কোলেস্টরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে চালতা

1

চালতা খুব সহজলভ্য একটি ফল। এটি দাম কম হওয়ার কারণে সকলেই ক্রয় করতে পারেন। এই ফলটি টক বলে এর আচার, চাটনি, টক ডাল অনেকের প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল পিষে নিয়ে লবণ-মরিচ দিয়ে মাখালে তা বেশ লোভনীয় হয়। এখন কাঁচা বাজারে প্রচুর পরিমাণে এই লোভনীয় টক ফল চালতার সমারোহ। শুধু খেতেই সুস্বাদু ও লোভনীয় নয়, এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
চালতা ফলের ইংরেজি নাম ‘এলিফ্যান্ট অ্যাপল’, বৈজ্ঞানিক নাম ডিলেনিয়া ইনডিকা। চালতার আদি জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। তবে সবচেয়ে বেশি জন্মে ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়। গ্রামে এই চালতা যতটা সহজলভ্য, শহরে ততটা নয়। কিন্তু চালতার আচার সবারই কম-বেশি পছন্দ। আবার এই ফলে অন্য অনেক ফলের চেয়ে পুষ্টিগুণ বেশি।
চালতার পুষ্টিগুণ : চালতায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, শর্করা, আমিষের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান। এ ছাড়া আরও আছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, থায়ামিন ও রিবোফ্লাবিন। তাই চালতা শরীরে যেমন রোগ প্রতিরোধের কাজ করে, তেমনি পুষ্টি পূরণেও রাখে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। এছাড়াও চালতার আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে জেনে নিন সেগুলো কী কী।
লিভার এবং হার্টের টনিক : চালতা ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটিকে লিভার এবং হার্টের টনিক হিসেবে মনে করা হয়। চালতায় ক্যালসিয়াম ও শর্করা বিদ্যমান।
কোলেস্টরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে : চালতা ক্ষতিকারক কোলেস্টরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কুসুম কুসুম গরম পানিতে চালতার রস আর একটু চিনি মিশিয়ে খেয়ে নিন, এটি রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও দারুণ কাজ করে থাকে। চালতা গাছের কষ বা আঠায় ডায়াবেটিস রোগ নিরাময়ের উপাদান রয়েছে।
জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি নিরাময় করে : গলা ব্যথা, জ্বর বুকে কফ জম্যা কিংবা সর্দি প্রতিরোধে চালতার আছে এক অনন্য গুণ। চালতা গাছের ছাল গুঁড়া করে খেলে কফ ও সর্দি ভালো হয়।
রক্তের সংবহন ঠিক রাখতে : মানবদেহে রক্তের সংবহন ঠিক রাখতে চালতা হতে পারে এক দারুণ উপকারী চালতা ফল।
বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে : চালতা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ডায়রিয়া, বদহজম কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে চালতা খান, দ্রæত সুস্থ হয়ে উঠবেন। পাকস্থলীতে যাদের আলসার আছে, তাদের জন্য দাওয়াই হতে পারে চালতা। ডায়রিয়া ও বদহজমে চালতা খান, দ্রæত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
বাতের ব্যথায় : বাতের ব্যথাতে কচি চালতার রস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া হাড়ের যেকোনো সংযোগস্থলের ব্যথা কমাতেও খেতে পারেন।
জরায়ু ও স্তনের ক্যানসার প্রতিরোধ করে : এটি মহিলাদের জন্য উপকারী। কারো কারো মতে, চালতা গর্ভপাত পরবর্তী সমস্যাগুলো প্রতিরোধে সহায়তা করে। এমনকি এটি জরায়ু ও স্তনের ক্যান্সার পর্যন্ত প্রতিরোধ করে।
শুক্রাণুর স্বল্পতা নিরাময় করে : পুরুষের অকাল বীর্যস্খলন, দুর্বলতা ও শুক্রাণুর স্বল্পতা নিরাময়ে চালতা উপকারী ভূমিকা রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম চালতায় ১৪০ কিলোক্যালরি শক্তি আছে, যা কিনা শক্তিবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কিডনি ভালো রাখে : রক্ত পরিশোধন ও ডিটক্সিফিকেশনে চালতা সহায়তা করে। এছাড়া যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত চালতা খেলে উপকার পাবেন। এছাড়াও স্কার্ভি, অন্ত্রে কৃমি, কানের যেকোনো সমস্যায় কিংবা পাকস্থলীতে আলসার সমস্যা সমাধানে চালতা বিশেষ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের যন্ত্রণা প্রশমিত করে : চালতা প্রাকৃতিক অ্যাসিড যেমন- অক্সালিকম, ট্যানিক, ম্যালিক এবং সাইট্রিক এসিডে সমৃদ্ধ। এটা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ভিটামিন-এ, বি ও সি এর ভালো উৎস। চালতার পাতাস্থ তেল ত্বকের সংকোচনে এবং এর আঠা ত্বকের ক্ষতজনিত যন্ত্রণা প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয়। সুত্র : ইন্টারনেট