পূর্বদেশ ডেস্ক
বিগত সরকারের সময়ে গুমের ঘটনায় সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সেনা সদরদপ্তর। মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য ডেপুটেশনে থাকেন, তারা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে থাকেন না। ডেপুটেশনে থাকা কিছু সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে।
এই তদন্তে যদি গুমের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তা হলে অবশ্যই সেনাবাহিনী তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে বাংলদেশ সেনাবাহিনী সব ধরনের সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা থাকবে।
ভুক্তভোগী কোনো পরিবার সহযোগিতা চাইলে, তাদেরও সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই সেনা কর্মকর্তা। খবর বিডিনিউজের।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গতবছর আগস্টে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে সরকার। ‘গুমের’ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, তা গত ৪ জুন জমা দেওয়া কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
সেখানে বলা হয়, গুমের বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। গুমের শিকার ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ, র্যাব এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে ‘মূল অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এর বাইরে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদপ্তর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন।
সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল শফিকুল ইসলাম দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত বছর জুলাই আগস্ট আন্দোলন চলাকালে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র লুট হয়, যার ৮০ শাতাংশ এরইমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই সময় প্রায় ১২ হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজারের বেশি অস্ত্র শুধু সেনাবাহিনী উদ্ধার করেছে। আগামী নির্বাচনের পূর্বে যতদূর সম্ভব বাকি অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনী তৎপর রয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গও সংবাদ সম্মেলনে আসে। সেনাবাহিনী কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। পাওয়ামাত্র অবাধ, সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সকল ধরনের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
কথিত জনতার মাধ্যমে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তা করার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে সংবাদ সম্মেলনে।
জবাবে কর্নেল শফিকুল বলেন, এই ঘটনার পর আমরা পরের দিনই একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। এরপরে যদি কেউ জামিন পেয়ে যায়, তাহলে সেনাবাহিনীর কিছু করার থাকে না।
এ ধরনের ঘটনায় সেনাবাহিনী ‘সব সময় সোচ্চার’ বলে মন্তব্য করেন এই সেনা কর্মকর্তা।
গতকাল ভোরে বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে সেনা অভিযানে পাহাড়ি সংগঠন কেএনএফ’এর দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনাটিকে ‘বড় সাফল্য’ হিসাবে দেখছে সেনাবাহিনী।
এ ঘটনা পাহাড়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে মন্তব্য করে কর্নেল শফিকুল বলেন, কেএনএফের ভয়ে যেসব বম পরিবার চলে গিয়েছিল, তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ১৩৮জন তাদের বসত ভিটায় ফিরে এসেছে।