শফকত হোসাইন চাটগামী, ঢাকা থেকে ফিরে
অন্তর্র্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা, খ্যাতিমান আলেম ও শিক্ষাবিদ ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, একটি স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান টার্গেট। তিনি বলেন, আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্বে এসেছি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দিয়ে আমরা বিদায় নেব। গত বুধবার ঢাকার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিজ অফিসকক্ষে দৈনিক পুর্বদেশ প্রতিনিধির সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা থেকে আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি দায়িত্ব পালনের এই সময়ে আমাদের সম্পদ এক টাকাও বাড়বে না। আমরা সম্পদের হিসাব জমা দেব। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেপুটে খাওয়া, এটা কোন দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি শুধু মুসলমানদের উপদেষ্টা নয়; সব ধর্মের মানুষের উপদেষ্টা। অন্য ধর্মের মানুষের জানমাল ইজ্জত রক্ষা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আবহমান কাল থেকেই এদেশে অসাম্প্রদায়িক আবহ বিরাজমান। এটাকে কোনোক্রমেই নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। আমাদের দেশের নানা ধর্মের বৈচিত্র্য রয়েছে। এই ঐতিহ্যকে আমরা লালন করতে চাই, ধারণ করতে চাই এবং বিশ্ববাসীকে আমরা দেখিয়ে দিতে চাই।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় আগে যে সকল দুর্নীতি অনিয়ম হয়েছে আমরা ধীরে ধীরে তা চিহ্নিত করে সংস্কার করার পদক্ষেপ নিয়েছি। হজ্জ্ব ও ওমরায় যারা সিন্ডিকেট করে ধর্মীয় একটি ইবাদত কঠিন করে তুলেছে তাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। হজ্জ্ব এবং ওমরায় খরচ কমানোর চিন্তা-ভাবনাও চলছে।
অন্তর্র্বর্তী সরকারে এবারই প্রথম বারের মতো স্থান পাওয়া একমাত্র আলেম ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, আমরা অনেকেই হজ ওমরা করি, ইবাদত করি। কিন্তু আবার দেশের টাকা পাচার করি, ঘুষ খাই, দুর্নীতি করি। এসব ছাড়তে হবে। মানুষের মন মনন সংস্কারেও ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা একটি অন্যায় ও অপরাধ। কোন ইমানদার এসব করতে পারেন না।
মসজিদের ইমাম, খতিব ও আলেম ওলামাদের সম্মানির বিষয়ে তিনি বলেন, ৫-৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি পরিবার চলতে পারে না। ইমাম মুয়াজ্জিন খতিবসহ আলেম ওলামাদের উপযুক্ত বেতন ও সম্মানি কিভাবে দেয়া যায় সেটি নিয়েও সরকার চিন্তা ভাবনা করছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা একজন আলেম হিসেবে আমাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন। ছাত্রদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দেশ রাহুমুক্ত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন সব ক্ষেত্রে সংস্কার ও পরিবর্তন এনে দেশকে এগিয়ে নেওয়াই হচ্ছে আমাদের মুল টার্গেট।
অন্তর্র্বর্তী সরকারে স্থান পাওয়া ইসলামী চিন্তাবিদ ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার দেওদিঘী ইউনিয়নের মক্কার বাড়ি গ্রামে। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম কোন অন্তর্বর্তী সরকারে একজন আলেম স্থান পেলেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হওয়ায় তার গ্রামের বাড়িসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষ ও আলেম ওলামাদের মধ্যে এখনো আনন্দ ও খুশির আমেজ বিরাজ করছে। বিশেষ করে আলেম ওলামা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা তাঁকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছে। তারা মনে করেন আ ফ ম খালিদ হোসেন একজন যোগ্য ব্যক্তি। একজন ইসলামী চিন্তাবিদ হয়েও তার মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে। তিনি একাধারে লেখক, একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদক, কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ও ধর্মীয় আলোচক। তারা বলেন, এবার দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করার সুযোগ পেলেন তিনি।
তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার মাধ্যমে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন।