিন, পিএস আমিন চৌধুরী, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক খ ম আওরঙ্গজেব বুলেট, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আজিমুল হক আজিম, আওয়ামী লীগ নেতা সাহাব উদ্দিন, জামাল হোসাইন চৌধূরী, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন হেলালী, ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা সহ অনেকে নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনে চলে যাওয়া এসব নেতাদের কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে পাহাড়ি জনপদ ও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ জনপদে অস্থায়ীভাবে বসতি গড়েছেন।
চকরিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মাঠে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর দফায় দফায় হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার -১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। তারপর থেকে সাংসদ জাফর আলম তার অনুগত লোকদের নিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য নেয়। গড়ে তুলে আলাদা ক্যাডার বাহিনীও। ফলে পূর্ব থেকে দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগের দ্বন্ধ পরবর্তীতে আরো প্রকাশ্যে রূপ নেয়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে বিরোধীয় পক্ষের নানা অভিযোগের কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন জাফর আলম। পরবর্তীতে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে জাফর আলম দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। জাফর আলম গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ অংশের বিরোধিতার কারণে নির্বাচনে হেরে যান। এ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী। ছাত্র জনতার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সাবেক সাংসদ জাফর আলমসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে যায়।