গাজায় ত্রাণকেন্দ্রে ফের ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২৭ ফিলিস্তিনি

2

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। মঙ্গলবারের এ ঘটনায় জাতিসংঘ কঠোর নিন্দা জানিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহবান জানিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। রাফাহ এলাকায় পরপর তিন দিন ধরেই এমন প্রাণহানির খবর আসছে। রবিবার ৩১ জন ও সোমবার আরও তিনজন নিহত হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, কিছু ব্যক্তি নির্ধারিত পথ এড়িয়ে সেনা অবস্থানের দিকে এগিয়ে গেলে গুলি চালানো হয়। বিষয়টি তদন্তাধীন বলেও জানিয়েছে তারা। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েল জানিয়েছিল, গাজার উত্তরে হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের তিন সেনা নিহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৮৪ জনকে রাফাহর রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ১৯ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং আরও ৮ জন পরে মারা যান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, আহত ব্যক্তিদের কেউ কেউ গাধার গাড়িতে করে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। পরে তাদের স্ট্রেচারে বা অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক বলেন, গাজায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করা যুদ্ধাপরাধের শামিল। অসহায় মানুষের ওপর হামলা চূড়ান্ত অমানবিক। তিনি আরও বলেন, নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন সম্প্রতি তাদের প্রথম ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থা একে মানবিক মানদন্ড লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনা করছে। ইসরায়েল-সমর্থিত এই বেসরকারি গোষ্ঠী জানিয়েছে, মঙ্গলবার তারা ২১ ট্রাক খাদ্য বিতরণ করেছে এবং সহিংসতার ঘটনাটি তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরে ঘটেছে।
এক ফিলিস্তিনি বলেন, ত্রাণ বিতরণে কোনও তদারকি নেই, কোনও পরিচয় যাচাই নেই, মানুষ শুধু খাবারের জন্য ধাক্কাধাক্কি করছে। এটা একেবারে বিশৃঙ্খল ও অপমানজনক পরিস্থিতি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, রবিবারের প্রাণহানির অভিযোগ হামাসের বানানো গল্প। মঙ্গলবারের ঘটনায়ও তারা জানিয়েছে, নির্ধারিত পথ এড়িয়ে সেনাদের দিকে এগোনো কয়েকজনকে লক্ষ্য করে প্রথমে সতর্ক গুলি ছোড়া হয়, পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও গুলি চালানো হয়। সোমবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসের কিছু এলাকায় নতুন করে সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ জারি করে। তবে জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার কোথাও এখন নিরাপদ নয়।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল নাসের হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা গুরুতর বিপদের মুখে ফেলবে বহু রোগীকে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, এ পর্যন্ত সেখানে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতি থেমে আছে। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার দাবি করছে।