কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
গ্রীস্মের তাপদাহে পুড়ছে সারাদেশ। সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাহি অবস্থা, হাঁসফাঁস করছে পশু-পাখি। পিচঢালা সড়ক-মহাসড়ক যেন উত্তপ্ত কড়াই! একটু শীতল পরশের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। এর সাথে বাড়ছে লোডশেডিং। ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি, স্থবিরতা। এই লেখা যখন লিখছি তখনও সারা শরীর ঘামে ভিজছে! প্রচন্ড গরমের কারণে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম, পর্যাপ্ত ঘুমসহ সবকিছুর স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ থেকে মানুষ কবে পরিত্রাণ পাবে বলা মুশকিল। সহসাই তাপদাহও কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। যদিও কয়েকদিনের মধ্যে সারাদেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তীব্র তাপদাহের কারণে মানুষের শরীরে বিশেষ করে শিশু, বয়ষ্ক লোকজনের নানা অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। প্রচন্ড তাপদাহে বিপর্যস্ত নগরজীবন। তীব্র গরমে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ। আর্দ্রতা বেশি থাকায় এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশজুড়ে। অন্তত ৬০ জেলায় বইছে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। তবে, সারা দেশকে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে পুরো সপ্তাহ। আবহাওয়া অফিস জানায়, তাপমাত্রার পারদ প্রতিদিনই ছাপিয়ে যাচ্ছে আগের দিনের রেকর্ড। আজ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে, গরম অনুভূত হচ্ছে আরো বেশি। এ অবস্থা থাকবে আরো দুয়েকদিন। তাপমাত্রা ৩৮-৩৯.৯ ডিগ্রি হলে সেটাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। সে হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপ্রপ্রবাহ কিছুদিনের মধ্যে তাপপ্রবাহ কমে আসতে পারে। তখন দেশের তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। তবে ১৬ থেকে ১৮ মের মধ্যে তাপপ্রবাহ মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সারাদেশ জুড়ে চলমান এই প্রচন্ড তাপদাহে জনজীবনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রাত্যহিক কর্মকান্ড। অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, নির্মাণ কাজ সবকিছুই চরমভাবে বিঘিœত। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ, রিকশা চালক, পথ শিশু, হকারদের জীবনে নেমে এসেছে প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি।
তীব্র দহন এড়াতে অনেকেই যখন অফিস অথবা বাড়ির নিরাপদ ছায়ায় কর্মরত তখন প্রখর সূর্যের কাঠফাটা রোদে জীবিকার তাগিদে যুদ্ধরত খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী। দুর্বল ও অপুষ্ট শরীরে রৌদ্রদগ্ধ পরিশ্রমে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। জ্বর-ঠান্ডা-কাশি, পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোকের মত জটিল সমস্যার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থরা। এই তাপদাহ মানব শরীরের উপযোগী নয়। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চলমান জীবনের গতিশীলতা স্বাভাবিক রাখতে হবে। ঘরে-বাইরে সবক্ষেত্রেই প্রচুর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, বিশেষ করে ঘরের বাইরে বের হলে। প্রচুর পানি, পানীয়, স্যালাইন, শরবত, তাজা রসালো ফল, বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা, ক্যাপ ও সানগ্লাস ব্যাবহার করতে হবে। একটানা দীর্ঘ সময় রোদে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সূতি, পাতলা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে। অনেক সময় অতিরিক্ত ঘামের জন্য শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ ও খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়। প্রচুর পানি, লেবুর সরবত এবং ফলমূল খেতে হবে। আবাসস্থল পরিচ্ছন্ন ও খোলামেলা রাখতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। যাদের সামর্থ্য আছে ফ্যান ও এসি ব্যবহার করতে পারেন। গরমের তীব্রতায় কেউ হঠাৎ করে জ্ঞান হারালে বা তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী কিছুটা মানবিক হতে পারি। খেটে খাওয়া মানুষদের পারিশ্রমিক সাধ্য অনুযায়ী বাড়িয়ে দিতে পারি। রিকশা চালক বা এই শ্রেনীর জনগোষ্ঠীর ভাড়া কিছুটা বাড়িয়ে দিলে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো না কেউই। তাদের শ্রম ঘণ্টা কিছুটা কমিয়ে ছায়ায় বিশ্রামের সময় বাড়াতে পারি। সামান্য কিছু খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্থা করা যায়। সর্বোপরি তাপদাহের এই সময়ে সতর্কতা, সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট