পূর্বদেশ ডেস্ক
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামীর রাজনীতি ও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ যাতে মসৃণ রাখা যায়, সতর্কতার সঙ্গে সেই পথেই হাঁটছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় টেলিকম নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। সেখানে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই নীতির বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি। দল এখন এই নীতি প্রণয়নের পক্ষে নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মির্জা ফখরুল। বিএনপি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাম্প্রতিক ‘ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও আমরা এই মুহূর্তে এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উল্লেখ করেন, এই নীতির উদ্দেশ্য হলো, লাইসেন্সিং পদ্ধতি সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎসাহিত করা এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো; যা অবশ্যই ইতিবাচক একটি বিষয়। তবে খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে; যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নে বাধা দিতে পারে। বিএনপি গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে এই খসড়ার সম্ভাব্য দুর্বলতা, অস্পষ্টতা এবং বড় মোবাইল অপারেটরদের পক্ষে অধিক সুবিধা পাওয়ার কিছু ধারা তুলে ধরছে-যা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (এসএমই) এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ফখরুর বলেন, আমরা সরকারকে আহবান জানাই, এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে তারা যেন পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করার পর নীতিমালা চূড়ান্ত করেন। বিশেষ করে সামনে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এ সময়ে একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের ঝুঁকি: একাধিক সেবা খাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে। এতে করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘিœত করতে পারে। ক্রস-ওনারশিপের ফাঁকফোকর: উল্লম্ব ও সমান্তরাল মালিকানার বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যার অভাবে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে।
তিনি মনে করেন, মোবাইল অপারেটরদের ফাইবারভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা স্পষ্ট নয়, ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
একক লাইসেন্সের বাধা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য: আইএসপি লাইসেন্স একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। এএনএসপি লাইসেন্সে স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ফিক্সড টেলিকম লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারা দেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে যা এসএমইদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
বড় কোম্পানির অবকাঠামো আধিপত্য: বড় মোবাইল কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশ করতে দিলে ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এবং একচেটিয়া পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
নীতিমালায় বিদ্যমান অপারেটরদের সুবিধা: কিছু নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বড় কোম্পানির সুবিধা বজায় রাখা হয়েছে, যা প্রতিযোগিতা নয় বরং আধিপত্য বাড়াবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই ধরনের জাতীয় পর্যায়ের টেলিকম নীতি প্রণয়নে অবশ্যই সতর্কতা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায়, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। বিএনপি বিশ্বাস করে, সবার জন্য উপকার বয়ে আনে এমন নীতিই গ্রহণযোগ্য। ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারেই আমরা কাজ করে যাবো। সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান উপস্থিত ছিলেন।