খুলশী রেল স্টেশন বস্তি এলাকায় বাস করেন জামাল। দিনমজুর জামাল স্থানীয় কাউন্সিলর মোরশেদ আলমের ত্রাণ বিতরণের খবর পেয়ে সেখানে ছুটি আসেন। পরিবারের মধ্যে কিছু খাবার মজুদ থাকলেও সামনের দিনের খাদ্য সংকটের দুশ্চিন্তায় তার ছুটে আসা। দু-একদিনের মধ্যে সহায়তা না পেলে জামালকে খাদ্যভাবে পড়তে হতে পারে।
জামালের মতো অনেক পরিবারে এখন বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। যে আতঙ্ক করোনা ভাইরাসের নয়, খাদ্য সঙ্কটের।
জামাল বলেন, সরকার নিষেধ করেছে, আমরা তো বের হতে পারছি না। রাস্তায় বের হতে চাইলে প্রশাসন বাধা দিচ্ছে। ঘরে বসে থাকলে খাবার জুটবে না। যে পরিমাণ জমা আছে সেগুলো শেষের দিকে। কাজ করতে না পারলে কাল-পরশুর পর থেকে কীভাবে খাবো জানি না। কাজ না পেলে তখন না খেয়ে থাকতে হবে।
অসহায় মানুষের মাঝে অজানা এ আতঙ্ক দিনে দিনে বাড়ছে। সরকারিভাবে নানা সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও সে অনুপাতে সরকারি সহায়তা মানুষের হাতে পৌঁছেনি। কিছু বিত্তবান মানুষ ও সামাজিক সংগঠন অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে এসেছেন। স্বল্প পরিসরে অনেক জনপ্রতিনিধিরাও চেষ্টা করছেন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে। তাছাড়া পুলিশ, ডিবি পুলিশ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকেও খাদ্যসমাগ্রী বিতরণ করতে দেখা গেছে। তবে এসব খাদ্রসামগ্রী বিতরণে লোক জমায়েত তেমন হচ্ছে না।
নগরীর শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম বলেন, চট্টগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ ওয়ার্ড শুলকবহর। আমার ওয়ার্ডে বিত্তবানরা যেমন আছেন, তেমনি অন্তত ৫ হাজার বস্তি পরিবার বসবাস করেন। এসব বস্তিবাসী ও নিম্নআয়ের মানুষ চরমভাবে হতাশার মধ্যে আছেন।যেহেতু বস্তির প্রায় মানুষই দিনে এনে দিনে খায়। করোনার ভয়ে তারা এখন বের হতে পারছেন না। এ সময় বিত্তবানদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। আমি সীমিত আকারে কিছু মানুষকে সহায়তা দিচ্ছি। প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে এ সংকট আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।
এদিকে শনিবার থেকে নগরীর হতদরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষের মাঝে ত্রাণ হিসেবে জরুরি খাদ্যপণ্য দেয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, চিড়া, চিনি, ডাল, লবণ, সয়াবিন তেল ও নুডুলস।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অসহায় মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে দেখা গেছে অনেককে। তবে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণের সময় একই পয়েন্টে একই ব্যক্তিদের হাতে বিভিন্ন জনকে সাহায্য দিতে দেখা গেছে। পক্ষান্তরে অনেকেই সহায়তা না পেয়ে ফিরে গেছেন। রাস্তায় বা অলিগলিতে গিয়ে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি ব্যতিক্রমী কিছু উদ্যোগও দেখা গেছে।
নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক আবু সুফিয়ান চলমান সংকটে এক হাজার দিন মজুরসহ নি¤œ আয়ের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সাথে তিনি সকল বিত্তবানদের এ সংকটে গরীব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহŸান জানান।
জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনও এক হাজার পরিবারকে ৫ কেজি চাল ও এক কেজি ডাল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যেই অসহায় পরিবারের মধ্যে তিনি এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবেন।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। জনসমাগম স্থান ত্যাগ করে ঘরে অবস্থান করতে সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে পুরো দেশই যেন লকডাউনে চলে গেছে। জনসমাগমের স্থানগুলো এখন নিরব। মার্কেট-শপিংমলগুলোও বন্ধ। কোলাহলপূর্ণ নগরীতে এখন সুনসান নীরবতা। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি একেবারেই হাতে গোনা। এরই মধ্যে প্রশাসনের তৎপরতায় কয়েকজন জড়ো হওয়ার সুযোগই নেই। নীরব শহরের এই চিত্রের প্রভাব পড়ছে নি¤œ আয়ের মানুষের উপর। আয় না থাকায়, সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে সে চিন্তাতেই অস্থির এসব পরিবারের লোকজন। এ অবস্থা থেকে কবে পরিত্রাণ মিলবে সেটাও জানে না কেউ। ফলে এক দুর্বিষহ জীবন পার করছেন এসব মানুষ।