গোপনে ত্রাণ যাবে মধ্যবিত্ত পরিবারে

128

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় লকডাউনে পুরো দেশ। এসময়ে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে গরীব ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য দুই দফা ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। উপার্জন বন্ধ থাকায় বেসামাল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন মধ্যবিত্তরা। সরকার বিশেষ বিবেচনায় এবার মধ্যবিত্তদের ত্রাণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের পৃথক তালিকা প্রণয়ন করতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘এতদিন নিম্নবিত্তরা ত্রাণ পেয়েছেন। এবার যারা লজ্জায় ত্রাণ নিতে পারছেন না আবার কষ্টে দিনযাপন করছেন তাদের আমরা পৃথক তালিকা প্রস্তুত করতে বলেছি। সরকারের যে বরাদ্দ আছে সেখান থেকেই নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও ত্রাণ পাবেন। এজন্য আমরা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নাম্বারে ফোন দিলেই ত্রাণ পৌঁছে যাবে। বিত্তবানরা যে ত্রাণ বিতরণ করছেন সেগুলো আমাদের সাথে সমন্বয় হওয়া উচিত। এগুলো সমন্বয় হলেই একবার যারা ত্রাণ পেয়েছেন তারা বারবার ত্রাণ পাবে না।’
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, লকডাউনের কারণে কর্মহীন হওয়া মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ ১৫টি উপজেলায় ১৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। পরবর্তীতে আবারো লকডাউনের ছুটি বাড়ানোয় দ্বিতীয় ধাপে আবারো সিটি কর্পোরেশনসহ ১৫টি উপজেলায় ১৭০ মেট্রিক টন চাল উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, যে সকল কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে খাদ্য সমস্যায় আছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রাণ দিতে হবে। এরমধ্যে ভিক্ষুক, ভবঘুরে, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানগাড়ি চালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, কৃষিশ্রমিক যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে সংসার চালায় তাদের তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এ তালিকা ধরেই প্রথমদিকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনা পেয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় মধ্যবিত্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে আমরা মধ্যবিত্তদের পৃথক তালিকা প্রণয়নে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বলেছি। এ তালিকা দ্রæত প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসনে পাঠানো হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী পূর্বদেশকে বলেন, ‘যারা লাইনে দাঁড়িয়ে লজ্জাবোধ করেন, ত্রাণ নিতে সংকোচবোধ করেন তাদের আলাদা তালিকা তৈরি করতে চিঠি দিয়েছি। এ ধরনের কতজন আছেন এবং সাধারণ শ্রমজীবী কতজন আছেন সে তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। উপজেলা থেকে মধ্যবিত্তদের তালিকা চেয়েছি। ইতোমধ্যে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেখান থেকেই তাদের ত্রাণ দেয়া হবে। এরপরেও কোন সরকারি বরাদ্দ আসলে সেভাবেই ত্রাণ বিতরণ করা হবে।’
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু :
ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত দুই শ্রেণির মানুষের ত্রাণ বিতরণে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দুটি ফোন নাম্বার দেয়া হয়েছে। যে নাম্বারগুলোতে ফোন করলেই গোপনে বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে ত্রাণ। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নাম্বার : ০১৮২১৬৪০৯৫৩/০৩১-৬১১৫৪৫।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকেও মধ্যবিত্তদের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যারা কাজকর্ম বন্ধ হওয়ায় কষ্টে আছেন আবার লোকলজ্জায় ত্রাণ নিতে পারছেন না তাদের জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পুলিশের হটলাইন নাম্বারে বা সংশ্লিষ্ট জোনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিলেই গোপনে বাড়িতে পৌঁছে যাবে ত্রাণ।