‘গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য কাম্য নয়’

61

সম্প্রতি বাজারে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত (পাস্তরিত) দুধের নুমনা পরীক্ষায় ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিচার্স সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। সম্প্রতি দেশের প্রাণিসম্পদ বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় ওই গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান করায় ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ। গবেষণাটি দেশে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সহায়ক হবে বলে দাবি করেছেন তারা। সম্প্রতি পাস্তুরিত দুধের মান ও গবেষণা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে পত্রপত্রিকা ও মিডিয়াতে প্রকাশিত তথ্য ও পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ এরপর এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন দুধের পরীক্ষায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৩ টি প্যারামিটার নির্ধারণ করলেও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) মাত্র ৯টি অনুজীব ও ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষা করে থাকেন। প্রফেসর আ ব ম ফারুক ১৮টি প্যারামিটার অ্যান্টিবায়েটিক, কলিফর্ম, ব্যাকটেরিয়া ও ডিটারজেন্ট পরীক্ষা করেছেন। যাতে চার ধরণের অ্যন্টিবায়েটিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু প্রাণিসম্পদ বিভাগ নমুনা সংগ্রহ ও গবেষণা তথ্য সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নমুনা সব সময় গ্রাহক পর্যায় (বাজার) থেকে সংগ্রহ করার বিধান রয়েছে। কারণ উৎস স্থল হতে নমুনা সংগ্রহ করা হলে নমুনায় প্রকৃত তথ্য বের হয়ে আসবে না। উন্নত দেশগুলিতে ২৩টি প্যারামিটারে দুধের পরীক্ষা করার বিধান থাকলেও দেশের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর সীমাবদ্ধতা ও সক্ষমতা না থাকায় দেশে তা সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও গবেষণা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করলে দেশে মুক্ত চিন্তা, মতপ্রকাশ ও স্বাধীনতা খর্ব হবে মলে মতপ্রকাশ করেন ক্যাব নেতারা।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক, বায়োমেডিকেল রিচার্স সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক নিতান্তই বিবেকের তাড়নায় গবেষণাটি সম্পাদন করেছেন। পাস্তুরিত দুধ নিয়ে যখনই নানা তর্কবিতর্ক হচ্ছে, তখনই প্রফেসর আ ব ম ফারুক এগিয়ে এসেছেন জাতিকে দিক নির্দেশনা দিতে। এ জন্যে তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তিনি তার গবেষণায় পাস্তুরিত তরল দুধের সমস্যাগুলি তুলে ধরার পাশাপাশি তরল দুধ ভালভাবে ফুটিয়ে পান করলে তার ব্যাকটেরিয়া গুলি ধ্বংস হবে বলেও উল্লেখ করেছেন। তার গবেষণায় যে সমস্ত অসঙ্গতি ও দুর্বলতা ফুটে উঠেছে তা প্রাণিসস্পদ বিভাগ, বিএসটিআই ও দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলি তা সংশোধনের দিকে নজর না দিয়ে উল্টো তাকে নানাভাবে হেনস্তা, হয়রানি ও হুমকি প্রদান করে দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির বিষয়কে ভয়াবহ হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণা কার্যসম্পাদনের জন্য বারবার তাগিদ প্রদান করছেন। সে জায়গায় গবেষণা তথ্য জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করায় উল্টো প্রবীণ অধ্যাপকের প্রতি বিরুপ মন্তব্য করা কোনোভাবেই শোভনীয় নয়।
অন্যদিকে হাইকোর্ট যে চার প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে পাস্তুরিত তরল দুধ পরীক্ষার আদেশ দিয়েছেন, সেগুলো হলো জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর-বি) এবং সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এ এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিএসটিআইকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে বাজার থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করে সংগৃহীত নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট, ব্যাকটেরিয়া, কলিফর্ম, অ্যাসিডিটি, স্টাইফলোকাস্টেস ও ফরমালিন আছে কিনা তা পরীক্ষা করে চারটি গবেষণাগারকে আলাদাভাবে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে এটি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান ক্যাব নেতারা।
উল্লেখ্য, বাজারে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোয় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পরীক্ষার ফলাফল গত ২৫ জুন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিচার্স সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। সংবাদ সম্মেলনে তিনি পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলোতেই লেভোফ্লক্সাসিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ছয়টি নমুনায় এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের চারটি নমুনায় ডিটারজেন্ট এবং অপাস্তুরিত দুধের একটি নমুনায় ফরমালিন পাওয়া গেছে বলে জানান এ গবেষক। পাস্তুরিত দুধের ব্র্যান্ডগুলো হলো মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো। পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির কথা জানানোর পর পরীক্ষার মান নিয়ে বিতর্ক ওঠে। এর মধ্যেই দ্বিতীয় দফা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন গবেষকরা। বাজার থেকে সংগৃহীত ১০টি নমুনার সবগুলোতেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার কথা জানান গবেষক আ ব ম ফারুক। প্রথমবারের মতো এবারো পাঁচটি কোম্পানির সাতটি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের ও তিনটি খোলা দুধের নমুনা একই জায়গা থেকে সংগ্রহ করে নিয়ম অনুযায়ী একই ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। ফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারো সব নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের মোট সংখ্যা ছিল চারটি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও লেভোফ্লক্সাসিন)। এর মধ্যে প্রথমবার ছিল না এমন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দুটি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন)। ১০টি নমুনার মধ্যে তিনটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে চারটি, ছয়টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে তিনটি এবং একটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দুটি।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, যুগ্ম সম্পাদক আবু মোশাররফ রাসেল, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক এএম তৌহিদুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি