গুমাই বিলে বকের ঝাঁক!

1

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী রাঙ্গুনিয়া শষ্য ভান্ডারে চলছে ইরি আমন ধান চাষের জোর প্রস্তুতি। বিলে সেচের পানি দিতে কৃষকের বিরামহীন ব্যস্ততা দেখা গেছে। আঁকা-বাঁকা মেঠো রাস্তা ধরে চলতেই বিলের দু’পাশে কোথাও বিলভর্তি পানি, কোথাও শুকনো চর চোখে পড়ে। কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা ব্যস্ত রোপা ধানের চারা রোপণে। কোথাও আবার চাষাবাদের জন্য মাটি খনন করছেন কেউ কেউ।
এমন চিত্রের মাঝে চোখে পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বকের মেলা। দূর থেকে দেখে কবুতরের দল মনে হলেও আদতে সেগুলো সাদা বক বলে নিশ্চিত হওয়া যায় একটু কাছে গেলেই। গুমাই বিলটি যেন বকের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিলে খাবারের সন্ধানে ছুটে আসে হাজার হাজার বক পাখি। যতদূর দৃষ্টিসীমা ঘিরে ফেলছে এক ঝাঁক সাদা বক। আবার কখনও চোখের নিমিষে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে দৃষ্টির সীমানার বাইরে। এই যেন এক অপূর্ব দৃশ্য!
চট্টগ্রামের শস্যভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের আধুরপাড়া অংশে গুমাই বিলে গেলে এই দৃশ্য দেখা যায়। কাছে যেতেই উড়ে যাচ্ছে এসব দলবদ্ধ বক। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য না দেখলে বোঝা যাবে না। প্রতিবছর ইরি এবং আমন ধানের মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিলে পানি সেচ দেয়ার স্থানে খাবারের জন্য বিচরণ করতে আসে এসব বক।
স্থানীয়দের মতে, গেল বছরও এতো বকের দেখা মেলেনি। কেউ কেউ পাখি শিকারের চেষ্টা করলেও স্থানীয়দের প্রতিরোধে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে।
চন্দ্রঘোনার পাঠান গাড়া গ্রামের কৃষক মো. নুরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, গুমাই বিলটি একসময় ঝিল ছিল। একসময় এই বিল জুড়ে ছিল মাছ আর মাছ। আর নানা প্রজাতির পাখ-পাখালিতে ভরপুর। এখন এগুলো শুধুই স্মৃতি।
চন্দ্রঘোনা ছুফি পাড়া গ্রামের মো. লোকমান (৪০) বলেন, চাষাবাদের জন্য বিলে পানি দেয়ার পর সাদা বক পোকা-মাকড় খেতে ছুটে আসে। স্থানীয় ভাষায় এসব বক পাখিকে ‘ধলা বোঘা’ বলে।
উপজেলা সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দ্বীন মোহাম্মদ জানান, বাংলাদেশে ১৮ প্রজাতির বক পাখি রয়েছে। এসব পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও কৃষি উৎপাদনে ভ‚মিকা রাখছে। মাছ ছাড়াও জলজ পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উপকার করে থাকে বক পাখি। ওদের খাদ্যাভাব ও নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। প্রকৃতি রক্ষা করতে এসব পাখিকে রক্ষা করতে হবে।
রাঙ্গুনিয়ার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, বিলে পানি পড়ার সাথে সাথে সাদা বক দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে। বকের ছড়াছড়ি এ সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য পাখি প্রেমিকরা ভীড় করছেন প্রতিদিনই।
রাঙ্গুনিয়া কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, চলতি আমন চাষে জমি তৈরী করার সময় সাদা বক দলে দলে পোকা মাকড় খাওয়ার জন্য এ বিল থেকে অপর বিলে লাফা লাফি করে। এদের সংরক্ষণ করতে হবে। নিরাপত্তা দিতে হবে। এটি চাষাবাদের জন্য খুবই উপকারী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অবৈধভাবে পাখি শিকার করলে সাজার বিধান রয়েছে। যারা আইন অমান্য করে পাখি শিকার করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাদা বক আমাদের এলাকায় অতিথি হয়ে আসে। তাদের শিকার করা যাবে না।