গ্রন্থ মূল্যায়ন

7

মুহাম্মদ ওহীদুল আলম

‘পবিত্র কোরআনের বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি’- শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত অতি সাম্প্রতিকতম বই। অনেক মানুষের দৃষ্টিতে কোরআন শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় গ্রন্থ, যা বিশেষ একটি গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জন্য অনুসরণযোগ্য। বাস্তবতা হলো কোরআন সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্য একটি বিশেষ ও সর্বশেষ আসমানী নির্দেশনামা। কোরআনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মানুষ। কোরআনেই বিদৃত হয়েছে আল্লাহ সর্বশেষ অভিপ্রায়। কোরআনের আত্মবিশ্বাস প্রবল, নিখুঁত ও যথাযথ। কোরআন নিজের সত্যতায় দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল। কোরআনই একমাত্র

কিতাব যার স্পর্ধা আছে একথা বলার : আমার মধ্যে সন্দেহের লেশমাত্র নেই।
কোরআনের আবেদন কোন বিশেষ গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, গোত্র, দেশ, বা সময়ে সীমাবদ্ধ নয়। সর্বকালের সকল মানুষের জন্য এর আবেদন উন্মুক্ত ও হৃদয়গ্রাহী। এর শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, ইতিহাস বর্ণনা, উপমা উৎপ্রেক্ষা, দৃষ্টান্ত উপস্থাপন; এর
হুঁশিয়ারি ও সতর্কবাণী; এর আশাজাগানিয়া উদ্বুদ্ধকরণ-সবকিছু এর পাঠককে একাধারে চমকিত, শিহরিত, চঞ্চল, ভীত সন্ত্রস্ত ও আশ্বস্ত করে তোলে।
কোরআন মানুষের জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম আশার বাণী উচ্চারণ করেছে। মানুষের জীবনে অফুরন্ত প্রাণরসের যোগান দিয়েছে। কোরআন জানিয়েছে মানুষের জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই। মানুষের জীবন শুধুমাত্র জন্মের মাধ্যমে শুরু হয়নি, মৃত্যুতে এ জীবনের অবসান ঘটে না। আল্লাহ্্র কাছ থেকে সে এসেছে আল্লাহ কাছেই সে ফিরে যায়। আল্লাহ্ অনাদি, অনন্ত, চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব। তিনি যে ‘রূহ’ মানুষের মাঝে ফুঁরে দিয়েছেন সে রূহের জীবনী শক্তি অনিঃশেষ। মৃত্যুর মাধ্যমে সে অনন্ত জীবনের পানে অভিযাত্রা শুরু করে মাত্র। এ অভিযাত্রায় নানা মন্্জিল আছে, বিশ্রামের স্থান ও সময় আছে কিন্তু এর বিরতি ও সমাপ্তি নেই।
কোরআনে মানুষের জন্য যাবতীয় দৃষ্টান্ত রয়েছে। মানবিক জীবনের এমন কোন দিক নেই যার সম্পর্কে কোরআন স্বীয় বক্তব্য উপস্থাপন করেনি। সে মানুষের গতিকে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তার গন্তব্যকে করেছে সুনিশ্চিত। মানুষ কোরআনের অভিপ্রায়কে গুরুত্ব দিয়ে জীবনকে সার্থক কিংবা অবহেলা করে তাকে বরবাদ করে দিতে পারে। এটা মানুষের স্বাধীনতার বিজয় অথবা বিপর্যয়। কোরআন যেহেতু আরবি ভাষায় অবতীর্ণ তাই এর আবেদন অন্য ভাষাভাষীদের জন্য সুস্পষ্ট করতে হলে স্ব স্ব ভাষায় তার অনুবাদের বিকল্প নেই। কোরআন মানব রচিত কোন বইয়ের মত বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রণীত হয়নি। সময় ও বাস্তবতার প্রয়োজনে এর নির্দেশাবলি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিশ^মানবতার কাছে উন্মোচিত হয়েছে। তাই মানুষের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে ও বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে কী ধরনের আচরণ শোভনীয় ও গ্রহণযোগ্য তা জানা আমাদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।
‘পবিত্র কোরআনের বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি’ বইতে কোরআনের বিধান, বক্তব্য ও নির্দেশাবলি বাংলাভাষী পাঠক/পাঠিকাদের জন্য বিষয়ভিত্তিকভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। যে কোন পাঠক/পাঠিকা স্বীয় প্রয়োজনে এই বইয়ের সূচিপত্র হতে আরদ্ধ বিষয় চয়ন করে নিতে পারবেন সহজেই। সূচিপত্রের সাথে পরিচিত হলেই কোন পাঠক/পাঠিকা কোরআনের আলোকে তাঁর করণীয়-বর্জনীয়, কর্তব্য-অকর্তব্য সহজেই নির্ণয় করতে পারবেন। এতে তার জীবন হয়ে উঠবে শুভ্র সমুজ্জ্বল। প্রকৃতপক্ষে ‘শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) ট্রাস্ট’ এ বইটি প্রকাশ করে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের জন্য বিরাট ইহ্সান করেছে। দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে ঝকঝকে ছাপা (প্রথম প্রকাশ অনুসারে) ২৯৬ পৃষ্ঠার এই বইটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৫০০ টাকা। কোথাও কোথাও সংঘটিত মুদ্রণ ত্রুটি পরবর্তী সংস্করণে সংশোধিত হবে বলে আশা করি। বইটির বহুল প্রচার একান্ত কাম্য।