গর্জে উঠুক বিশ্ব বিবেক

2

ধ্বংসস্তূপ গাজায় আবারও ইহুদিবাদী ইসলায়েলের বর্বর হামলা। ১৮ মার্চ ভোর রাতে বিমান হামলায় ৪শতাধিক অসামরিক নারী ও শিশুকে হত্যা করেছে নেতানিয়াহুর ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলায় বিশ্ব সম্প্রদায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে গাজায় আবারও ইসরায়েল হামলা ও নারী ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যার নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে গুতেরেস আরও বলেন, ‘আমি যুদ্ধবিরতি মেনে চলার, নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং আটক থাকা অবশিষ্ট বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার জন্য জোরালোভাবে আবেদন করছি।’ প্রসঙ্গত, যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোরে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে সবশেষ ৪০৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া ভয়াবহ এ হামলায় আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। হতাহতের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলের এ হামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস। মঙ্গলবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা’রের সঙ্গে এক কথোপকথনে তিনি এ কথা বলেন। বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৯ জানুয়ারি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির চুক্তির করে ইসরাইল। গত ১ মার্চ সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় না গিয়ে গাজায় আবারও অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এরই জেরে মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরাইলের বোমা হামলায় দুদিনে প্রায় সাড়ে ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েকশ জন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘এই হামলা কেবল শুরু। হামাসের সঙ্গে ভবিষ্যতে আলোচনা কেবল হামলার মাধ্যমেই হবে।’ ইহুদিবাদী এ নির্দয় ব্যক্তিটির কারণে মধ্যপ্রাচ্যে জুড়ে অস্তিরতা দিনের পর দিন তীব্র হচ্ছে। সূত্র জানায়, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ সংক্ষুব্ধ। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর এ আক্রমণের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেন, তিনি মঙ্গলবার এক কথোপকথনে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সারকে জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘আপনি কেন এটি করছেন?’ কালাস জানান, তিনি এই হামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বার্তা দিয়েছেন। এতে তিনি বিশেষভাবে ‘বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির’ কথা উল্লেখ করেছেন। কালাস আরও জানান, আগামী রোববার তিনি মিসরে যাবেন এবং ‘আরব কুইন্ট’-এর সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। যে আলোচনায় অংশ নেবে মিসর, জর্ডান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। একই সঙ্গে ইসরাইলের ওপর ক‚টনৈতিক চাপ বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। সেই থেকে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬২,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ১১২,০০০ হাজারের বেশি। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, অবরুদ্ধ ও আক্রান্ত গাজাবাসীকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে দখলদার ইসরায়েল। এ পর্যন্ত সব ঘটনা থেকে সাক্ষ্য মিলছে, এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। জাতিসংঘের বিধান কিংবা আন্তর্জাতিক আইন, কোনো কিছুরই পরোয়া করছে না দখলদার ইসরায়েল। আগেও কখনো করেনি। ফিলিস্তিনিদের স্বভূমি থেকে উৎখাত করে ইহুদি বসতি নির্মাণ, ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা তাদের নিত্যদিনের কর্মকান্ড। দখলদার ইসরায়েলকে এজন্য বিশ্বের মোড়লরা মদদ দেয়। এটিই হচ্ছে মানবতা ও মানবাধিকারের পরিহাস। জাতিসংঘের ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার মত আর কেতান শিশু অবশিষ্ট নেই। স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নিই। কী জঘন্যভাবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে-তা এ প্রতিবেদনটিতে স্পষ্ট হয়েছে। গাজার এই পরিস্থিতিতে জরুরি পরিষেবা ও হাসপাতাল সচল রাখতে না পারলে আবারও অসংখ্য নিরীহ মানুষের মৃত্যু হবে। পাশাপাশি জরুরি আগ্রাসী বাহিনীর হামলা বন্ধ করা। গাজার নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণ থামাতে হবে এখনই। এ জন্য মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশসমূহসহ বিশ্বের মানবতাবাদী বিবেকবান সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।