কেমন চলছে দেশ!

3

আ,জ,ম,সামশুল হক

রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে পাস কাটিয়ে সংবিধানসম্মত নয়, এমন একটি সরকার জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কার্যত : এই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেননা। এই সরকারের ভিত্তি যেমন দুর্বল, কার্যক্ষমতা ও সীমিত। ইচ্ছা করলেও গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারের মত কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার সাংবিধানিক পদ। সাংসদ ও মন্ত্রিপরিষদ হচ্ছে সাংবিধানিক ভিত্তি। সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রীয় চাবিকাঠি এবং সংসদ হচ্ছে গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের মত প্রকাশের ও প্রতিফলনের ক্ষেত্র। রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক যেকোন কাজে সাংসদদের মতামত ও পরামর্শ অপরিহার্য। এতদসত্তে¡ও দেশকে বাঁচাতে হবে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে। খাদ্যের জন্য প্রয়োজন আলু। আলু কম সিদ্ধ হলেও জনগণকে একটু সাবধানতার সাথে চিবিয়ে খেতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী দেশ সংস্কারের আন্দোলন করে বিগত ৮সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার হবে, তার শ্রেণী বিন্যাস করা হয়নি। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নয়, এই সরকার সব ক্ষেত্রে সংস্কারের পক্ষে সরব এবং তা লক্ষ্যণীয়। কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে কোটা সংস্কার হয়েছে চূড়ান্তভাবে সুপ্রিমকোর্ট এর মাধ্যমে এবং অন্তর্বর্তী কালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পূর্বে। কাজে কাজেই ছাত্র সমন্বয়কদের কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। এইবার রাজনৈতিক দলগুলোর পালা। বর্তমানে রাষ্টীয় সংস্কারের কাজ চলছে এবং সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য বহু রাজনৈতিক দল দেশে বিদ্যমান। এই সরকারকে গঠনমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক সংস্কারের কাজে সহযোগিতা করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের ওপর বর্তায়। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোন সময় সীমা বেধে না দিলেও যত দ্রæত সম্ভব তাঁরা নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। ইতোমধ্যে সেনা প্রধানের পক্ষ থেকে এই সরকারকে নির্বাচনের জন্য ১৮মাস সময় নির্ধারিত করা হয়েছে। তবে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এই সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাই আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সেই মর্মে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্বস্ত করেছেন।
অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি মূলতঃ একজন অর্থনীতি বিদ।তবে আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য। ইতোমধ্যে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক ছয়টি বিভাগে ৬ জন সংস্কারক নিয়োগ দিয়েছেন। আগামি নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং প্রত্যেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে নির্বাচন সংস্কারক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন জনাব বদিউল আলম মজুমদার। আমাদের জানা মতে, তিনি অতীতে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। নিয়োগ পরবর্তীদিন তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, “ আওয়ামীলীগ ছাড়া নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবেনা ”। তাঁর বক্তব্য মতে, সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার পক্ষে তিনি মত প্রকাশ করতে পারেননি। মন্দের ভাল, নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকবে জনগণ।
আগেও বলেছি, এই সরকারের ২-৩ জন ছাড়া সবাই জ্ঞানী-গুণীজন এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। জনগণের প্রত্যাশাপূরণে তাঁদের কর্মদক্ষতা অবশ্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে আমাদের বিশ্বাস। দুর্নীতি রোধে সক্ষম হবেন, অর্থনীতি সচল হবে, জনগণের নিরাপত্তা বিধান হবে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আসবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে এবং সর্বোপরি জনকল্যাণমূলক কাজে গতিশীলতা পাবে। প্রসংগত উল্লেখ থাকে, স¤প্রতি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট মি: বিল ক্লিনটনের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজনকে ছাত্র আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর নাম জনাব মাহফুজুল আলম। মূলতঃ তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি। কিছুদিন আগে তাঁর বক্তব্য শোনার সুযোগ হয়েছে। তবে আমার বোধগম্য হয়নি। তিনি অনেক উচ্চমানের তাত্তি¡ক বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে ৩ বার বলেছেন,তিনি অগোছালো বক্তব্য প্রদান করেছেন। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় বলে, সদ্য ডক্টরেট পাস করা একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর করা যায়না।
বিগত আন্দোলনে ছাত্রদের ত্যাগী মনোভাব ও কৌশলী ভূমিকা প্রশংসনীয়। আন্দোলনে ছাত্র মৃত্যুর খবরে জনতা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। আন্দোলন বেগবান হয়েছে, জনতার সম্পৃক্ততার কারণে। আকস্মিক আন্দোলনের মুখে নির্বাচিত সরকার চলে যেতে বাধ্য হয়। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বাহবার কারণে সমন্বয়কেরা আজ অনেক বেপোরোয়া। সমন্বয়কেরা আমিত্ব প্রকাশে অনেক উচ্ছ¡সিত। তাদের কর্মক্ষেত্রের কোন সীমা-পরিসীমা নেই বলা যায়। রাজনৈতিক দলের মত তারা অঞ্চলভিত্তিক সভা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা রাজনৈতিক দলের সাথে সাংঘর্ষিক। স¤প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারি প্রক্টরকে জনসমক্ষে শারীরিক ভাবে লাঞ্জিত করেছে। শিক্ষকদের অব্যাহতি ও পদত্যাগের ব্যাপারে অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্ররা শিক্ষকদের অপমান ও লাঞ্জিত করে বের করে দিয়ছে। ছাত্র প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসার সাহস পেয়েছে। ঢাকা এবং জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২জন লোক মারা যাওয়ার ঘটনা কি ইংগিত বহন করে। প্রতিনিয়ত ছাত্ররা মিটিং-মিছিল করে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। টিএসসিতে সংগ্রহ করা টাকা বন্যার্তদের মাঝে পৌঁছায়নি। শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর হলেও আজকের প্রেক্ষাপটে তাঁরা খুবই উৎকন্ঠার মধ্যে জীবনযাপন করছেন।
দেশ সংস্কারের নামে নিজেদের ভিতর সংস্কার করা, আত্মশুদ্ধির পরিচয় দেওয়া এবং ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের ওপর প্রভাবিত না হওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করি। দেশ এগুচ্ছে অজানার পথে। জনগণের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে আল্লাহ পাস সবাইকে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দান করুন।

লেখক : প্রাবন্ধিক