কেমন বাংলাদেশ চাই ?

1

অধ্যাপক আয়েশা পারভীন চৌধুরী

কেমন বাংলাদেশ চাই ?- এই প্রশ্নটি করার সাথে সাথে দেশের আপামর জনসাধারণের মুখে হতাশার চেহারা ভেসে উঠে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের পরবর্তী সময় পর্যন্ত থেকে এই পর্যন্ত অনেক সরকার গঠিত হয়েছে। প্রতিটি সরকার দেশের জনগণের কল্যাণে অনেক ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অনেক ধরনের সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষার আমূল পরিবর্তন এর জন্য অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্তে¡ও সঠিক ও কার্যকরী পদক্ষপের অভাবে আবারও ৫(পাঁচ) আগস্টের মতো একটা বিশাল সংস্কার আন্দোলন হয়েছে। প্রতিটি সরকারই দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বার বার আপামর জনসাধারণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। প্রতিটি সরকার চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে থাকে। উচ্চ শিক্ষা লাভের পরে শিক্ষার্থীরা একটি ভালো চাকরির জন্য নতুন করে নিজেকে তৈরি করতে থাকে। ধাপে ধাপে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে ও চাকুরির ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসে। আস্তে আস্তে বিভিন্ন প্রকার অফিস আদালতের প্রসারণ হতে থাকে। শিক্ষাব্যবস্থায় আমল পরিবর্তন হতে থাকে। যেখানে এক সময় একটি অঞ্চলে শুধু একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল সময়ের দাবিতে সেই সব অঞ্চলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। মূলত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের প্রধান শহরগুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বৃদ্ধি পায়। কালের বিবর্তনে বর্তমানে অনেক ছোটবড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যন্ত স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বেসরকারি এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভের পরে শিক্ষার্থীরা আবার ভালো চাকরি লাভের আশায় নতুন করে প্রস্তুতি নিতে থাকে। একটা সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টার ত্রুটি করে না। ক্যাডার ভিত্তিক চাকরির জন্য বিসিএস পরিক্ষা দেওয়ার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। একবার দুইবার তিনবার শুধু নয়। বেশ কয়েকবার অনেকেই বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে।
চাকরি জীবনের এক এক সময় এক এক খানে তারাদের পছন্দ অনুযায়ী চাকরি পরিবর্তন করে। একটা সুন্দর জীবন যাপন করতে জীবনের অনেক অংশ শিক্ষা লাভের জন্য ব্যয় করে। কিন্তু চাকুরির ক্ষেত্রে এসে তাদেরকে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। আর একটি প্রচলিত ধারণা আছে- জায়গা মত মামা চাচা না থাকলে ভালো চাকরি পাওয়া যায় না।তদবির করতে না পারলে ভালো চাকরি পাওয়া যায় না। ভালো পরিমাণে টাকা দিতে না পারলে মনের মতো চাকরি পাওয়া যায় না। এই ধরনের মন মানসিকতা থেকে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের অন্যায়ের সাথে জড়িয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ চাকরির ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে থাকে। অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে থাকলেও কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে সেই যোগ্যতা দক্ষতার প্রমাণ দিতে তারা ব্যর্থ হয়।
পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বর্তমানে একটি সাধারণ বিষয়ে যেন পরিণত হয়েছে। একসময় প্রশ্ন পত্র ফাঁসের বিষয়টি কেউ কখনো চিন্তায় করতে পারে নাই। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি একটা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আধুনিক যুগের প্রযুক্তির কবলে অনেক অঘটন ঘটছে। সব সময় জড়িত ব্যক্তিরা গোপনেই থেকে যায়। তাদের বিরুদ্ধে তেমন জোরালো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাই প্রতি বছরে এরকম ঘটনা ঘটতে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয় ; গত কয়েক বছরের বিসিএস পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে অনেকে চাকরি নিয়েছে। এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে একটা বিশাল অংকের লেনদেন থাকে। ছোটখাটো চাকরির বিষয়গুলো তেমন দৃষ্টি আকর্ষণ না করলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অনিয়মগুলো ধরা পড়েছে সেগুলো খুবই লজ্জাজনক এবং দুঃখজনক। সবচেয়ে বেশি আস্থার জায়গাটা দুদকেও অনেক ধরনের লেনদেন চলে। যত উপরের লেভেলে যেতে থাকে ততই দুর্নীতির মাত্রার আরো বেশি বাড়তে থাকে। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে অন্যায় ও অনিয়ম চলছে সেগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মত সাহস মানুষের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশে আসলেই তেমন নেই। যারা আছে তারা শুধুমাত্র ছাত্রসমাজ। বাস্তবতায় ভালো চাকরির জন্য এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক সময় অন্যায় অনিয়মের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। যারা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে তারা আবার সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হয়ে থাকে। লক্ষনীয় যে; বিশেষভাবে দলীয় নিয়োগ প্রাপ্ত লোকগুলোর পদোন্নতি ঘটে এবং দলের অবর্তমানে তাদেরকে আবার বিভিন্ন ভাবে অপদস্ত হতে হয়।
সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে উচ্চ পর্যায়ে পদমর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আবার কারো কম যোগ্যতা থাকলেও দলীয় সমর্থনে পদোন্নতি দেয়া হয়। এভাবে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে উচ্চ স্তরের পদগুলোর পরিবর্তন ঘটে। যে সরকার যতদিন ক্ষমতাসীন থাকবে সেই সরকার তার নিজস্ব ক্ষমতার দাপটে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে এতিমখানা পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের দখলে থাকে। যখন যে সরকার আসে তার দলীয় প্রার্থীদেরকে পদমর্যাদায় অভিষিক্ত করে। আর বিরোধী দলীয় পদস্থ ব্যক্তিরা বঞ্চিত হয়। বাংলাদেশে এভাবে অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রী সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাছাড়া এখানে একটা বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় যে; নিজেদের চাকরি ঠিক রাখার জন্য অনেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে একেবারে নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীকেও নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকারের প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যারা বিসিএস ক্যাডার। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা ও মেধার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছে। তাদের মধ্যে যাদের দলীয় সমর্থন আছে তারা অতি শীঘ্রই পদোন্নতি পেয়ে তাদের ইচ্ছা মত বিভিন্ন পদে অভিষিক্ত হয়। আর যারা অন্য দলের সমর্থক তাদেরকে কোন ধরনের পদোন্নতি না দিয়ে মাঝে মাঝে আবার তাদেরকে ওএসডি করে রাখা হয়। এ ধরনের মন মানসিকতা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। দলীয় স্বার্থে মেধাবীদের এভাবে ব্যবহার করার ফলে মেধাবীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয় জনগণ।
