চকরিয়া প্রতিনিধি
চকরিয়ায় দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে ভোগ দখলীয় জমিতে নির্মিত বাড়ির সংস্কার কাজ করতে গিয়ে বন বিভাগের বাঁধার মুখে পড়েছেন রিনা আক্তার নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী। স্থানীয় বন বিভাগের লোকজন তার দীর্ঘদিনের নির্মিত পুরোনো বাড়িটির সংস্কার কাজে বাঁধা দেয়ায় তিনি এখন পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছেন। উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশার টেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সৌদি আরব প্রবাসী মিনহাজ উদ্দিনের বড়ভাই সাহাব উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি ও তার ছোটভাই মিনহাজ উদ্দিনের নামে প্রপার কাকারা এলাকার জনৈক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ভোগদখলীয় ৬০ শতক জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে তারা ওই জমি থেকে স্থানীয়ভাবে নির্মিত মসজিদের জন্য ৭ শতক এবং একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৮শতক জমি দান করেন। অবশিষ্ট জমিতে তারা পৃথক ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ক্রয়কৃত জমিতে তারা দীর্ঘ ৪৫ ধরে ভোগ দখলে থাকলেও বন বিভাগ বা অন্য কারো পক্ষ থেকে জমির দখলদারিত্ব নিয়ে কোন বাঁধা আসেনি। গত এক মাস ধরে আমার প্রবাসী ভাইয়ের পুরোনো বাড়িটির চালা ভেঙ্গে বৃষ্টি ও কুয়াশার পানি পড়তে শুরু করলে বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় তার স্ত্রী রিনা আক্তার। পরবর্তীতে নষ্ট টিনের চালা খুলে নতুনভাবে ছাউনী দিতে চাইলে স্থানীয় কাকারা বন বিভাগের পক্ষ থেকে জমিটি তাদের দাবি করে বাঁধা দেওয়া হয়। ফলে বন বিভাগের বাঁধার মুখে এখন খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে রিনা আক্তার ও তার সন্তানরা।
প্রবাসীর বড়ভাই সাহাব উদ্দিন বলেন, চলতি মাসে ২ ডিসেম্বর প্রতিবেশী মনছুর আলমের সাথে তার ঝগড়া বিবাদ হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি মনছুর আলম, তার স্ত্রী ইসমত আরা ও মেয়ে আনিকা মনিকে বিবাদি করে মামলা দায়ের করেন। তারপর থেকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন বিবাদি মনছুর আলম। ফলে মামলা প্রত্যাহারে ব্যর্থ হয়ে তার ছোটভাই মিনহাজ উদ্দিনের বাড়ির সংস্কার কাজে বাঁধা দেয়ার জন্য বন বিভাগ ও অন্যান্যদের লেলিয়ে দেয় মামলার আসামি মনছুর আলম।
সৌদি আরব প্রবাসী স্ত্রী রীনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, তার প্রবাসী স্বামীর নির্মিত বাড়িটির সংস্কার কাজ করতে গিয়ে সর্ব প্রথম বাঁধার মুখে পড়েন লুটনী এলাকার বাসিন্দা জনৈক মিনারুল নামে এক ব্যক্তির। এসময় তিনি নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে বন বিভাগের মাধ্যমে বাড়ির সংস্কারকাজ বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেন মিনারুল। ভুক্তভোগী রীনা আক্তার আরও বলেন, তখন নিরুপায় হয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেয়া মিনারুলকে কয়েক দফায় চাঁদার টাকা তুলে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট টাকার জন্য মিনারুল চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তারপর থেকে স্থানীয় বন বিভাগকে বাড়ি সংস্কারকাজে বাঁধা দেয়ার জন্য লেলিয়ে দেন কথিত ওই মিনারুল।
প্রবাসী স্ত্রী রীনা আক্তার বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে আমি বাড়িটি সংস্কারের জন্য মিস্ত্রি দিয়ে ভেঙ্গে পড়া বাড়ির টিনের চালা খুলি। পরবর্তীতে কিছু সংস্কার কাজ শেষ করে বাড়ির টিনের ছাউনী দিতে চাইলে বন বিভাগের লোকজন এসে বাঁধা দেয়। এসময় তারা সংস্কার কাজ করা করা বাড়ির বেশকিছু অংশ হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে দেয়। রীনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে আমার স্বামী ও তার বড়ভাই ওই জায়গায় গৃহ নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসলেও সে সময় কারো পক্ষ থেকে কোন ধরণের বাঁধা আসেনি। বর্তমানে জমিটি বনবিভাগের দাবি করে বাড়ির সংস্কার কাজে বাঁধা দিলেও অবৈধ দখলকার হিসেবে দীর্ঘ ৪৫ বছরেও কোন নোটিশ দেয়নি বন বিভাগ। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের বাড়ির আশপাশে অন্তত ১৭০টি বাড়ি রয়েছে। আমার বাড়িটি যদি অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে প্রতিবেশি হিসেবে বসবাস করা অন্যন্যারা বৈধ হয় কিভাবে? বর্তমানে আমাকে বাড়ির সংস্কারকাজে বাঁধা দিলেও প্রতিবেশি কাউকেই কোন ধরণের বাঁধা বা দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য আইনি নোটিশও দেয়নি বন বিভাগ। রিনা আক্তার বলেন, বন বিভাগের বাঁধার মুখে এখন আমি আমার বাড়ির চালাটি আর লাগাতে পারছি না। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।
এ ব্যাপারে জানতে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।