গভীর রাতে মেয়রের ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ ‘

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি হিসেবে গড়তে গভীর রাতেও সারপ্রাইজ ভিজিট করছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গভীর রাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের তদারকি করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গত শনিবার রাতে প্রধান পরিছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব শর্মাকে নিয়ে আরেফিন নগর টিজি পরিদর্শন করেন মেয়র।
এ সময় তিনি বলেন, নগরবাসীর সুবিধার্থে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম রাতে পরিচালিত হচ্ছে, তাই আমি রাতে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম হচ্ছে কি না, নাকি কর্মীরা ফাঁকি দিচ্ছেন, তা দেখতে পরিদর্শন করব। কেউ দায়িত্ব পালনে ফাঁকি দিলে বা ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিম‚লক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেয়র বর্জ্যাগারগুলোর বর্তমান সক্ষমতা যাচাই করেন এবং ভবিষ্যতে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত নেন।
এছাড়া গতকাল রবিবার দুপুরে শিডিউল প্রোগ্রামের বাইরে হঠাৎ সিআরবিতে সড়ক সংস্কার কাজ পরিদর্শন করতে যান মেয়র। এ সময় তিনি চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে সাথে নিয়ে সিআরবি সাত রাস্তা মোড় থেকে হোটেল রেডিসন বøু পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে সড়ক সংস্কার ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেমকে দ্রæত নগরীর সিআরবিসহ ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করার নির্দেশ দেন এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বলেন।

৩ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন :
তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল রবিবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হওয়া প্রকল্প তিনটি হচ্ছে ১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ তলা বিশিষ্ট হালিশহর আলহাজ মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ, ২৬ নং হালিশহর ওয়ার্ডে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ তলা কিচেন মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ এবং ৩৭ নং ওয়ার্ডে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জরিনা মফজল কলেজ সংলগ্ন ২.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক উন্নয়ন কাজ।
এ সময় মেয়র বলেন, আমরা যদি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হই, তাহলে সমাজকে আমরা কিছু দিতে পারবো না। পড়াশোনা করে আজকে আমি ডাক্তার হয়েছি, সব ঠিক আছে। কিন্তু ডাক্তার যখন মানবিক হতে না পারবে, একটা গরীব রোগীকে চিকিৎসা বিনামূল্যে দিতে না পারবে, তখন এ শিক্ষার কোন দাম নেই। একজন শিক্ষক একটা মেধাবী গরীব ছাত্রকে বিনামূল্যে পড়াতে না পাড়লে উনার শিক্ষার কোন দাম নেই। এভাবে প্রতিটি পেশাতে আমাদেরকে মানবিক যদি হতে হয়, আমাদেরকে যদি সামাজিক হতে হয়, আমাদেরকে যদি সমাজের সত্যিকার দায়িত্ব পালন করতে হয়, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
শিক্ষাখাতে দেশ পিছিয়ে গেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, গত ১৬ বছর আমরা দেখেছি শিক্ষার নামে বিভিন্ন ধরনের নৈরাজ্য হয়েছে। চাঁদাবাজি হয়েছে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রী, ভাই-বোনদের বইয়ে বানোয়াট ইতিহাস পড়ানো হয়েছে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা আছেন, মনে রাখবেন, বিগত সরকারের সময় মাদকাশক্তিতে অনেক ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে বিভিন্নভাবে খারাপ ছেলের সংস্পর্শে এসে খারাপ হয়ে গেছে। কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হয়েছে ওই সরকারের আমলে। আপনাদেরকে আমাদের সন্তানদেরকে বাঁচাতে হবে। তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখবেন। তাদের নখ পরিষ্কার আছে কিনা, তাদের চুল ঠিক আছে কিনা, হাইজিন মেন্টেন করছে কি না সব চেক করা আপনাদের দায়িত্ব। তাদেরকে সুস্থ নাগরিক হিসেবে গড়তে হবে আপনাদের।
কিচেন মার্কেটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে মেয়র বলেন, যেহেতু কোন কমিউনিটি সেন্টার বা বড় মার্কেট এই এলাকায় ছিল না, সেহেতু আমরা চমৎকার একটা মার্কেট এই এলাকায় করে দিচ্ছি, যাতে করে এলাকাবাসীর সুবিধা হয়। এ আধুনিক বিল্ডিং এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করবে।
বৃষ্টির পানির ব্যবহারের আহŸান জানিয়ে মেয়র বলেন, রেইনওয়াটার হারভেস্ট সম্বন্ধে আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। রেইনওয়াটার হারভেস্টিং মানে বৃষ্টির পানি যেটা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, সেটাকে আমরা একটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে ধারণ করে এই পানিটা রিসাইক্লিন করে ব্যবহার করতে পারি। পানির কিন্তু সংকট হবে ভবিষ্যতে। এজন্য ওয়াসার পানিকে নষ্ট করবো না। আমরা যত্রতত্র যে পানি নষ্ট করছি, এটা কিন্তু আমাদের জন্য পরবর্তীতে গিয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাই পানি আমাদেরকে সেভ করতে হবে। পানির অপর নাম জীবন। আজকে আমরা হয়তো মনে করছি, পানি তো আছে দেদারসে খরচ করি। একটা স্টেজে পানির অভাব দেখা দিবে। এখন একটা নলক‚প লাগাতে গিয়ে দেখবেন অনেক গভীরে চলে যেতে হচ্ছে। তার অর্থ হচ্ছে এটা হয়তো গুড সাইন না। কাজেই যত নীচে যাবেন, তত মনে করবেন যে ভ‚গর্ভে পানি কমে যাচ্ছে। ভ‚গর্ভে পানি কমে যাওয়া এটা রিস্ক।
মেয়র ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের হাজিরা নেন এবং বিভিন্ন এলাকায় নাগরিকদের কাছে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। এরপর মেয়র নগরীর সিআরবি এলাকার ভাঙা সড়ক মেরামতের কাজ পরিদর্শন করেন এবং প্রকৌশল বিভাগকে দ্রæত নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করার নির্দেশ দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব শর্মা, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ) সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