এম এ হোসাইন
সবজির দামের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা ভোক্তা। বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম একশ টাকার আশপাশেই। এমন অবস্থায় কমদামে সবজি বিক্রির উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নেমেছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন। আড়ত থেকে সবজি ক্রয় করে খুচরা বাজারে একই দামে বিক্রি করছেন সংস্থাটি।
সবজির মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে নেওয়া এ অভিনব কর্মসূচি ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে। ধারাবাহিকভাবে এ কর্মসূচি নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আছে সংস্থাটির।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দুইটা থেকে শুরু হয় ফাউন্ডেশনের ‘ক্রয়মূল্যে বিক্রয়’ কর্মসূচি। নগরের বহদ্দারহাট পুকুর পাড় এলাকায় ৫ টন সবজি নিয়ে শুরু হয়েছে এ কর্মসূচি। প্রথম দিনে মোট ৬ ধরনের সবজি বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে লাউ প্রতিপিস ১৭ টাকা, পেঁপে প্রতিকেজি ২৫ টাকা, শসা প্রতিকেজি ৩৭ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতিকেজি ৩৮ টাকা, মিস্টি কুমড়া প্রতিপিস ৪৫ টাকা এবং কিরা (ছোট শসা) প্রতিকেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যেখান থেকে সাধারণ মানুষ বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেক বা তারও কম দামে সবজি কিনতে পারছেন। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে খুশি ভোক্তারা। প্রান্তিক কৃষক থেকে কয়েক ধাপে হাত বদল হয়ে ভোক্তার কাছে আসে সবজি। হাত বদলের কারণে ধাপে ধাপে বাড়ে সবজির দাম। উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তার হাতে আসতে সে দামের ফারাক লম্বা হয়। এতে অসহনীয় দামের চাপে পড়েছে ভোক্তা।
সবজির দাম নিয়ে যখন ভোক্তা দিশাহারা, তখন শামসুল হক ফাউন্ডেশন ক্রয়মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে আড়ত থেকে সবজি কিনে ভোক্তার কাছে বিক্রি করছে ফাউন্ডেশন। এরপর সরাসরি প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকেও সবজি ক্রয়ের চিন্তা করছে সংগঠনটি।
ক্রয়মূল্যে বিক্রয়ের এ কার্যক্রমে কোন ধরনের মুনাফা করছে না ফাউন্ডেশন। তাছাড়া কর্মসূচিতে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের ব্যয়ভারও বহন করছে ফাউন্ডেশন। শুধু ক্রয়মূল্যের সাথে পরিবহন খরচ যুক্ত করেই নির্ধারণ করা হচ্ছে সবজির বিক্রয় মূল্য।
আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা প্রথম দিন মোট ৫ টন সবজি নিয়ে এসেছি। বহদ্দারহাট পুকুর পাড় একটি পয়েন্টে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। জায়গা পাওয়া সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে পয়েন্ট বাড়ানো হবে। সবজির দাম যতদিন সহনীয় পর্যায়ে না আসে ততদিন এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়ত থেকে আমরা সবজিগুলো কিনে এনেছি। গাড়িভাড়া ও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে যে দাম পড়েছে, সে দামে বিক্রি করা হচ্ছে। লোকবলের কোন খরচ এখানে ধরা হয়নি। প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রথম দিনে অর্ধেকের বেশি সবজি বিক্রি হয়ে গেছে।
উদ্যোক্তাদের দাবি, সিন্ডিকেটের থাবা ভেঙে দিয়ে সঠিক দামে সবজি ক্রয়ের জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উৎপাদকের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা এবং ভোক্তা সহনীয় দামে সবজি বিক্রি চিন্তা আছে ফাউন্ডেশনের। ফাউন্ডেশনের এ কার্যক্রমে যে কেউ চাইলে নিজের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে পারবেন। আবার কেউ সঠিক দামে পণ্য বিক্রির তথ্য দিয়েও সহযোগিতা করতে পারবেন ফাউন্ডেশনকে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় এমন কার্যক্রম নিয়ে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহŸানও জানান তারা।
খাজা রোড এলাকার বাসিন্দা নূর আহম্মেদ বলেন, মানুষের জটলা দেখে সবজি কিনতে দাঁড়িয়েছি। খুবই কম দামে সবজি বিক্রি করছে এখানে। বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেকেরও কম দামে মিলছে সবজিগুলো।
কামাল উদ্দিন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সিন্ডিকেটের কবল থেকে আমরা বের হতে পারছি না। প্রত্যেকটা জিনিস সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এরমধ্যে ক্রয়মূল্যে সবজি বিক্রিয় একটি ব্যতিক্রম কার্যক্রম। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে আমরা সাধারণ মানুষ একটু স্বস্তি পাবো।