খুলশীতে শতবর্ষী পুকুর ভরাট করছে সিপিডিএল

8

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীর খুলশী ওয়্যারলেস কলোনি পুরনো জামে মসজিদের পাশে শতবর্ষী পুকুর ভরাট করছে সিএ প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (সিপিডিএল)। গত কয়েকদিন ধরে দিন-রাত সমানে পুকুরের একটি অংশ ভরাট করে ফেলেছে তারা।
ওয়্যারলেস মোড় এলাকার বাসিন্দা, মসজিদের মুসল্লি, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, পুকুর ভরাট না করার জন্য তাদেরকে আমরা নোটিশ দিয়েছি। পাশাপাশি অধিদপ্তরের কার্যালয়ে তাদেরকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পুকুরটি তারা ভরাট করে বিল্ডিং নির্মাণ করবে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মোছাম্মত নুর নাহার বেগম ও মোছাম্মত মসুদা বেগমের মালিকাধীন পূর্ব পাহাড়তলী মৌজার ওই জায়গায় পুকুরের পানি বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বিএস খতিয়ান অনুযায়ী ৬১ শতকের বিশাল আকৃতির পুকুরটি ছাড়াও এখানে রয়েছে ২০ শতাংশ বাড়ির জায়গা এবং ২০ শতাংশ নাল জায়গা। স্কেভেটরের মাধ্যমে সব জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ চলেছে। এমনকি পাহাড় কাটা হলুদ ও কালো মাটি দিয়ে এক পাশ ভরাট করা হয়।তবে গত বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশের পর স্কেভেটর সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
সেখানকার কেয়ারটেকার মো. রাশেদ বলেন, সিপিডিএল এ পুকুর ভরাটের কাজ নিয়েছে। কোম্পানির নির্দেশনায় আমি কাজ করছি। তবে এসব বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসিব রশিদ স্যার ভাল বলতে পারবেন।
গত বৃহস্পতিবার পুকুর ভরাটের অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন সিপিডিএল’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসিব রশিদ। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, আমরা কোন পুকুর ভরাট করছি না। ওটা একটা ডোবার মত ছিল আর কোন পুকুরের অস্তিত্বও নেই। এরপরও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমাদেরকে নোটিশ করা হয়েছে, আমরা সেখানে যাবো। তাছাড়া আমরা কোন বিল্ডিংয়ের কাজ করবো না। খেলার জন্য একটা কৃত্রিম মাঠ টার্ফ তৈরি করবো। তাই এখানে কোন পুকুর ভরাটের কাজ চলছে না।
এদিকে গতকাল রবিবার পরিবেশ অধিদপ্তরে শুনানির জন্য ডাকা হলেও সিপিডিএল কর্তৃপক্ষ আসেনি। তারা কাগজপত্র নিয়ে কয়েকদিন পর দেখা করবেন বলে জানায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর পরিদর্শক মো. মনির হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, পুকুর ভরাট করে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। আমরা তাদেরকে নোটিশ করেছি, যাতে শুনানিতে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু তারা আজ (রবিবার) আসেনি। আমরা তাদেরকে ৩-৪ দিন সময় দিবো। এরপরও যদি তারা অফিসে না আসে, তবে পরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনামত আইনগত ব্যবস্থায় যাবো। এখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো একশন নেওয়া হয়নি।
ওয়্যারলেস কলোনি পুরনো জামে মসজিদের মুসল্লি তৌফিকুর রহমান বলেন, সিপিডিএল পুকুর ভরাটের কাজ করছে। এর আগে পুকুরের আশেপাশে কেউ প্রবেশ করতে পারতো না। সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে সিপিডিএল’র কর্মচারী, দারোয়ানদের বাধার মুখে পড়তে হতো সংবাদকর্মী ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। পরে বিকল্প পথে ঢুকে পুকুুর ভরাটের প্রমাণ পায় পরিবেশ অধিদপ্তর।
ওই জায়গার মালিকানার এক ওয়ারিশ জানান, এক বছর আগে সিপিডিএল’র কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে জায়গাটি। তবে সেখানে পুকুর, নাল ও বাড়ির জায়গাও রয়েছে। নাল ও বাড়ির জায়গা সূত্র ধরে সিপিডিএল পুকুর ভরাটের কাজও করছে সেখানে।