এ.বি.এম. আমিনুর রশীদ
গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী শাহ সুফি মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ [১৮২৬-১৯০৬] মাইজভান্ডারী তরিকার প্রবর্তক। এ তরিকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শান্তি, ঐক্য, সহিষ্ণু, সহাবস্থান, উদারতা ও মানুষের মুক্তির প্রত্যয়ে। মানুষের ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির ঠিকানা মাইজভান্ডার দরবার শরিফ ঐক্যের নীড়। কারণ, গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর চিন্তা, চেতনা একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে নিমগ্ন নয়। তাঁর চিন্তা গোটা বিশ্বকে নিয়ে। তিনি যদিও তাসাউফধারা মাইজভান্ডারী তরিকার প্রবর্তক; এর পরেও তিনি অন্যান্য তরিকা, দরবারের প্রতি কোনো বিদ্বেষ প্রকাশ করেননি। ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর আক্বিদায় বিশ্বাসী সকল তরিকার মাঝে ঐক্য, সম্প্রীতি, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সহিষ্ণু ও উদারতার বাণী নিয়ে মাইজভান্ডারী তরিকার আবির্ভাব। যার ফলে বাংলাদেশের মাইজভান্ডার শরিফ বর্তমানে বিশ্ব ব্হ্মােন্ডা সুপরিচিত আধ্যাত্মিক কেন্দ্র।
সুন্নিয়তের সকল আলেম-উলামা-মাশায়েখ মাইজভান্ডার দরবার শরিফের বরকত নিয়ে সুন্নিয়তের মাঠে-ময়দানে কাজ করে চলছেন। অতীত থেকে বর্তমান হক্কানি সুন্নি আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ মাইজভান্ডার দরবার ও গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীকে সুন্নিয়তের প্রাণপুরুষ জানেন ও মানেন। আর একটি গোষ্ঠি সুন্নিয়তের বিজয় নিশানকে চিরস্থায়ীভাবে পদাবনত করে রাখার কৌশল হিসেবে মাইজভান্ডারী তরিকার সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে মুছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, আঘাত করেছিল মাইজভান্ডারী তরিকা আর সংস্কৃতির ওপর। এবং সেখানেই তারা ভুল করেছিল। যাদের উত্তরসূরির কয়েকজন এখনও বিদ্যমান।
সুন্নি মুসলমান ও সুন্নিয়তের প্রাণকেন্দ্র মাইজভান্ডার, গাউছে মাইজভান্ডারীর আদর্শ ও তরিকাকে কখনো ভুলতে পারেনা। আর পারবেও বা কী করে? সুন্নিয়তের আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য তো গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীসহ সকল হক তরিকার মাশায়েখগণ। যেটা সুন্নিয়ত তথা উম্মতে আহমদির ডি.এন এর মধ্যে রয়ে গেছে। ইমামে আহলে সুন্নাত, শেরে বাংলা (১৯০৬-১৯৬৯) কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত কিসের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ দেওয়ানে আজিজ শরিফে বলেন, ‘গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর অস্তিত্ব থেকে সমগ্র বাংলাদেশ আলোকিত হয়েছে। এ অধম ‘আজিজ’ কীভাবে তাঁর প্রশংসা-স্তুতি গাইবো’?
