আসহাব আরমান
২০১৮ সালে জাতীয়করণ হয় ফটিকছড়ি করোনেশন সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৭০০ জনের অধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। নিয়মানুযায়ী পূর্ণাঙ্গ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়টিতে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষক নেই। মঞ্জুরিকৃত ২২ পদের বিপরীতে মাত্র ৩ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শুধু এটি নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় নতুন করে জাতীয়করণ হওয়া বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের চিত্র একই।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাতীয়করণ হওয়ায় শিক্ষক নিয়োগে বিষয়টি সরকাররের হাতে চলে যায়। ফলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলেই কাউকে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেন না। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় খÐকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। আর এসব শিক্ষকের বেতন নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ফলে সরকারি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেও অতিরিক্ত খরচ দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে জাতীয়করণের সময় পর্যাপ্ত পদ সৃজন না হওয়ায় কম শিক্ষক দিয়েই অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে হচ্ছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম।
ফটিকছড়ি করোনেশন মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি ২০১৮ জাতীয়করণ হয়। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক অবসর গ্রহণ করেন। ফলে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক পদ খালি আছে। এসব পদের বিপরীতে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালাচ্ছি। এসব শিক্ষকের বেতন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন থেকে দেয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা সরকারিকরণে সুফল পাচ্ছে না।
বাঁশখালীর সরকারি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওমর ফারুক পূর্বদেশকে বলেন, ২০২৩ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলেও শিক্ষকদের জাতীয়করণে বিষয়টি এখনও আটকে আছে। ফলে জাতীয়করণ হলেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা অনুপস্থিত। বিদ্যালয়ে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছে ১৪ জন। পাশাপাশি ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছে ১৯ জন। বর্তমানে সরকারি নিয়ম মেনে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। শিক্ষকদের জাতীয়করণ আটকে থাকায় বিদ্যালয়ের তহবিল থেকেই বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৫ জেলায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬টি। এর মধ্যে নগরে ১০টি ও উপজেলায় ২৬টি। আরও কয়েকটি বিদ্যালয় জাতীয়করণের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ২০১৩ সালের পর নগরে একটি এবং উপজেলায় ১২টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়।
নতুন করে জাতীয়করণ হওয়া ১০টি বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জাতীয়করণের ফলে সৃষ্ট পদে ১৫৫ শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯৪ জন। শিক্ষকদের ৬১টি পদ খালি রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা পূর্বদেশকে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে তেমন সংকট নেই। সরকারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয় সরাসারি দেখে। আমরা খালি পদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আশা করি, শীঘ্রই সংকট কমে আসবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উপপরিচালক মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রামের সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষক না থাকায় পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। শূন্য পদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। সরকারি বিদ্যালয়ে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে পদ খালি থাকার অন্যতম প্রধান কারণ নারী শিক্ষকদের ৪০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা। নারী পদে তো পুরুষ নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই।