এম এ হোসাইন
চট্টগ্রামে এবারের কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা প্রায় ৯ লাখ ছুঁই ছুঁই। তবে এই চাহিদা মেটাতে মজুদ পশু যথেষ্ট নয়। ফলে আশপাশের জেলা ও উত্তরাঞ্চলীয় খামারিদের ওপর নির্ভর করতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব মতে, এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। এর বিপরীতে মজুদ আছে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি পশু। চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৫ হাজার পশুর ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘাটতির বড় কোনো প্রভাব বাজারে পড়বে না, তবে চাহিদা মেটাতে পার্শ¦বর্তী জেলা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সহায়তা লাগবে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, পশুর মজুদ কিছুটা কম হলেও সংকট হওয়ার কথা নয়। কারণ আশপাশের জেলা ও উত্তরাঞ্চলের খামারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পশু আনলে ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় চাহিদা কিছুটা বেড়েছে, তবে স্থানীয় প্রস্তুতি অনেকটাই সুষম থাকায় বাজারে সংকটের আশঙ্কা নেই।জেলার বিভিন্ন খামার ও বাড়িতে মজুদ পশুর মধ্যে গরু রয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। এর মধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৯টি ষাঁড়, ১ লাখ ২১ হাজার ৬৭০টি বলদ, ৪৯ হাজার ১১৪টি গাভি এবং ৬৪ হাজার ১৬৩টি মহিষ। এছাড়া ছাগল রয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৭৪টি, ভেড়া ৫৫ হাজার ৬৯৭টি এবং অন্যান্য পশু মাত্র ৩৫টি।
গত বছর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরে কোরবানি হয়েছিল ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু।
প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা যেমন, মিরসরাই, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, পটিয়া, আনোয়ারা, রাউজান, সীতাকুÐ, রাঙ্গুনিয়া ও বাঁশখালীতে বড় পরিসরে গবাদিপশু লালন-পালন করা হয়েছে। এসব এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৪ হাজার ২৫৮টি খামার রয়েছে। অনেক কৃষক ও খামারি কোরবানির মৌসুমকে কেন্দ্র করে অস্থায়ীভাবে পশু লালন করে থাকেন। এসব উপজেলার মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি পশুর মজুদ রয়েছে স›দ্বীপ উপজেলায় প্রায় ৮৫ হাজার ২৫০টি। গত বছর এ উপজেলায় ৭৬ হাজার ৬৩৮টি পশুর মজুদ ছিল। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিরসরাই (৫৮ হাজার ৭৮০টি), তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পটিয়া (৭০ হাজার ১৮০টি)। তাছাড়া আনোয়ারায় ৬৩ হাজার ৪২৮টি, ফটিকছড়িতে ৬৯ হাজার ৪১৯টি, বাঁশখালীতে ৫৯ হাজার ৪০৪টি, সীতাকুন্ডে ৫৬ হাজার ৮৫০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫০ হাজার, রাউজানে ৩৪ হাজার ৩০২টি, সাতকানিয়ায় ৪৫ হাজার ৩৭১টি, হাটহাজারীতে ৪৪ হাজার ৮৯০টি, চন্দনাইশে ৪৭ হাজার ৪টি, কর্ণফুলীতে ৩৩ হাজার ৫৩৩টি, লোহাগাড়ায় ৩৮ হাজার ৫৯টি, ডবলমুরিংয়ে ৩৭ হাজার ৫০০টি, কোতোয়ালীতে ৩০ হাজার ৬৯৮টি, পাঁচলাইশে ৪১ হাজার ৫৫৯টি, বোয়ালখালীতে ২৯ হাজার ৭৪২টি পশুর মজুদ রয়েছে।
কোরবানির ঈদ মানেই শুধু পশু জবাইয়ে শেষ নয়, বিশাল অঙ্কের কাঁচা চামড়ার লেনদেনও হয় এই সময়ে। তবে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে গুনতে অনেক আড়তদার এখন এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতিবছরই নিজেদের গুদাম প্রস্তুত করি, লবণ মজুদ করি। কিন্তু কোনো ব্যাংক ঋণ পাই না। তাই আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে চামড়া কিনতে হয়।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ প্রতিবছরই বলে কোরবানি বাড়বে, কিন্তু আমরা পরে সেই হারে চামড়া খুঁজে পাই না। এভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
আড়তদারদের দাবি, সরকারি সহায়তা ছাড়া চামড়ার বাজার ধরে রাখা যাবে না। বর্তমানে তাদের মধ্যে ১১২ জন সদস্যের অনেকে লোকসানে পড়ে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে সমিতির বাইরের মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও এবার চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
যদিও সরবরাহ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা, খামারিদের মুখে শোনা যাচ্ছে ভিন্ন সুর। তাদের প্রধান অভিযোগ-পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি।
চন্দনাইশের খামারি নজরুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় পশু খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। গমের ভ‚ষি একসময় কেজি ২৫-৩০ টাকায় কিনতাম, এখন কিনতে হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। সয়াবিন খৈলের দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা, এখন সেটা ৭০ টাকার ওপরে। এই বাড়তি দামের কারণে পশু লালনপালনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সরকারের উচিত পশুখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা, না হলে অনেকেই খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন কোরবানির পশুর হাট বসাতে জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে নির্ধারিত স্থানগুলোতে হাট বসানোর জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা, পশু চিকিৎসা সেবা এবং ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ঈদের আগেই সব হাটে প্রশাসনিক তদারকি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া প্রতিটি হাটে ডিজিটাল ওজন স্কেল বসানো, ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকা এবং পশুর রোগমুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।