গ্রুপিং-অযাচিত হস্তক্ষেপে অচলাবস্থা সেবা বঞ্চিত সাধারণ ব্যবসায়ীরা

1

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও

কক্সবাজারের ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদ কার্যত সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। উপজেলার সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক এই কেন্দ্রে প্রায় তিন সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হচ্ছে। বাজারের নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ২টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে টানাপোড়েন, গ্রুপিং এবং অযাচিত হস্তক্ষেপ-নিয়ন্ত্রণের কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
১৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদের কার্যক্রম মূলত গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পর থেকে ঝিমিয়ে পড়ে। উপজেলা নির্বাচনের পর পরিষদ নেতৃবৃন্দের উপর চাপ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করলে কমিটির সার্বিক কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এক পর্যায়ে তারা নিজেরাই জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে একাধিকবার বৈঠকে বসে লিয়াজোঁ করার চেষ্টা করেন। চেয়ারম্যানের কাছে বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটির তালিকাও দাখিল করেন। তারা তাকে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করার জন্য অনুরোধ জানান। তবে সে কার্যক্রম আর তেমন এগোয়নি। অন্যদিকে আরেকটি গ্রæপ বাজারের আহব্বায়ক কমিটি গঠনকল্পে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমার কাছে একটি কমিটির তালিকা দাখিল করেন। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি এখনো।
এদিকে, দীর্ঘদিন বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন না হওয়ায় নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে স্নায়ু চাপ বিরাজ করতে থাকে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন। এখন তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে যেন মাথা ঘামানোর কেউ নেই। আগে পরিষদ কার্যালয়ে বিচার প্রার্থীদের যেভাবে আনাগোনা দেখা যেতো এখন তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কেবল কর্মরত প্রহরীরাই কাজের ফাঁকে অবসর নিতে ও হিসাব সংরক্ষণ করতে কার্যালয় খুলেন। বাজারের মরিচ বাজার এলাকায় সরকারিভাবে নির্মিত একটি ভবনকে বাজার পরিচালনা পরিষদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে কার্যালয়টি এখন তার আগের জৌলুস হারিয়েছে।
জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই পরিষদের কর্মকর্তারা অফিস বিমুখ হতে শুরু করেন। সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরী মিন্টুকে না ডাকলে কখনো অফিসে যেতেন না। আর সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হক রিকু আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক টানা পোড়েনের কারণে দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলেন। অনেকদিন পর তিনি ঈদগাঁওয়ে আসলেও তেমন একটা অফিসে বসেননি। সহ-সম্পাদক হাসান তারেক ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণে অফিসে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। দপ্তর সম্পাদক নাসির উদ্দিন দীর্ঘদিন অসুস্থ। এক অপ্রীতিকর ঘটনার পর থেকে বাসায় অবস্থান করে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। নির্বাচিত প্রচার সম্পাদক সাকলাইন মোস্তাক এর অনেক আগে থেকেই নানা কারণে বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের কার্যক্রম থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে কেবল সক্রিয় রয়েছেন অর্থ সম্পাদক নুরুল আমিন। প্রহরীদের বেতন-ভাতা বাবদ উত্তোলিত টাকা তিনি তাদের মধ্যে বিলি-বন্টন করেন বলে জানা গেছে। অফিসের জন্য নিযুক্ত কর্মচারীও বর্তমানে নেই। বাজারের বিভিন্ন সাইড থেকে চারজন নিরাপত্তা প্রহরীকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরিচালনা পরিষদের কার্যক্রমের প্রতি মোটেও সন্তুষ্টি নেই ব্যবসায়ীদের। ফলে বিভিন্ন সাইডের ব্যবসায়ীরা প্রহরীর টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করছেন।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাঁশঘাটার ফার্ণিচার বিপণন এলাকা, দক্ষিণ পাশের তেলিপাড়া সড়ক এবং পূর্ব পাশের বিমান মৌলভীর ঘাঁট এলাকার দোকানদাররা দীর্ঘদিন প্রহরীদের খরচ দেন না। সুদের লেনদেন বিষয়ক বিচার-আচার এবং প্রহরীদের বেতন-ভাতার টাকা উত্তোলন ছাড়া পরিচালনা পরিষদের তেমন কোনো কাজকর্মও ছিল না। তবে মাঝে মধ্যে পার্টি এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে তারা যতটুকু পারতেন ভূমিকা রাখতেন।
ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে একাধিকবার নির্বাচিত প্রচার সম্পাদক সাকলাইন মোস্তাক জানান, অনেক আশা-আকাঙ্খার পর ২০০৫ সালের পরে ২০২০ সালে এ বাজারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি বিনা ভোটে প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রথম দিকে তিনি বাজারের সমস্যা সংক্রান্ত নানা প্রস্তাবনা হাউজে উপস্থাপন করেন। কিন্তু তার একটি প্রস্তাবনাও কেউ আমলে নেয়নি।