গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চুরমার

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাহাড়ি ঢল ও জলোচ্ছ্বাসে সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ফটিকছড়ি ও মিরসরাই। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় এই দুই উপজেলার প্রতিটি সেক্টরেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বড়ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানির তোড়ে অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সড়ক, সেতু-কালভার্টের অবস্থা খুবই নাজুক। চট্টগ্রামে অধিক বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ৭০১ কিলোমিটার সড়ক ও ১ হাজার ২০৮ মিটার সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি সড়ক ও সেতু সংস্কার করা হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এখনো অকার্যকর। দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের সংস্কার কাজ না হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোদমে ভেঙ্গে পড়বে।
চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী পূর্বদেশকে বলেন, ‘গ্রামীণ যে সমস্ত সড়ক ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর তথ্য আমরা ঢাকায় পাঠিয়েছি। ঢাকা থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেভাবেই কাজ করবো। তবে যেসব এলাকায় সড়ক ও সেতু সংস্কার দ্রæত জরুরি সেখানে কিছু কাজ করছি। তবে বড় ধরনের সংস্কার কাজের জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে’।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় ৩৬৩টি সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০১ দশমিক ০৭৬ কিলোমিটার। ক্ষতির পরিমাণ ২৮৫ কোটি টাকার অধিক। একইভাবে পাঁচ উপজেলায় ১ হাজার ২০৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে ১৬৮টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার অধিক। সড়ক, সেতু-কালভার্ট মিলিয়ে ৩৩৮ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে এলজিইডি। সড়ক ও সেতুর অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফটিকছড়িতে। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এই উপজেলায় ১৪৩টি সড়ক ও ১৫৪টি সেতু-কালভার্ট পানির নিচে ছিল। পানি নেমে যাওয়ার পর এসব সড়ক ও সেতুর ক্ষতচিহ্ন ভেসে ওঠে। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থায় পথ চলতে মানুষকে এখনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু ফটিকছড়িতেই ১২০ কোটি টাকার সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাটহাজারীতে ২৮টি সড়ক, মিরসরাইয়ে ৫৮টি, রাঙ্গুনিয়ায় ১১টি, রাউজানে ২০টি, স›দ্বীপে তিনটি, সীতাকুন্ডে ৯টি সড়ক ও চারটি সেতু, আনোয়ারায় ১১টি সড়ক, বাঁশখালীতে ১৬টি সড়ক ও দুটি সেতু, বোয়ালখালীতে ২২টি সড়ক ও পাঁচটি সেতু, চন্দনাইশে ১০টি সড়ক ও তিনটি সেতু, পটিয়ায় দুটি সড়ক, সাতকানিয়ায় ১৫টি সড়ক, লোহাগাড়ায় সাতটি সড়ক, কর্ণফুলীতে আটটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সুমন তালুকদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে অধিক বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ৩৬৩ সড়কের ৭০১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬৮টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে ৩৩৮ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে সংগৃহিত তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু হবে’।
ফটিকছড়ির পাইন্দং এলাকার বাসিন্দা শাহেদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘ফটিকছড়িতে অনেক রাস্তাঘাট এখনো চলাচল অযোগ্য। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতু দ্রুত সংস্কার না হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা একদম ভেঙ্গে পড়বে। অনেক এলাকায় যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক সংস্কার করেছে’।