খেলোয়াড়ের স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

0

চকরিয়া প্রতিনিধি

কক্সবাজারের চকরিয়ায় জন্নাতুল ফেরদৌসী (১৬) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ দরগাহ পাড়া এলাকায় গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এদিন বিকালে পুলিশ মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
নিহত জন্নাতুল ফেরদৌসী ওই এলাকার প্রবাসী ফজল করিমের ছেলে ও বর্তমানে বিকেএসপির শিক্ষানবীশ ফুটবল খেলোয়াড় মো. আরাফাতুল ইসলামের (১৮) স্ত্রী। দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের পর ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বৈরাগীরখিল এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের মেয়ে জন্নাতুল ফেরদৌসীকে গত ছয়মাস আগে গোপনে বিয়ে করে নিজ বাড়িতেই রেখেছিলেন বিকেএসপিতে কর্মরত ওই শিক্ষানবীশ ফুটবল খেলোয়াড়।
এদিকে নিহত গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকায় নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, জন্নাতুল ফেরদৌসী আত্মহত্যা করেছেন। তবে মেয়ের পরিবারের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আজিম বলেন, রবিবার সকালে পাশের বাড়ির সারজিনা হাফসা নামের এক কিশোরী পেঁয়াজ নিতে গৃহবধূর ঘরে যান। এ সময় ঘরের ভেতর গৃহবধূ জন্নাতুল ফেরদৌসীকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার দিলে আশেপাশের প্রতিবেশী লোকজন দৌঁড়ে আসেন। পরে নুরুল হুদা মিস্ত্রী নামক এক ব্যক্তি গলায় প্যাঁচানো ওড়না কেটে দিয়ে নিহতের মরদেহ নিচে নামিয়ে দেন।
গৃহবধূর শাশুড়ি রোজিনা আক্তার বলেন, জন্নাতুল ফেরদৌসীর সঙ্গে আমার ছেলে আরাফাতের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমার ছেলে বিকেএসপির একজন নিয়মিত শিক্ষানবীশ খেলোয়াড়। কিছুদিন আগে বিকেএসপিতে চলে যাবার সময় বাড়িতে পুত্রবধূ জন্নাতুল ফেরদৌসীকে আমার কাছে রেখে যায়। এ সময় আমার ছেলে বলে যায়, সে বিকেএসপির নীতিমালা মোতাবেক প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বিয়ের আয়োজন করতে পারছে না। সে কারণে ছেলের অনুরোধে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা গোপন রেখে জন্নাতুল ফেরদৌসীকে আমার বাড়িতে মেয়ে হিসেবে রেখেছি। বাড়িতে আমি আর আমার পুত্রবধূ ছাড়া কেউ থাকে না। তিনি আরও বলেন, রবিবার সকালে আমি বাড়ির বাইরে কাজ করছিলাম। এরমধ্যেই আমার অগোচরে বাড়ির ভেতরে ঘরের চালার বীমের সাথে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে মেয়েটি।
জন্নাতুল ফেরদৌসীর মা হুমাইরা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে আরাফাত জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বিয়ে করেছে। তবে বিয়ের বিষয়টি যাতে ফাঁস না হয় সেভাবে থাকার অনুরোধও করেছিল জন্নাতুল ফেরদৌসীকে। কারণ বিয়ের কথা বিকেএসপিতে জানাজানি হলে তাকে (আরাফাত) টিম থেকে বের দিবে। মূলত ছেলের পথের কাটা সরাতে আমার মেয়েকে ছেলের মা রোজিনা মেরে এটিকে আত্মহত্যা বলে নাটক সাজিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।
ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জীব বড়ুয়া বলেন, খুটাখালীতে সংঘটিত ঘটনার খবর পেয়ে চকরিয়া থানার ওসির নির্দেশে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়। পরে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গৃহবধূ জন্নাতুল ফেরদৌসী আত্মহত্যা করেছেন, নাকি হত্যার শিকার হয়েছেন ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসলে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।