‘গতিহারা’ চার লেন সমীক্ষায় পার ১০ বছর

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ঘিরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিকল্পনার শেষ নেই। সড়ক প্রশস্তকরণ, উঁচুনিচু সমান্তরাল, শান্তিরহাটে ওভারপাস, পটিয়ায় বাইপাস, সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদীতে সেতু নির্মাণ সবই হয়েছে। পাঁচ পয়েন্টে বাইপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটিও গত অক্টোবরে অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু জনগণের প্রধান দাবিতে পরিণত হওয়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পটি ১০ বছর ধরে সমীক্ষাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে। চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়ন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারবাসীর কাছে স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ইমপ্রæভমেন্ট’ প্রকল্পের অধীনে অনুমোদিত বাইপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগে চার লেন প্রকল্প আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা নেই। আগামি ফেব্রুয়ারিতে এ প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়েছে সওজ। তবে অনুমোদনের এক বছরেও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্পটির দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক ও সওজ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শ্যামল ভট্টচার্য্য পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রকল্প পাস হওয়ার পর কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করি। ইতোমধ্যে ভ্যালুয়েশন শেষ হয়েছে। দাতাসংস্থা জাইকার রিভিউ শেষ হলেই অনুমোদনের জন্য কাউন্সিলর কমিটিতে পাঠানো হবে। আপাতত জাইকার রিভিউর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। অনুমোদিত হলেই কনসালটেন্ট ডিজাইন, টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি হবে। আগামি ফেব্রুয়ারি মাসে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে’।
সওজ সূত্র জানায়, ২০১৩-১৫ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে সমীক্ষা চালায় সুইডিস কনসালটেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেসময় ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রাক্কলন তৈরি করে ডিপিপিও প্রস্তুত করা হয়। ডিপিপিতে দুই পাশে পৃথক লেন ধরে মহাসড়কটির প্রশস্ততা ধরা হয় ৮২ ফুট। ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুটওভার ব্রিজ ও দু’টি ফ্লাইওভারের কথা বলা হয়েছিল। এছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৩১৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ধরা হয়। সরকার প্রকল্পটি ফেরত দিয়ে জাপানের কোম্পানী মারুবেনীকে দায়িত্ব দিয়ে আবারও সমীক্ষা চালায়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে মহাসড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে ২০১৯ সালে প্রকল্পটির ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয় সওজ। তবে প্রকল্পের আওতাভুক্ত থাকা দোহাজারীর সাঙ্গু নদী ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর উপর দু’টি সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে পটিয়া বাইপাস সড়ক পর্যন্ত অংশটি ১৮ফুট থেকে ৩৪ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বিজিসি ট্রাস্ট এলাকা থেকে সাতকানিয়া-কেরানীহাট পর্যন্ত ৩৪ ফুটে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সওজ। এছাড়াও শান্তিরহাটে একটি ওভারপাস নির্মিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর সড়কের ডিভাইডার ভেঙ্গে ফেলায় এই ওভারপাসটি বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে কম।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি এখনো স্টাডি পর্যায়ে আছে। অগ্রগতি নেই। প্রকল্পের স্টাডি শেষ হলেই প্রকল্পের সাথে বাঁক সোজা করার বিষয়টিও যুক্ত থাকবে। শান্তিরহাটের ওভারপাস জনগণ ব্যবহার না করলেও সওজের কিছুই করার নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডিভাইডার ভেঙ্গে ফেলার দাবি ছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে এটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সওজের পক্ষ থেকে বন্ধ করতে গেলেই নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’।
চার লেন প্রকল্পটি আড়ালে গেলেও আপাতত পাঁচ পয়েন্টে বাইপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সক্রিয় আছে সওজ। ৮ হাজার ৫৫৬ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে জাইকা ৫ হাজার ৭০৯ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ২ হাজার ৮৪৭ কোটি ৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা প্রদান করবে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্প অনুমোদন ও ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রণালয় থেকে জিও জারি হয়।
প্রকল্পটি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পটিয়া, দোহাজারী, লোহাগাড়া ও চকরিয়ায় চারটি বাইপাস নির্মিত হবে। এছাড়াও সাতকানিয়ার কেরানীহাঠে একটি ফ্লাইওভার নির্মিত হবে। প্রকল্পের আওতায় পটিয়া বাইপাস ৫.৭২ কিলোমিটার, দোহাজারী বাইপাস ৩.৫১ কিলোমিটার, লোহাগাড়া বাইপাস ৪.২৫ কিলোমিটার ও চকরিয়া বাইপাস ৭.৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। সাতকানিয়া কেরানীহাটে নির্মিতব্য ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য হবে ৩.৩ কিলোমিটার।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক ও সওজ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শ্যামল ভট্টচার্য্য পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রকল্প অনুমোদনকালে যা ধরা হয়েছে তা এখনো বহাল আছে। পরবর্তীতে ডিজাইন হওয়ার পর প্রয়োজন হলে অর্থায়ন কমানো বা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুসারেই এগিয়ে চলছে। প্রকল্পে তিনটি নতুন বাইপাস, একটি পুরানো বাইপাস ইমপ্রুভমেন্ট করা ও একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করতেই বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০২৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন হয়তো একটু বেশি সময় লাগতে পারে’।