গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে উত্তাল চট্টগ্রাম

2

এম এ হোসাইন

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলিল বর্বর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশের মাধ্যমে জনতা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ ইসরাইলি পণ্য বয়কটের আহবান জানিয়েছে। এতে নতুন করে ‘ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক’ জোরালো হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। হাজার হাজার মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। তারা ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং ফিলিস্তিনের জন্য সংহতি প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভকারীরা ‘ইসরায়েলি পণ্য, বয়কট বয়কট’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘বিশ্বের মুসলিম, এক হও এক হও’, ‘ফ্রম দ্যা রিভার টু দ্যা সি’, ‘প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন? জাতিসংঘ জবাব দে’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ‘বিশ্বের মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘বদরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘গাজায় হামলা কেন? জবাব চাই জবাব চাই’, ‘আল জিহাদ আল জিহাদ সাবিলুনা সাবিলুনা’ এই স্লোগানে চট্টগ্রামের রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতারা। বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনে রক্ত ঝরছে, আমরা কি চুপ করে থাকব? ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করাই এখন প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার।
বাদ জোহর আন্দরকিল্লাহ শাহী মসজিদ থেকে জামায়াতে ইসলামির বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের শক্তি সঞ্চয় করে ইউরোপ আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সমস্ত মুসলমান ভাই ভাই এবং একটি দেহের মত। দেহের একটি অঙ্গ যদি ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে শারীরিক ক্রিয়া যেমন ব্যাহত হয়, ঠিক তেমনি একজন মুসলিম ভালো না থাকলে অন্যরাও ভালো থাকতে পারে না। মুসলিম হিসেবে আমাদের লজ্জা অনুভব হয়, আমরা এখনো এই অসহ্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে পারছি না। আমরা ভুলে যেতে বসেছি মুসলমানদের সেই পুরোনো ঐতিহ্য।
ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। অনেক দোকানদার বা ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি না করার ঘোষণা দিয়েছেন। নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, কাজির দেউড়িসহ বিভিন্ন এলাকার দোকানদাররা ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি করা হয় না দোকানে এমন স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছেন। ক্রেতারাও বয়কট করছেন ইসরায়েলি পণ্য।
চান্দগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী মনির আহমেদ বলেন, আমার দোকানে কোনো ইসরায়েলি পণ্য থাকবে না। আমরা মানবতার পক্ষে, ফিলিস্তিনের পক্ষে।
তরুণ প্রজন্ম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে ইসরাইলি পণ্য বয়কটের ডাক দিচ্ছে। বিভিন্ন পোস্টে ইসরাইলি মালিকানাধীন ও তাদের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানির তালিকা শেয়ার করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, আমরা ইসরায়েলি পণ্য কিনব না, কারণ এতে আমাদের অর্থ যায় ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্য।
জামালখানস্থ প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেয়া খায়রুল ইসলাম বলেন, ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশে নতুন নয়। ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের এই আন্দোলন। এবারের বিক্ষোভের ব্যাপকতা অনেক বেশি। জনগণ যদি দীর্ঘমেয়াদে বয়কট কার্যকর রাখে, তবে এটি বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠাবে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। আমাদের প্রতিরোধ হলো আমরা তাদের পণ্য কিনব না, তাদের অর্থনীতি ধ্বংস করব।