বাংলাদেশের ইতিহাস পরিচালনা করলে দেখা যায় ; যেদল সরকার গঠন করে সেই দলের সমর্থকরা যথাযথ যোগ্যতা ছাড়া অনেক বেশি পদন্নোতি পেয়ে থাকে। নিজেদের পাকাপোক্ত করে রাখার জন্য সর্বস্তরে তাদের নিজের দলীয় লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্যদেরকে সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মন জুগিয়ে চলতে হয়। যারা দলীয় সরকা রের প্রচারণে ব্যস্ত থাকতে পারে তারা অফিস আদালত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খুব ভালো অবস্থায় থাকে। এর ফলে মানুষের মধ্যে দলগুলোর প্রতি আস্থা দিন দিন কমতে থাকে। এমনকি ছাত্রদেরকেও তারা ব্যবহার করে। একসময় দেশ গড়ার ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজরা নিজেরাই এগিয়ে আসতো। তখন টাকার প্রতি কোন মোহ ছিল না। তখন দেশপ্রেমই ছিল প্রধান। আর এখন টাকা বানানো হচ্ছে রাজনীতি করার প্রধান হাতিয়ার। যেদিন থেকে এদেশের টাকা বানানোর হাতিয়ার হিসেবে রাজনীতিকে বর্জন করা হবে সেদিন থেকে এদেশের মানুষ একটু সুখে শান্তিতে থাকবে। যে যার মতামত প্রকাশ করতে পারবে। দল মত নির্বিশেষে সবাই একতাবদ্ধ থাকবে। ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়স্থলে থেকে দলীয় ব্যক্তিরা বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। আমাদের ইতিহাসে দেখা যায় ; যেই সরকার আসবে সেই সরকার তার নিজস্ব প্রয়োজনেতা সবকিছু ঢেলে সাজায়। অথচ সাধারণ মানুষের কোন ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। যারা খেটে খাওয়া মানুষ তাদের জীবন যাত্রা তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। দিন দিন বাজারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারণে-অকারণে গ্যাসের বিদ্যুৎ ও প্রতিটি জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। একবার বৃদ্ধি পেলে আর দ্রব্য মূল্য কমার কোনো লক্ষণ থাকে না। অর্থাৎ নিম্ন আয়ের মানুষ যে যেখানে আছে সেখানেই থেকে যায়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো দেশের অবস্থা খুব ভালো করে বুঝতে পারে। বিশেষ করে মোবাইলের মাধ্যমে কখন কি ঘটছে ; কোন সরকার কিভাবে দেশ চালাচ্ছে; কোন ব্যবসায়ী কিভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে ইত্যাদি বিষয়গুলো মানুষ এখন বুঝতে পারে। এক সময় মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে সবকিছু করা যেত। কিন্তু বর্তমানে তা আর সম্ভব নয়। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তের খবর মানুষ জানতে পারে। তাই সরকার পরিবর্তন হোক আর না হোক মানুষ তাদের জীবন যাত্রার ব্যাপারে খুবই সচেতন। কলেজে আসা-যাওয়ার পথে টেক্সি ওয়ালার সাথে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলি। আমি আশ্চর্য হয়ে যায়; দেশের প্রতিটি ব্যাপার নিয়ে তারা খুব সচেতন। কখন কোথায় কে কি করছে ; কোথায় কি ঘটেছে; এমনকি কোথায় কি ঘটতে পারে অনায়াসে ঠিক বলে দিচ্ছে। সকালে খবর সকালেই তারা জানতে পারছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে খেটে খাওয়া মানুষগুলো আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। গৃহকর্মী পর্যন্ত সকালে ও বিকেলে কি হচ্ছে আর কি হতে পারে সবকিছুই জানতে পারে। সরাসরি নিজের মতামতে প্রকাশ করছে। ড্রাইভার ও দারোয়ান খুব সুন্দর করে দেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করছে। সবজিওয়ালা ও ফুলবিক্রেতা সঠিক পরিস্থিতিগুলো বিচার বিশ্লেষণ করেছে। তাই রাজনীতিবিদদের একটা জিনিস মাথায় রাখা উচিত ; এখন আর সেই সময় নেই। কোন কিছু গোপন করে ও খেয়াল খুশি মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না।
