ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও নিরাপত্তা জোরদার করার দায় সরকারের

2

দেশের প্রশাসনিক হৃদপিন্ড সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা এখন টক অব দ্যা আর্থ। ২০২৪ সালের সাল তামামিতে হয়ত এটিও বিশ্বের অন্যতম আলোচিত সর্বশেষ ঘটনা হিসেবে ঠাঁই করে নিবে। কথা হচ্ছে, দেশের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন সচিবালয়ে মধ্যরাতের আগুন! দূর্ঘটনা না কি অন্য কিছু তা নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। সাথে তদন্ত কমিটির কাজও চলছে। এ ঘটনার পেছনে যাই থাক, দায় কিন্তু সরকার এড়াতে পারেনা। ডেটলাইন বুধবার গভীর রাতে পত্রিকায় প্রকাশিত সময় অনুযায়ী রাত ১.৫২ মিনিটি সচিবালয়ের ৭ নং ভবনে আগুন লাগে। এতে ভবনটির ৬,৭ ও ৮ তলার দুইজন উপদেষ্টার অফিসসহ বেশ কিছু কক্ষ একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ আগুনে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ আগুন নেভাতে ১৯টি ফায়ার ইউনিটের ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। এসময় একজন ফায়ার কর্মীর মৃত্যুও ঘটনাও ঘটে। সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় সরকার স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অগ্নিকান্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন এবং এর পেছনে কারও ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কি না, তা খুঁজে বের করাই হবে কমিটির কাজ। তবে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা প্রাথমিকভাবে শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রাপাতের কথা উল্লেখ করলেও বিভিন্ন বিশ্লেষক তা মানতে রাজি নয়। বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘তদন্ত করে জানা যাবে, এই অগ্নিকান্ডের পেছনে কোনো নাশকতার ঘটনা আছে কি না।’ অন্যদিকে স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ফেসবুকে এক বার্তায় লিখেছেন, সরকারকে অকার্যকর প্রমাণ করতেই এই আগুন লাগানো হয়েছে। যারাই আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড কেন ঘটল, এটি নিছক দুর্ঘটনা না নাশকতা, সেই রহস্য উদ্ঘাটন করা জরুরি। আমরা জানি, কয়েক বছর আগেও সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। তবে তা এতটুকু বিস্তৃত ছিল না। কিন্তু সেই সময় সচিবালয়ে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার দূর্বরতা নিয়ে সংবাদপত্রে বেশ রেখা লেখি হয়েছিল। গত বুধবার দিবাগত রাত সচিবালয়ের যে ভবনে আগু লাগে, ওই ভবনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর আছে। যা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ও নাহিদুল ইসলামের দপ্তর। এখন যে কথাটি বেশ আলোচনায় রয়েছে, তা হলো প্রথমত মধ্যরাতে একই ভবনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার দপ্তরে কেন আগুনের সূত্রপাত হয়। দ্বিতীয়ত এ ঘটনার আগে কিভাবে সচিব হাউসে আগুন লেগেছিল! এছাড়া সচিবালয়ের মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন নেভানোর সিস্টেম এতো দুর্বল কেন ? কেন ফায়ার সার্ভিসের ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে? সূত্র জানায়, সচিবালয়ে ঢোকার ফটক পাঁচটি। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার ফটক আছে মাত্র দুটি। কিন্তু ওই দুই ফটক দিয়েও ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়েছে। সচিবালয়ের ৪ নম্বর ফটক দিয়ে ঢুকতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ভেঙে গেছে। এছাড়া সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ইন্টেরিয়ার করতে গিয়ে যে সব কাট, বোর্ড বা বিভিন্ন ওয়াল পেপার ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে রসায়নিক দার্হ্যও ব্যবহার হয়। ফলে যেকোন আগুন এসবের কারণে দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলেছেন, আগুন নেভাতে গিয়ে তাঁদের পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের দুটি টার্নটেবল লেডার (টিটিএল) ভেতরে ঢুকতে পেরেছে। ভবিষ্যতে এদিকে নজর দিতে হবে অধিক।
অগ্নিকাÐটি নিছক দুর্ঘটনা না নাশকতা, সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা যে কথা বলতে চেয়েছেন, সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ দলের সহায়তাকারী নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাও বলেছেন, এই ঘটনা পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘটিয়ে থাকতে পারেন। সচিবালয়ে যখন ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটল, তার আগে থেকে জনপ্রশাসনে অস্থিরতা চলে আসছিল বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যকার দ্বন্দ্বে। বুধবার রাতের অগ্নিকান্ডের সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা দরকার।
আমরা মনে করি, দুর্ঘটনা বা নাশকতা যাই হোক, সচিবালয়ের নিরাপত্তা যে টালমাটাল সেটা বুঝতে বাকি রইল না। আমরা গত তিনমাস ধরে আন্দোলনকামী অনেক মহলকে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেখেছি। যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। সর্বশেষ আগুনের ঘটনা নিরাপত্তা নিয়ে নতুনভাবে ভাবনার অবকাশ সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে সরকারের কোন উদাসিনতা গ্রহণযোগ্র নয়। আমরা আগুন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদারে সরকারের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।