সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও
কক্সবাজারের ঈদগাঁও বাজারে কোটি টাকার ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরজমিন জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ঈদগাঁও স্টেশন থেকে বঙ্কিম বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। যা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও পথচারীরা।
কচ্ছপ গতিতে চলা এ নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই শিডিউলের তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, সঠিক উপকরণ ব্যবহার না করা, যেনতেনভাবে রাতের আঁধারে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উইমার্ক ইন্টারন্যাশনাল।
অভিযোগে জানা গেছে, মাটি মিশ্রিত বালি, নিম্নমানের ইট-কংক্রিট ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সাথে শিডিউল অনুযায়ী রড ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে না। এছাড়া ড্রেনের উভয় পাশে দেয়াল ঢালাইয়ে মাটির দিকে টিন ব্যবহার না করেই ঢালাই শেষ করা হয়েছে। এই কারণে নির্মাণকাজের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এসব অনিয়মের কারণে বাজার এলাকার ইউপি সদস্য নুরুল হুদা কয়েক দফা কাজও বন্ধ করে দেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে শিডিউলে ড্রেনের সাথে টয়লেট লাইন সংযোগের কথা ছিল না। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত প্রকৌশলী এসএম আবির গোপনে ‘অবৈধ টাকার বিনিময়ে’ রাতের আঁধারে টয়লেটের অবৈধ সংযোগ দেন। এই নির্মাণ কাজের দৃশ্যমান অনিয়ম হচ্ছে প্রকল্পকাজের মাঝখানে এক ডজনেরও অধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা। বৃষ্টি হলে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের জন্য অভিশাপ বয়ে আনতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা।
ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদ ও জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের কাজ সিডিউল মত হচ্ছে না। নানা অনিয়মের পর বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে ঢালাই কাজ সম্পন্ন করে তড়িঘড়ি কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে প্রকৌশলী এসএম আবিরের সাথে কথা হলে তিনি বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে বিদ্যুৎ কতৃপক্ষ অসহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই ড্রেনেজের মাঝখানে খুঁটি রেখে ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঈদগাঁও জোনাল অফিস’র ডিজিএম রাজন পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুঁটি সরানোর আবেদন দেওয়ার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পরে কোন যোগাযোগ না করেই নির্মাণ কাজ চালিয়ে গেছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঈদগাঁও উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান উজ্জ্বল জানান, পাশের স্থাপনা মালিকদের অসহোযোগিতার কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই ঢালাই সম্পন্ন করতে হয়েছে। এছাড়া তিনি অন্য অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা জানান, খুঁটি সরানোর বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। যেহেতু প্রকল্পটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন, সেহেতু বিস্তারিত তারাই ভাল বলতে পারবেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইবনে মায়াজ প্রামাণিকের সরকারি মোবাইলে ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া মিলেনি।