সুন্নিয়তের গুরুত্বপূর্ণ ইমামতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব ইমাম শেরে বাংলা বাংলার জমিনে সুন্নিয়তের কার্যক্রমসহ সকল কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর আলোয় আলোকপাত করতে হবে- সুন্নি জনতাকে এ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নিজে একজন হক্কানি পীর হওয়া সত্ত্বেও তাঁর নিকট কেউ বায়াত হতে আসলে; তিনি লোকদেরকে অছিয়ে গাউছুল আজম, আল্লামা সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী [১৮৯৩Ñ১৯৮২খ্রি.]’র নিকট মাইজভান্ডারী তরিকায় বাইয়াত গ্রহণ করতে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি জানতেন যে, সুন্নিয়তের ঐক্যের মোহনা ও প্রাণকেন্দ্র হলো মাইজভান্ডার দরবার শরিফ। হুজুর গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী শুধুমাত্র বাংলাদেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ নন। বরং তিনি নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল উম্মতের সঠিক পথের দিশারী, হিদায়তের আলোকবর্তিকা ও বিশ্বমানবতার মহান গাউছুল আজম। ইমাম শেরে বাংলা বলেন- ‘ওই মাইজভান্ডারী বাদশা হলেন গাউছুল আজম। তিনি আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উম্মতগণের প্রদীপ।’
ইমাম শেরে বাংলা বলতেন, সুন্নিয়ত পীরভিত্তিক নয়; বরং আক্বিদা ভিত্তিক। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদার ভিত্তিতে বাংলার সকল সুন্নি মুসলমান, সকল দরবারের মুরিদ, ভক্ত, আশেক, পীর-মাশায়েখ ও আপামর জনতার মিলিত সভ্যতা ও সংস্কৃতি হলো মাইজভান্ডার দরবার শরিফ। শুধু মুসলিম নয়, বরং সকল ধর্মের সকল বর্ণের মানুষের মিলিত সভ্যতা ও সংস্কৃতিও বটে মাইজভান্ডার দরবার শরিফ। তাতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও বিভিন্ন গোত্রের আনাগোনাও আছে। এ দরবারের দরজা সকলের জন্যে চির উন্মুক্ত। বর্তমানের মাইজভান্ডার বিশ্ববিখ্যাত তাসাউফকেন্দ্র ও বিশ্বশান্তির প্রতীক। যেখানে কোন বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ির সুযোগ নেই।
হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী বলেন, “তোমরা ফাছাদ ও বাহাছ করিও না। আপন হালতে থাকিয়া যাও। তাহারা তোমাদের সঙ্গে মিলিয়া যাইবে।” তাঁর এই চিন্তা খুবই বাস্তব এবং সুন্দর। আমরা সুন্নি মুসলমান। আমরা একেকজন একেক দরবার, তরিকা ও পীরের অনুসারী। দরবার ও তরিকাগুলোর ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য, আচার, আমল, সংস্কৃতি ও অনুষ্ঠান রয়েছে। তাতে সুন্নি মুসলমানদের জীবনে ভিন্ন ভিন্ন ছাপ রয়েছে। তবে সুন্নিয়ত প্রতিষ্ঠায় সকল দরবার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগণের অবদান এবং অংশগ্রহণ রয়েছে। এতে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে, মঞ্জিলে-মঞ্জিলে, প্রতিষ্ঠানে-প্রতিষ্ঠানে, দরবারে-দরবারে সব বিষয়ে এক মন-মানসিকতা, সংস্কৃতি, বৈশিষ্ট্য এক রকমের হবে; তা কল্পনাও করা যায় না। স্থানিকতা, বৈশিষ্ট্য এবং আমল বড় উপাদান হিসেবে তো কাজ করে চলছেই। এ পার্থক্য আমাদের বাহ্যিক। এতে আমাদের মাঝে পার্থক্য থাকলেও আমাদের সুন্নিয়ত সমন্বয়ের; বিভেদের নয়। তাই একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে থাকা, ফ্যাসাদ করা, তর্ক-বিতর্ক করে আপনজনকে দূরে সরিয়ে দেয়া কিংবা দূরে সরে যাওয়া মাইজভান্ডারী হযরাতে কেরাম পছন্দ করেন না। সকলের সাথে থেকে এক হয়ে আমরা যেন আপন আপন অবস্থা থেকে সুন্নিয়তের খিদমত করি। বৃহৎ স্বার্থে মিলেমিশে কাজ করি; তার শিক্ষা দেয় মাইজভান্ডারী দর্শন।
