গাজায় ৫৪ জনকে হত্যার পর আরও তীব্র হামলার হুমকি নেতানিয়াহুর

2

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫৪ জন নিহত হয়েছেন বলে সোমবার জানিয়েছে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির উদ্ধারকারীরা। এর মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা ‘জীবিত এবং মৃত’ সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে হামলা আরও জোরদার করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের ৭০ দিনের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যেই এ মন্তব্য করলেন নেতানিয়াহু। ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ১০ ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগার থেকে আরও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার ছিল।
আল-আরাবিয়ান পত্রিকা লিখেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় অভিযান আরও জোরদার করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের কয়েক মাস ধরে চলা অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডটিতে তীব্র খাদ্য ও ওষুধের সংকটের মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ত্রাণ প্রবেশ করতে দিয়েছে ইহুদি রাষ্ট্রটি আর এ নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছে।এর মধ্যেই জিম্মিদের মুক্ত করার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, “আজ না পারলে কাল, কাল না পারলে পরশু। আমরা থামবো না। আমরা সবাইকে ফিরিয়ে আনব, জীবিতদের এবং মৃতদের।”
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে চালানো হামলার সময় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা দেশটি থেকে ২৫১ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে রাখে। তাদের মধ্যে ৫৭ জন এখনো গাজায় জিম্মি হিসেবে আছেন। তবে তাদের মধ্যে ৩৪ জনের ইতোমধ্যে মৃত্যু হয়েছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। সোমবার হামাস জানিয়েছিল, তারা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পাঠানো মার্কিন দূতের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। কিন্তু পরে মার্কিন দূত উইটকফের একজ মুখপাত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা অস্বীকার করেন।আর মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওসকে উইটকফ বলেন, “হামাসের যা কিছু আমি দেখেছি তা হতাশাজনক ও পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।”সোমবার ভোরে গাজা সিটির দারাজ এলাকার ফাহমি আল-জারজাউই স্কুলে বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত হন। আহতদের অনেকেই শিশু বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা সেখানে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের একটি ‘কমান্ড সেন্টার’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। হামাস ওই ভবনকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করছিল এবং সাধারণ মানুষকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছিল।একই রাতে গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৯ জন নিহত হয় বলে জানান আল-আহলি হাসপাতালের পরিচালক ফাদেল আল-নাঈম।ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা কোগাট জানিয়েছে, সোমবার ১৭০টি ট্রাক গাজায় খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে প্রবেশ করেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এখনো তাদের একটি ট্রাকও গাজায় ঢুকতে পারেনি।
“গত ১১ সপ্তাহে গাজায় কোনো মেডিকেল সহায়তা পৌঁছায়নি। পরিস্থিতি ভয়াবহ,” বলেন ডব্লিউএইচও-র আঞ্চলিক পরিচালক হানান বালখি। অন্যদিকে, মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তারা অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে খাদ্য বিতরণ শুরু করেছে।
প্রায় দেড় বছর ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর ভূখÐটিতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।