গণঅভ্যুত্থানের ভিডিওচিত্র ‘দ্রোহ-কান্নার জুলাই’ প্রদর্শন

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর কাজীর দেউড়ি মুক্তমঞ্চে গতকাল শুক্রবার আয়োজন করা হয় ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের গণঅভ্যুত্থানের ভিডিওচিত্র প্রদর্শনীর দ্বিতীয় আয়োজন ‘দ্রোহ-কান্নার জুলাই’। পর্দায় একের পর এক প্রদর্শিত হচ্ছে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন-সংগ্রামের নানা ভিডিওচিত্র। আবার একটু পর পর আলোচনায় উঠে আসছে ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের বর্বরতার কথা। ভিডিওচিত্রতে ফুটছে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গও। ফুটপাতে এই ভিডিওচিত্র দেখতে ভিড় জমিয়েছেন সব বয়সী মানুষ। কেউ বা ভিডিও দেখে কাঁদছিলেন, কেউ বা ছাত্রজনতার আওয়ামী লীগ ও পুলিশকে প্রতিহত করার স্মৃতি পর্দায় সামনে আসতে দেখে ¯েøাগান দিচ্ছিলেন, ফিরে যাচ্ছিলেন বিভীষিকাময় দিনগুলোতে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাসজুড়ে চলা আন্দোলন সংগ্রামে মারা গেছেন প্রায় দু’হাজার বিভিন্ন বয়সের, শ্রেণিপেশার মানুষ। যেমন ছাত্র আবু সাইদ, মুগ্ধ আছেন তেমনই আছেন রিকশাচালক মানিক মিয়া, শিশু রিয়া গোপ সহ অনেকেই। অসংখ্য মানুষের অঙ্গহানি হয়েছে, চিরতরে চোখ হারিয়েছেন হাজারো মানুষ। অগণিত মায়ের বুক খালি হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে সময়ে ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হতে থাকে আন্দোলনের বিভিন্ন ফুটেজ। সেসব সংগৃহীত ফুটেজ কালেকশন করে স্টোরিটেলিং প্ল্যাটফর্ম ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ। সেই সংগৃহীত ভিডিওগুলো দিয়ে শুরু হয় তাদের আয়োজন ‘দ্রোহ-কান্নার জুলাই’। গত ২২ নভেম্বর তারা প্রথম প্রদর্শনী করে নগরীর জামালখান মোড়ে। সেখানে তারা প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামের নানা জায়গায় এই প্রদর্শনী আয়োজনের ঘোষণা দেন। রংপুরের শহীদ আবু সাইদের গুলি খাওয়ার দৃশ্য দিয়ে শুরু হয় এই প্রদর্শনী। একে একে আন্দোলনের নানা দিনগুলোতে হওয়া ঘটনাপ্রবাহ উঠে আসে ভিডিওতে। ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’ ¯েøাগানের দিনগুলোতে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। তারপর দেখা যায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনীর হামলার দৃশ্য। নারী শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য শিক্ষার্থীর উপর রক্তাক্ত হামলার দৃশ্যগুলো উঠে আসে। সেসব হামলার পরও শিক্ষার্থীদের বুক উচিয়ে দাঁড়ানোর গল্প উঠে আসে প্রদর্শনীতে। তারপর যুদ্ধে বিভীষিকা বেজে উঠার মতো একে একে আসতে থাকে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত হওয়ার ভিডিও। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা একের পর এক নির্যাতনের দিনগুলো দেখে আঁতকে উঠে আবারো সবাই। আন্দোলনের সময়ে সাড়া জাগানো নানা বিদেশি মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলোও প্রচার করা হয়। তারপর চালানো হয় বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র দ্বারা নির্মিত আন্দোলনের কিছু প্রামাণ্যচিত্র। এই অনুষ্ঠানের কারিগরি সহায়তায় ছিলো গণযোগাযোগ অধিদপ্তর।
এই আয়োজনের ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সার্চ কমিটির সদস্য এবং ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ এর পরিচালক সাইদ খান সাগর বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান শেষে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে ৫ আগস্ট। কিন্তু আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি। একদিকে মজলুম ফিলিস্তিনের পক্ষে লড়াই, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লড়াই। তাই খুনী স্বৈরাচারের উৎখাত করলেই হবে না, তারা যেন বাংলার মাটিতে আর কখনো শোষণ-জুলুম চালাতে না পারে তার জন্য জুলাইয়ের স্মৃতিকে আমাদের জাতীয় মানসে ধরে রাখা অপরিহার্য। অন্যদিকে দেশজুড়ে চলমান সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা মোকাবেলা করতে আমাদের আবারো জুলাইয়ের জাতীয় ঐক্যের কাছে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে আমাদের মানসে ফিলিস্তিনের কথাও গেঁথে রাখা জরুরি। জুলাই আমাদের জন্য যেমন দ্রোহের, তেমনই কান্নারও। আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণ হবে জুলাইয়ের উপর। তাই দেশজুড়ে জুলাইয়ের গল্প নিয়ে আমরা এই প্রদর্শনী ছড়িয়ে দিব।’
এই প্রদর্শনীতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের সংস্কৃতি বিনির্মাণে নতুন এক উপলক্ষ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি। এ সময় আরো বক্তব্য দেন ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ এর সংগঠক আবু নাছের আলিফ, ইসলাম জিশাদ, মাহতামুন ফাহিম, অহনা বড়–য়া, সাইফুল্লাহ নাদিম প্রমুখ।
এই প্রদর্শনীতে ভিড় জমান নানা বয়সের মানুষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিক তালুকদার বলেন, ‘এই ভিডিওগুলো দেখতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো এ যেন আমাদের নিজেদেরই গল্প। মনে হচ্ছিলো ফিরে গেছি সেই দুঃসময়ে, যখন আন্দোলনকারীদের জীবন ছিলো অনিশ্চিত।’
একটি কলেজের শিক্ষক মামুনুর রহমান বলেন, ‘যে ছেলেমেয়েরা মারা গেছে তারা তো আমাদেরই ছেলেমেয়ে। শিক্ষক হিসেবে সে সময়কার আমার অসহায়ত্ব সারাজীবন তাড়া করে বেড়াবে আমাকে।’