আমরা যদি কথায় কথায় বিভেদ সৃষ্টি করি তা হবেনা। একে অপরকে এড়িয়ে চলা, আঘাত করা, অপমান করা, অপদস্ত করা মোটেই শুভকর নয়। আমাদের সুন্নিয়ত সমন্বয়ের, বিভেদের নয়। আমরা যেন বাদ দেওয়ার জন্যে উঠেপড়ে না লাগি, আমরা যেন সবাইকে নিয়ে এক হয়ে চলি। আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্যের সূত্র খুঁজি। মিলনের মধ্য দিয়ে খুঁজে চলি সামনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রণা। আর আমরা যেন সব ধরনের বৈষম্যকে বিলোপ করতে পারি। ফেতনা-ফ্যাসাদ ও অনৈক্যমুক্ত উম্মতে মুহাম্মদি গড়াই গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর চেতনা। বহুধাবিভক্ত সুন্নিয়তকে ঐক্যের সূত্রে গাঁথতে দরবার ও সুন্নি সংগঠনগুলোকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদাকে ভিত্তি করে মাইজভান্ডারী দর্শনকে প্রাণভোমরা করে তোলা যায়।
১০ মাঘ, হুযুর গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর পবিত্র ওরশ শরিফের দিন। মহান এই দিনে সুন্নিজনতার বিভেদ ও সমন্বয়ের কথাগুলো মনে পড়ে। মাইজভান্ডার দরবার শরিফে আগত ভক্ত-মুরিদ ও আপামর সুন্নি জনতার ভক্তি, আবেগ ও বিবেকগুলোকে সুন্নিয়তের তরে লাগিয়ে, বাতিলের সাথে জয়লাভ করতে পারি। ১০ মাঘ প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ আশেকের পদভারে মুখরিত হয় সারা বাংলার পথ। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার গ্রামে যাওয়ার জন্যে পথে মানুষ আর মানুষ। সাধারণ মানুষ, আর মিছিলে মিছিলে আশেকগণ মাইজভান্ডারী রাজপথ দখল করে ফেলে। সকল শ্রেণি, পেশা ও পথ-মতের মানুষ থেকে শুরু করে মাইজভান্ডারী আশেকগণ নিজেকে সপে দেন হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর কদমে। শান্তি ও মুক্তির আশায় সকলেই একত্রিত হয় মাইজভান্ডার দরবার শরিফে। এ যেন সুফিবাদী সুন্নি জনতার ঐক্যের পথ পন্থা। মাইজভান্ডার দরবার আওলাদে রাসূলের দরবার। হাসানি এবং হোসাইনি ধারা এখানে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ‘চেরাগে উম্মতানে আহমদি’র আলোতে পথ খুঁজতে বাংলাদেশের সকল সুন্নি আলেম-ওলামায়ে কেরামও এই নূরিচরণে একত্রিত হয়। ফয়েজ-বরকত হাসেল করেন। স্তুতি গেয়ে সংগীত পরিবেশন করেন। প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন। কলম দিয়ে লিখেন।
ইমাম শেরে বাংলার পর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সর্বোচ্চ গুরুদায়িত্ব আল্লামা কাযী মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী যিনি সুদীর্ঘ ৫২ বছর (১৯৬৯-২০২০খ্রি.) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও আজীবন মাইজভান্ডার দরবার শরিফে গিয়ে ফয়েজ-বরকত হাসেল করেছেন। প্রতিটি মাহফিলে, মুনাজাতে মাইজভান্ডার দরবারের হযরাতে কেরামগণের নাম নিতেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে। তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে বর্তমান সাজ্জাদানশীনে দরবারে গাউছুল আজম, শাহসুফি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারীর ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক পবিত্র জশ্নে ঈদে মিলাদুন্নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে প্রধান অতিথির ভাষণে মাইজভান্ডার দরবার শরিফ ও বর্তমান পীর কেবলা সম্পর্কে সুন্নি জনতাকে সর্বশেষ ম্যাসেজ দিয়ে গেছেন ইমামে আহলে সুন্নাত।
শেরে মিল্লাত, আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ওবাইদুল হক নঈমি যিনি বাতিল ফিরকা, ভন্ডদরবার, ভন্ডপীর ও ভন্ডসিলসিলার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনিও ইন্তিকালের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত মাইজভান্ডার দরবার শরিফ, তরিকা ও শাজরার উত্তরাধিকারী সাজ্জাদানশীন ও নায়েবে সাজ্জাদানশীনের ব্যাপারে সুন্নিজনতাকে অবগত করে গেছেন।