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার অনেক ধরনের সংস্কার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এধরনের সংস্কারগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রশ্নাতীত হওয়া উচিত। কেননা এখন সবকিছু এক মুহূর্তেই সবাই জানতে পারে। খেটে খাওয়া মানুষগুলো তাদের সিদ্ধান্ত ও মতামত প্রকাশ করে। হয়তো তাদের সিদ্ধান্ত ও মতবাদগুলো সবার কাছে পৌঁছে না।তারা নির্দ্বিধায় সত্যটা প্রকাশ করে। রাজনৈতিক ও দলীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে যারা দেশের স্বার্থকে ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিবে তারাই আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে। বর্তমান বাংলাদেশের সকল ধরনের রাজনীতিতে মানুষের বিশ্বাস ও বিশ্বাসের মধ্যে বিশাল একটি তফাৎ আছে। সবার মাঝে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব থাকে। কোন ধরনের অন্যায় ও অপরাধমূলক সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং জনগণের সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ জীবন সংগ্রামে তারা অনেক বেশি কষ্ট করে। তারা দেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে যাচাই-বাছাই করা উচিত। শুধু নিজেদের প্রয়োজনে ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় তাতে একসময় সাধারণ মানুষের ভিতরে ক্ষোভের সঞ্চার করে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আপামর জনসাধারণের একটাই ইচ্ছা ; জীবনযাত্রার মান সুন্দর হোক। ভোটারদের সহযোগিতা পাওয়ার জন্য দলীয় রাজনীতিবিদদের আরো বেশি ইতিবাচক মন মানসিকতায় এগিয়ে আসতে হবে। কোন সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে আস্তে আস্তে স্বৈরাচারী হতে থাকে। কোন ধরনের জবাবদিহীতা থাকে না। তারা পরাজয় মেনে নিতে চায় না। যথেচ্ছা ব্যবহার করতে থাকে। তাই প্রতি দুই বছর পর পর সরকার পরিবর্তন করা দরকার। কেউ যেন দুবারের বেশি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না পারে। নতুনদের এগিয়ে আসার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বছর ঘুরে আমরা আরো একটি নতুন বছরে পদার্পণ করলাম। প্রতি বছরের মতো এ বছরও আবার পহেলা জানুয়ারি শুরু হবে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও মানুষ অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। তবে এবারের প্রত্যাশাটা অন্যরকম। সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার। একটা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন হোক। যে দলই সরকার গঠন করুক সকলের মেনে নেওয়ার মনমানসিকতা থাকা উচিৎ। ভোটের অধিকার ও নির্বাচনের প্রতি মানুষের রাস্তা অনেক দিন আগেই চলে গেছে। তাই মানুষ আর এখন নির্বাচনের ও ভোটাধিকারের প্রতি কোন ধরনের আগ্রহ প্রকাশ করতে চায় না। তাছাড়া জনগণের একটা আতঙ্ক থাকে ভোটকেন্দ্রে গেলে হয়তো যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এবং নির্বাচন পরবর্তী ফলাফলের উপর অনেকেরই জীবন আশঙ্কা জনক হয়ে যায়। তাই মানুষের এই মানসিকতার পরিবর্তন এর জন্য এগিয়ে আসতে হবে রাজনৈতিক দলকে। তাদেরকে আগে নিজেকে সংস্কার করতে হবে।
সরকারের যেকোনো সংস্কারের আগে ব্যক্তিগত মন মানসিকতার সংস্কার প্রয়োজন। মানুষ যখন বিবেক বুদ্ধি দিয়ে সবার উন্নতি ও মঙ্গল চিন্তা করতে পারবে তখন সত্যিকার অর্থে সংস্কার কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে। ব্যক্তিগত সংস্কারের পাশাপাশি দলীয় সংস্কার প্রয়োজন। জনসাধারণের চাহিদা তেমন বেশি কিছু না। নিশ্চিন্তে ঘুম যাওয়া। একটা নিরাপদ আশ্রয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার জোগাড় করা। আপামর জনসাধারণ জীবনকে উপভোগ করার জন্য রাত দিন কষ্ট করছে না বরং জীবনকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সংস্কার কার্যক্রম হোক জনগণের কল্যাণে। নির্বাচন ও ভোটাধিকারের প্রতি জনগণের আস্থা আবার ফিরে আসুক। রাজনীতিতে মানুষের বিশ্বাস ও বিশ্বাসের দ্ব›দ্বটি যেন আর না থাকুক। সংস্কারের মাধ্যমে সকাল প্রকার দূষণমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশায় সকলেই অপেক্ষা করছে। ইনশাআল্লাহ এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ডা. ফজলুল-হাজেরা ডিগ্রী কলেজ, হালিশহর, চট্টগ্রাম