কে হচ্ছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি?

1

এম এ হোসাইন

আলোচিত-সমালোচিত চট্টগ্রাম ওয়াসার সাবেক এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেওয়ার পর তিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি হয়েছিলেন। গত ৩০ অক্টোবর তাকে ওয়াসা থেকে সরানো হয়। এবার ওয়াসার এমডি পদ পেতে অর্ধ ডজনেরও বেশি আগ্রহী প্রার্থী রয়েছে, যাদের বেশিরভাগেরই যোগ্যতা সাবেক এমডির চেয়ে বেশি। কারণ তারা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর উপরের পদে কর্মরত আছেন বা অবসর নিয়েছেন।
ওয়াসার এমডি হতে চট্টগ্রাম ওয়াসার সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম হোসেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল করিম চৌধুরী, কাজী ইয়াকুব সিরাজদ্দৌলা ও জানে আলম ভ‚ঁইয়ার নাম আলোচনায় আছে। তাছাড়া সংস্থাটির বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক লাল হোসেনও এমডির দৌড়ে রয়েছেন। এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে নানাভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাই নন, ঠিকাদার ও ডেভেলপার কোম্পানির লোকজনও এই পদের তদবির করছেন। কয়েকজনের নাম প্রকাশ্যে আসলেও তদবিরে আরো বেশি লোকজন রয়েছেন এমনটা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওয়াসা এমডি হতে সরকারের উচ্চ মহল থেকে শুরু করে দলীয় নেতাদের কাছেও তদবিরে ব্যস্ত রয়েছেন কেউ কেউ।দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন অনেকে। কেউ আবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।
ইতোমধ্যে গোলাম হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়ার বরাবর আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০০৯ সালে আমার ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেছেন কিন্তু পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করা সত্তে¡ও আমি পদোন্নতি বঞ্চিত হই। বিগত সরকারের আমলে আমি কোনো পদোন্নতি পাইনি। আমার ব্যাচের কর্মকর্তারা সিনিয়র সচিব ও সচিব হিসেবে অবসরে গেলেও আমি ২০২০ সালের ২৯ জুন অবসর গ্রহণ করি।’
এমডি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে গোলাম হোসেনের গ্রহণযোগ্য বেশি রয়েছে। তিনি ওয়াসাতে উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে সাবেক প্রধান প্রকৌশলীদের মধ্যে মোহাম্মদ আবদুল করিম চৌধুরীর অবস্থানও অনেক ভাল বলে জানা গেছে। এছাড়া পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ইয়াকুব সিরাজদ্দৌলা চট্টগ্রাম ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। প্রকৌশলী জানে আলম ভ‚ঁইয়াও সংস্থাটিতে দুই দফায় প্রায় এক বছর প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও এমডি পদ পেতে চান। অন্যদিকে বর্তমান উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক লাল হোসেন এমডি হওয়ার জন্য তদবিরে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাবেক প্রধান প্রকৌশলীসহ বেশ কয়েকজন এমডি হওয়ার জন্য লবিং করছেন। রাজনৈতিকভাবেও কেউ কেউ চেষ্ঠা চালাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে কাউকে মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিতে চান না। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতে নিয়োগ হতে পারে।
বর্তমানে ওয়াসাতে এমডি হিসেবে নিয়োজিত আছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা। নিয়মিত তিনি ওয়াসাতে অফিসও করছেন। তবে একাধিক সংস্থার দায়িত্ব রয়েছে এই কর্মকর্তার উপর। যার কারণে স্থায়ী এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে সরকার।
উল্লেখ্য, চুক্তির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ১৫ বছর ধরে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সাবেক একেএম ফজলুল্লাহ। বিগত সরকারের আনুকূল্য পেয়ে তিনি বেশকিছু বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এসব প্রকল্পে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের আত্মীয়স্বজনকে ওয়াসায় নিয়োগ দিয়েছেন। ওয়াসার পানির দাম বছর বছর বৃদ্ধি, বিপরীতে সিস্টেম লসের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সরকারের পটপরিবর্তনের পর ফজলুল্লাহকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেন ভুক্তভোগীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ অক্টোবর তাকে অপসারণ করা হয়।