দেখি, মাইজভান্ডারীর গুণগান বড় বড় আলেম-ওলামার আলোচনাতে। বাংলাদেশের হক্ব দরবারসমূহ, সুন্নি মাদ্রাসায়, মসজিদ, খানকা ও ধর্মীয় মাহফিল, মজলিশে। সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, আলেম, পীর, ছোট, বড়, তরুণ, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমসহ সর্বস্তরে গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর শানে গাইছেন ‘সৈয়্যদুল আউলিয়া কেবলা গাউছে মাইজভান্ডার, তাজেদারে হাক্বিকত পে-লাখো সালাম’। সেই সালামির কন্ঠস্বরে এবং সুরে মিশে আছে মাইজভান্ডারী শান ও সুন্নিয়তের প্রাণ ও ঐক্যের ঘ্রাণ। আমরা গবেষণা করে তা দেখতে পারি।
মাইজভান্ডারী তরিকার গ্রহণযোগ্যতা ও শ্রদ্ধা সকলের নিকট ছিলো, আছে, থাকবে। তবে বিশ্ববিখ্যাত এ তরিকার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ইতিহাসও রয়েছে। বাংলাদেশে পীরের রূপ নিয়ে অযোগ্য, ভন্ডপীর বাড়ছে। তাদের কেউ কেউ ভাইরাল হওয়ার চিন্তায় অপক্ক ও অসংগত কথার ফেনা তুলছে। ফেসবুকসহ অনলাইনে কিছু লোক তা প্রচারও করছে। কিন্তু মাইজভান্ডার বিদ্বেষীরা অতীত থেকে এ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। আশাকরি পারবেও না। হযরত কেবলা প্রবর্তিত এ বিশ্বময় তরিকায় কারো বিরোধীতার জন্যে বিরোধিতা করে না। আবার কারো অহেতুক সমালোচনাকে গুরুত্বও দেয় না।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফ সকলকে আপন করে নেয়। খোদাপথের সন্ধান দেয়। সুন্নিজনতা এ দরবারে নির্বিশেষে একত্রিত হয়। সুন্নিয়তের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বরা এ দরবারে এসে মিলিত হন। ইমাম শেরে বাংলা, ইমাম হাশেমি, শেরে মিল্লাতসহ সর্ব স্তরের সুন্নিজনতার ঐক্যের বাতিঘর; যেখানে গিয়ে সকলেই আশ্রয় নিয়েছেন, যেখান থেকে আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে সুন্নি জনতাকে ঐক্য করেছেন। বাতিল ফিরকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়লাভ করেছেন। সেই সুন্নিয়তের প্রাণকেন্দ্র হাতেগুণা গুটিকয়েক জ্ঞান, বয়স ও অভিজ্ঞতায় নাবালেক লোকের সমালোচনায় পাত্তা দিবে না। কিন্তু হিংসুকরা হিংসা করবে। নিন্দুকরা নিন্দা করবে। তাই বলে সুন্নি মুসলমান সুন্নিয়তের প্রাণকেন্দ্র মাইজভাÐার দরবার শরিফের বিরোধীতা করে সুন্নি ঐক্যের মোহনায় আঘাত করবে? আকাবেরে আহলে সুন্নাতগণ মাইজভাÐার দরবার শরিফ ও তরিকা সম্পর্কে যা লিখেছেন, বলেছেন এবং জীবনের শেষকাল পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন, সেই বিষয়গুলো ভুলে যাবো? সেই আদর্শ থেকে সরে যাবো?
১০ মাঘ ওরশ শরিফে সুন্নিয়তের ঐক্যের মন্ত্রটাই বারবার মনে করিয়ে দেয়। আমরা কি সুন্নিয়তের প্রচার-প্রসারে মাইজভান্ডারী সহাবস্থান ও শান্তির কথা আমাদের কর্মসূচিতে রেখেছি? আজকে মহান ১০ মাঘ গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর ওরশ শরিফের দিনে সুন্নি ঐক্যের মানসে আমরা কি ওরশ শরিফ উদযাপনের উৎসবের মধ্যে কোনো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি? আমরা কি সুন্নিয়তের প্রসার ও প্রচারে গাউছে মাইজভান্ডারীর আদর্শ সঙ্গী করেছি? সুন্নিয়তের চাকা যারা ঘোরায়েছেন, ঘোরাচ্ছেন সুন্নিয়ত তো তাদের কাছে সকাল-সন্ধ্যা ঋণী। বাংলাদেশে সুন্নিয়তের হৃদপিন্ড বলতে যদি কিছু থেকে থাকে, ঐক্যের মঞ্চ বলতে কিছু থেকে থাকে, তাহলো মাইজভান্ডার দরবার শরিফ, মাইজভান্ডারী তরিকা। সকল লোকের মিলনমেলা মাইজভান্ডার দরবার শরিফ, সকলের সহাবস্থান নীতিই মাইজভান্ডারীর চেতনা। তাই সুন্নিয়তের ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে হযরত ইমাম শেরে বাংলার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলবো, ‘আমি কাদেরি, ওই গাউছুল আজমের স্লোগানই দিবো। আমি কুতুবে আলম শাহ আহমদ উল্লাহ সম্পর্কে একথা বলবো।’
লেখক : ফকিহ, চট্টগ্রাম নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
এমফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, রিসার্চ ফেলো, দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট